ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

এগারো গুণী নারী পেলেন অনন্যা শীর্ষ পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এগারো গুণী নারী পেলেন অনন্যা শীর্ষ পুরস্কার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাঁরা সবাই নারী। অজস্র প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেদের। বিপরীত স্রোতের মুখে দাঁড়িয়ে অন্ধকার ভেদ করে আলোকিত করেছেন সমাজ ও রাষ্ট্রকে। প্রত্যেকেই স্ব-স্ব অবস্থানে রেখে চলেছেন অনন্য ভূমিকা। আর এমন ১১ গুণী নারীকে প্রদান করা হলো ২০১৪ সালের অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার। শনিবার দুপুরে পাক্ষিক অনন্যা আয়োজিত সম্মাননা প্রদান পর্বটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর ফার্মগেটের খামার বাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে। অনন্যা শীর্ষদর্শ পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কীর্তিমান নারীরা হলেনÑ ভাষাসৈনিক অধ্যাপক লায়লা নূর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, দেশের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ফারাজানা ইসলাম, বুয়েটের প্রথম নারী ও দেশের দ্বিতীয় নারী ভিসি অধ্যাপক খালেদা একরাম, চিকিৎসক ডাঃ তাহমিনা বানু, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সমাজসেবক রোকসানা সুলতানা, ভিজ্যুয়াল আর্টে চিত্রশিল্পী শিল্পী নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা, বাংলাদেশ প্রমিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন ও দেশের প্রথম নারী সামরিক পাইলট নাইমা হক ও ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফি। এছাড়া অনন্যার ২৭ বছরের পথচলায় বিশেষ অবদান রাখার জন্যে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন সাংবাদিক ও নারী অধিকারকর্মী দিল মনোয়ারা মনু। সুরের মূর্ছনায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। সঙ্গীত দল প্রাণের দল পরিবেশন করে জাতীয় সঙ্গীত এবং ও আমার দেশের মাটি শীর্ষক দুটি গান। এরপর নজরুলের সাম্যের গানের অবহে নৃত্য পরিবেশন করে সাধনা শিল্পী গোষ্ঠী। পুরস্কার প্রদান পর্বে পুরস্কারজয়ী নারীদের হাতে উত্তরীয়-ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিগত শীর্ষদশজয়ী সাংবাদিক ফারজানা রূপা। মূল পর্ব পরিচালনা করেন অনন্যা-সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। পুরস্কারপ্রাপ্তির পর অনুভূতি প্রকাশ করেন এবারের শীর্ষ দশের এগার অনন্যা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেশের প্রথম নারী ভিসি অধ্যাপক ফারাজানা ইসলাম বলেন, ইচ্ছে ছিল শিক্ষাবিদ ও গবেষক হওয়ার। উপাচার্য হব, এমনটি ভাবিনি। নির্বাচনের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আমাকে বসানো হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই। অনন্যার মতো পুরস্কার পেয়ে আমি রীতিমতো আপ্লুত। এ পুরস্কারপ্রাপ্তির আমার দায়িত্ব আরও বহু গুণ বেড়ে গেল। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, জন্ম থেকে একজন নারীকে নানাবিধ বাধার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এক্ষেত্রে একটু সহযোগিতা পেলেই একজন নারীর পক্ষে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। দেশের আনাচে-কানাচে যেসব প্রতিভাবান নারীরা কাজ করে যাচ্ছে তাঁদের জন্য কাজ করছে অনন্যা। তাঁদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা দিচ্ছে। সেই ধারাবাহিতায় আমিও পুরস্কারটি পেলাম। এটা সত্যিই আনন্দের এবং ভাল লাগার। চিকিৎসক ডাঃ তাহমিনা বানু বলেন, শিশুরা আমাদের ভবিষ্যত। আর আমি তাদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কারপ্রাপ্তি সত্যি আনন্দের। তিনি পুরস্কারটি দেশের সকল শিশুদের প্রতি উৎসর্গ করেন। আইন ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ না দেখলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করছি। আমি মনে করি আমি বর্তমানে যে কাজ করছি সেটাও আমার জন্য অভিজ্ঞতায় একাত্তর। আর এই কাজের জন্য সাধারণ মানুষের সহযোগিতা ও ভালবাসা দরকার। এ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার পাওয়ায় আমার উৎসাহ আরও বেড়ে