ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাম্মী তুলতুল

পিঁপড়ে রাজার অনুমতি

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পিঁপড়ে রাজার অনুমতি

বনের বড় বটগাছের নিচে হঠাৎ অনেক পিঁপড়ে জমা হতে লাগল। পিঁপড়েসমাজের দলপতি অন্য পিঁপড়েরদের উদ্দেশ্যে বললেন, হাতি যখন তার লম্বা শুঁড় নাকের ডগায় উঁচু করে হুঙ্কার দেয়, সব পোকামাকড় গর্তে লুকায়। পায়ের তলায় যত কিছুই থাকে না কেন সে তার মোটা মোটা পা দিয়ে সবাইকে চাপ দিয়ে মারে। আচ্ছা একটু ভাব তো কে তার এই অবিচার মানতে চাইবে? তাই তো আমরা পিঁপড়েসমাজ হাতির উপর রেগে আছি। হাতি তার মস্ত বড় শরীরটার ভারে কাউকে চোখে দেখে না। যেন একটা উঁচু পাহাড়। অহঙ্কারের শেষ নেই এই হাতিদের। ওদের কারণে বেশি ক্ষতি হচ্ছে আমাদের পিঁপড়েদের। পিঁপড়েসমাজের দলপতি বললেন,চল এবার রাজার কাছে যাই। এর একটা বিহিত করতে হবে। দলপতির কথামতো পিঁপড়েরা সবাই দলবল নিয়ে হাজির তাদের রাজা মশাইয়ের কাছে। কই গো রাজা মশাই বাড়িতে আছেন নাকি? রাজার চৌকিদার বের হয়ে বললেন, কি হলো কেন ডাকছ শুনি? পিঁপড়ের দলপতি বললেন, আমাদের মহাবিপদ চৌকিবাবু, তাই রাজার কাছে সমাধান চাইতে এলাম। কিন্তু রাজা মশাইয়ের তো অসুখ বেজায়। তোমরা না হয় কাল এসো। রাজা তখন কান পেতে ও ঘর থেকে সব শুনছিল। গলাখাকারি দিয়ে বলল, দাঁড়াও চৌকিবাবু ওদের বলতে দাও। ওরা আমার কাছে না এলে বিপদে কার কাছে যাবে। বল কি হয়েছে তোমাদের? জি আসলে আপনাকে বিরক্ত করার ইচ্ছে আমাদের মোটেও ছিল না। নিরুপায় হয়ে এসেছি। অবশ্যই আসবে। আমি যদি তোমাদের সমস্যা সমাধান না করি কে করবে বাপু। বল তোমাদের কথা। নির্ভয়ে বল। তখন পিঁপড়েদের একজন বিস্তারিত রাজাকে খুলে বললেন। সব শুনে পিঁপড়ে রাজা হাঁটাহাঁটি করলেন কিছুক্ষণ। উপায় না পেয়ে বললেন, তোমরা একটু বস, আমি রানীর সঙ্গে একটু শলাপরামর্শ করে আসি। অনেক সময় বিপদে মেয়ে মানুষের বুদ্ধিও কাজে লাগে। এমন সময় একজন পিঁপড়ে বলল, মহারাজ যা করার তাড়াতাড়ি করেন। আমাদের হাতে সময় খুব কম। বদের হাড্ডি হাতি আমাদের বড্ড ক্ষতি করছে। যত দেরি হবে ততই ওদের সাহস বাড়বে। এতে আমাদের অন্য সাথীরাও মারা পড়বে। যখন যেখানে খুশি সে তার পা চালায়। এই অত্যাচার চলবে না। তখন সব পিঁপড়েরা এক সঙ্গে বলে উঠল, হ্যাঁ হ্যাঁ হাতির অত্যাচার চলবে না, চলবে না। রাজা তখন একটু সময় চাইল তাদের কাছে। পিঁপড়ের দলপতি রাজাকে বললেন, ঠিক আছে আপনি একটা দিন ভাবেন। এর মধ্যে আমরা নিরাপদে থাকার চেষ্টা করব। রাজা কথা তো দিল কিন্তু কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। ব্যবস্থা তো একটা করতেই হবে। নইলে রাজ্যে অশান্তি বিরাজ করবে। কি