ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাঙ্গনে অসন্তোষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শিক্ষাঙ্গনে অসন্তোষ

আশি ও নব্বই দশকে শিক্ষাঙ্গন প্রায়শই অশান্ত হয়ে উঠত। এর নেপথ্যে ছিল প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রাধান্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য শিক্ষা সরঞ্জামের অভয়ারণ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি তেমন শোনা যায় না। তবে সাম্প্রতিককালে অশান্ত হয়ে উঠছে শিক্ষাঙ্গন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার মধ্যেই অসন্তোষ কাজ করছে। চলছে নানামুখী আন্দোলন। এসব কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে শিক্ষার্থীদের। তাদের বিদ্যার্জন ব্যাহত হবে। নতুন অনুমোদিত জাতীয় বেতনকাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদাহানি ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছেÑ এমন দাবিতে পরদিন থেকে আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। কর্মসূচীকে ‘যুক্তিহীন’ দাবি করে ওই দিনই শিক্ষকদের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষকরা। অর্থমন্ত্রী অবশ্য শেষ পর্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করেছেন তার মন্তব্যের জন্য। তবে এতে শিক্ষকদের উষ্মা কতটুকু প্রশমিত হবে সেটা দেখার বিষয়। দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবি তুলেছেন। শিক্ষকদের এ কর্মসূচীতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষকদের এই ধর্মঘট যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে সেশনজটে পড়বে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দীর্ঘ আন্দোলনের আভাসও দিয়েছেন। আমরা মনে করি, শিক্ষকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের আলোচনায় বসাটাই সমীচীন হবে। যে কোন সমস্যার সমাধান অসহিষ্ণু-অগ্রহণযোগ্য উপায়ে সম্ভব নয়। বরং আলোচনার টেবিলে বসে নিজ নিজ বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে একটা ইতিবাচক সমাধানে আসা বিচক্ষণতার পরিচয়। শিক্ষকদের সঙ্গে অন্যান্য পেশাজীবীর মূল পার্থক্য হচ্ছে শিক্ষকরা জাতির ভবিষ্যত নাগরিকদের তৈরি করেন। তাদের দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা, সহিষ্ণুতা ও শিষ্টাচার সকলের অনুসরণীয় হওয়ার মতো। আমরা শিক্ষকদের বিবেচনাবোধের ওপর ভরসা রাখতে পারি যখন শুনি যে, বেতনকাঠামো পুনর্নির্ধারণের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রবিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করলেও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ওই দিন তারা পরীক্ষা নেবেন। আমরা শিক্ষকদের এই মনোভাবকে সম্মান জানাই। নতুন বেতনকাঠামোয় শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার পদক্ষেপ নিয়ে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে যথাযথ উদ্যোগ নেবে সরকার, এটাই প্রত্যাশা। অপরদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সপ্তাহের শেষ দুদিন ক্লাসরুম ছেড়ে রাজপথে নেমে আসে। তাদের বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সক্রিয়তা প্রদর্শন করে। ফলে তা সংঘর্ষের রূপ নেয় এবং রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নজিরবিহীন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বর্তমানে যে টিউশন ফি দেন তার মধ্যেই ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত আছে। তাই শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়ার কোন সুযোগ নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, নতুন করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়ের উদ্দেশ্যে ভ্যাট আরোপ করা হয়নি। ভ্যাট বাবদ অর্থ পরিশোধ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, কোনক্রমেই শিক্ষার্থীদের নয়। ব্যাখ্যাটি থেকে শিক্ষার্থীরা আশ্বস্ত বোধ নাও হতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ভ্যাটের অর্থ পরিশোধ করবে, নাকি শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়িয়ে সেখান থেকে অর্থ সমন্বয় করা হবেÑ এটা বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা যেমন জরুরী তেমনি সরকারের তরফ থেকে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্তের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপও দরকার। আমাদের প্রত্যাশা শিক্ষাঙ্গনে মেঘ কেটে যাক, বিদ্যার আলোয় চারদিক ঝলমল করে উঠুক।
×