গেল। বাংলাদেশ প্রমিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন অনুভূতি প্রকাশ করে কেঁদে ফেলেন। কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, যখনই কোন স্বীকৃতি পাই নিজের কোন অর্জন হয় তখন বাবাকে ভীষণ মনে পড়ে। আজ বাবা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। অনূভতি প্রকাশে দেশের প্রথম নারী সামরিক পাইলট নাইমা হক ও ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই- লুৎফি দেশের জন্য আরও কিছু কাজ করে যেতে পারার অভিমতো ব্যক্ত করেন। সাংবাদিক ও নারী অধিকারকর্মী দিল মনোয়ারা মনু বলেন, আমি প্রতিষ্ঠা থেকেই অনন্যা সঙ্গে কাজ করে আসছি। কখনও পুরস্কার পাওয়ার জন্য কাজ করিনি। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কাজ করেছি। তারপরও পুরস্কার পেলাম এটা অত্যন্ত আনন্দের। এ সময় তিনি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ সওগাত পত্রিকার নাসির উদ্দিন, বেগম পত্রিকার নূরজাহান বেগম ও কচি কাঁচার মেলার রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ে’র নাম বিশেষভাবে স্মরণ করেন। আয়োজনের তৃতীয় পর্বে সাতাশ পাউন্ডের কেকে কেটে অনন্যার সাতাশ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়। এছাড়া ২১০ জন অনন্যার ছবিসম্বলিত অনন্যার একটি বিশেষ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় ময়মনসিংহের নারী বংশীবাদক সরস্বতী দাসের বাঁশির সুরেলা শব্দধ্বনিতে। প্রয়াণবার্ষিকীতে ফিরোজা বেগমকে স্মরণ ॥ নজরুলের গানের পাখি ফিরোজা বেগম। উপমহাদেশের এই প্রখ্যাত নজরুলসঙ্গীত শিল্পীর প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার বিকেলে স্মরণসভার আয়োজন করে তাঁর পরিবার। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত স্মরণানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফিরোজা বেগমের পরিবারের সদস্য, নজরুলসঙ্গীত শিল্পীবৃন্দ ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশেষ ব্যক্তিবর্গ। উপস্থিত ছিলেন শিল্পীর সহোদর এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলা, আসাফউদ্দৌলা, মোহাম্মদ মসিহ্ উদ দৌলা, সহোদরা মরিয়ম বেগম, রাজিয়া বেগম, শামসুন্নাহার বেগম এবং ভাতিজি নজরুলসঙ্গীত শিল্পী সুস্মিতা আনিস। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, খালিদ হোসেন, মোস্তফা জামান আব্বাসীসহ আরও অনেকে। আনিস উদ দৌলা বলেন, ফিরোজা বেগমের স্মৃতি ধারণ এবং তাঁর কর্মকা-ের নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করা এবং তাঁর সাধনার ধারাবাহিকতায় নজরুলসঙ্গীত চর্চা এবং প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে আমাদের জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া উচিত। এই কাজের জন্য তিনি আসাফ উদ দৌলাকে আহ্বায়ক করে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব জানান। এজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সেই কমিটিকে ৫০ লাভ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, প্রতিটি শিল্পী অন্তরের ভেতরে বেদনা নিয়ে গান শুরু করেন। বেদনা ছাড়া শিল্প সাধনা হয় না। যাঁদের নান্দনিক বোধ আছে তাঁরা আজীবন উঁচু মাপের শিল্পীদের স্মরণ করে যাবেন। অনুষ্ঠানে ফিরোজা বেগমের জীবন ও কর্মের ওপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। শিল্পাঙ্গনে অনুকল মজুমদারের চিত্রপ্রদর্শনী ॥ শনিবার থেকে ধানম-ির গ্যালারি শিল্পাঙ্গনে শুরু হলো অনুকূল মজুমদারের চিত্রকলা প্রদর্শনী। সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে ‘গ্রামীণ জীবনপ্রভায় নাগরিক ছন্দ’ শীর্ষক প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সামিট গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন এবং শিল্প সমালোচক, স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন ও শিল্পী মনিরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্যালারি শিল্পাঙ্গনের পরিচালক রুমী নোমান। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন শিল্পী অনুকূল চন্দ্র মজুমদার। প্রদর্শনীতে ৪৪টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনী চলবে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×