করি? অসুস্থ রাজা ভাবতে ভাবতে রাত পাড় করল। পরদিন হাতির রাজাকে ডাকতে পাঠালেন পিঁপড়ে রাজা। হাতির রাজা রেগে চৌকিদারকে তাড়িয়ে দিলেন। কত বড় সাহস এই টুকুন একটা পিঁপড়ে আমাকে ডাকে। এতবড় পশু আমি একটুও ভয় পেল না? বুঝেছি। ওদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে। ওদের যোগ্যতা ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে। পথে-ঘাটে এসব পিঁপড়ে-টিপরের আর রক্ষা নেই। এদিকে চৌকিদার পিঁপড়ে রাজাকে হাতির খেপে যাওয়ার কথা বললেন। এতে রাজা মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। হাতির রাজার রেগে যাওয়ার কথা শুনে সব পিঁপড়েরা তাদের রাজার কাছে হাজির হলেন। পিঁপড়ে দলপতি বলল, রাজা সাহেব কি শুনছি এসব। আপনাকে হাতির রাজা অপমান করেছে? রাজা বললেন, ও কিছু না। তোমরা সবাই শান্ত হও। মাথা গরম করে কোন লাভ নেই। ওরা অপমান করেছে এতে আমার দুঃখ নেই। একদিন ঠিকই ভুল বুঝতে পারবে। এদিকে হাতিদের দলপতি এসে পিঁপড়ে রাজার চৌকিদারকে ধমক দিতে লাগল। কই তোদের রাজা? দেখ তোদের রাজাকে যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে পুরো জাতিকে বিতাড়িত করব। সবাইকে বলে দিস। পিঁপড়ের দলপতি এ কথা শুনে মাথা চাপড়াল। আমরা ছোট বলে কি কিছু না। নাহ আমরাও কম না। আমাদের দল অনেক ভারি। আমরাও বুঝিয়ে দেব আমরা কি করতে পারি। আপনার এই অপমান আমরা সহ্য করব না জাহাপনা। দয়া করে আমাদের অনুমতি দেন। রাজা তখন বসা থেকে উঠে বলল, কথায় আছে নাÑ সবুরে মেওয়া ফলে। সবুর দিয়ে আর একটু দেখি। ঠিক এমন সময় পিঁপড়ের দলপতির ভাই হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, রাজা মশাইÑ হাতিরা আমাদের চলাফেরার রাস্তা সব পা দিয়ে লেপটে দিচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েদেরও রেহাই দিচ্ছে না। আমি বহু কষ্টে প্রাণ নিয়ে ফিরেছি জাঁহাপনা। দলপতি বলল, আর চুপ থাকবেন না। আমাদের অনুমতি দিন। লাইসেন্স দিয়ে দিন। যেন তাদের চোখের ভেতর কানের ভেতর কামড় দিয়ে উচিত শিক্ষা দিতে পারি। শেষমেশ রাজা আর সইতে না পেরে হাতের মুটি খুলে বললেন, যাও তোমাদের লাইসেন্স দিয়ে দিলাম অত্যাচারীদের দমন কর। অনুমতি পেয়ে খুশিতে পিঁপড়েরা দল বেঁধে ছোটা শুরু করল। পিঁপড়েরা সবাই হাতির আস্তানায় রেগে মেগে গিয়ে হাজির। হাতিরা তাদের শুঁড় নাড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে হাঁটছিল। এমন সময় পিঁপড়ে সব দল বেঁধে হাতির মস্ত বড় পায়ে কামড়, হাতির ইয়া বড় বড় কানের ভেতর কামড় দিয়ে লাল করে দিল। আচমকা হামলা দেখে হাতিরা সব ভয় পেয়ে যে যেদিকে পারে দৌড়াতে লাগল। তাই মনে রাখা দরকার, ছোটদের কখনও অবহেলা করা উচিত নয়।
×