ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এরশাদ শিকদারকেও হার মানায় যে কাহিনী...

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এরশাদ শিকদারকেও হার মানায় যে কাহিনী...

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার, ১২ সেপ্টেম্বর ॥ ওদের কাহিনী এরশাদ শিকদারের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। ওরা দুই ছাত্রকে অপহরণের পর ওই রাতেই একটি ট্রলারে উঠিয়ে প্রথমে হাত-পা বাঁধে পরে শরীরের সঙ্গে ভারি বস্তু বেঁধে জীবন্ত ডুবিয়ে দেয় নদীতে। তার আগে মুক্তিপণ আদায় করতে অপহরণকারীরা ওদের অভিভাবকদের শোনানোর জন্য কান্নাকাটিসহ কথা রেকর্ড করে রাখে। পানিতে ফেলে দিয়ে হত্যার পর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেই রেকর্ড শুনিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা চালায়। অবশেষে এ ধরনের আরও অঘটন ঘটানোর আগে পুলিশ ওই চক্রের ছয় সদস্যকেই গ্রেফতার করে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরা হলো মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার শিমুলিয়া গ্রামের মৃত ইব্রাহীম মোল্লার ছেলে বাদশা (৩২), মৃত পরাণ আলীর ছেলে শুকুর আলী (৪৫), দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার শঙ্কর গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে আনোয়ার (৩২), নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের কালিয়াচর গ্রামের মৃত নুরু মিয়ার ছেলে আক্তার ওরফে জামাল (৩৬), মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের ভাটিয়াচর গ্রামের মৃত আনসার আলীর ছেলে লাল মিয়া (৩৫) ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কুসলা গ্রামের শহিদুল হক চৌধুরীর ছেলে আজগর (৩০)। জানা গেছে, ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে মানিকগঞ্জ পৌর মার্কেট এলাকা থেকে খানবাহাদুর কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মনির হোসেনকে (২২) অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলে। অপহরণকারীরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে মনিরকে হত্যার হুমকি দেয়। পরদিন এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ২৫ আগস্ট বিকেলে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মোঃ মুন্না (১৯) অপহৃত হয়। সে নাটোরের গুরুদাসপুরের চন্দপুর অবদা গ্রামের মান্নান আলীর ছেলে। সে পরিবারে সঙ্গে সাভার পৌর এলাকার আড়াপাড়া মহল্লার সামসুল হকের বাসায় বসবাস করে। অপহৃতের মা জাহানারা বেগম জানান, মঙ্গলবার বিকেলে তার ছেলেকে এক দোকানে আর্ট করার কথা বলে বাসা থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নামাবাজার এলাকার সাভার লাইব্রেরির সামনে ডেকে নেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। শুক্রবার বিকেলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। একই সঙ্গে টাকা দিতে দেরি হলে কিংবা বিষয়টি পুলিশকে জানালে মুন্নাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় অপহরণকারীরা। মুন্নার বড় ভাই মঞ্জু জানান, বিকাশের মাধ্যমে ১১ হাজার টাকা ইতিমধ্যে দেয়াও হয়েছে। তারপরেও তার ছোট ভাইয়ের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে জানতে পারেন যে, তার ভাইকে যারা অপহরণ করেছে, তাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। থানায় এসে পুলিশের কাছে জানতে পারেন, তার ভাইকে যেদিন অপহরণ করা হয়, ওইদিন রাতেই নাকি হত্যা করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা এ কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। তারপরেও ভাইয়ের মৃতদেহ না দেখা পর্যন্ত তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না। ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজিম জানান, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পারেন যে, সাভার ও মানিকগঞ্জ থেকে অপহৃত দুই কলেজ ছাত্রকে অপহরণের দিন রাতেই সিঙ্গাইর ব্রিজের অদূরে সাভার বংশী নদীতে প্রথমে হাত-পা ও পরে শরীরের সঙ্গে ভারি বস্তু বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তারা অপহৃত ব্যক্তির কাছ থেকে পরিবারের কাছে টাকা চাওয়ার জন্য কথা রেকর্ড করে রাখে। পরে অপহরণকারীরা অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনে ওই রেকর্ড শুনিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায়ের চেষ্টা চালায়। কোন প্রমাণ না রাখার জন্য এবং একই সঙ্গে অপহৃতকে সঙ্গে নিয়ে ঘোরার ঝামেলা এড়াতে তাদের হত্যা করা হয়। মানিকগঞ্জ সদর থানার এসআই আবুল হাসেম জানান, শুক্রবার রাতে সাভার পৌর এলাকার আড়াপাড়া মহল্লা থেকে আক্তার, বাদশা ও আজগর, সাভার সিটি সেন্টারের সামনে থেকে আনোয়ার, বংশী নদীতে ট্রলার থেকে লাল চাঁন ও হেমায়েতপুর রাজফুলবাড়ীয়া এলাকা থেকে শুকুর আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত সবাই দুই কলেজ ছাত্রকে অপহরণ করে হত্যার সঙ্গে জড়িত। হাত-পা বাঁধার কালো রংয়ের নাইলনের দড়িসহ হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ট্রলারটি আটক করা হয়। নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
×