ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরোজা বেগম স্মরণে নাশিদ কামালের গান

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ফিরোজা বেগম স্মরণে নাশিদ কামালের গান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শরতের নির্মল সন্ধ্যা। গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র শ্রোতার উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভর্তি। কখন প্রিয় শিল্পী ড. নাশিদ কামাল মঞ্চে আসবেন। হৃদয় ছোঁয়া গানে সকলকে মুগ্ধ করবেন। সবাই এ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন। ঘড়িতে সাড়ে ৬টা বাজতেই মঞ্চে আসেন শিল্পী নাশিদ কামাল। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সঙ্গীত পরিবেশনের প্রস্তুতি নিলেন। নজরুল সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগমের প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার এ সঙ্গীত সন্ধ্যায় আয়োজন করে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। সঙ্গীত পরিবেশনের আগে শিল্পী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীত সম্রাঞ্জী ফিরোজা বেগমকে। তিনি বলেন, আজ আমার জন্য একটা সুন্দর মুহূর্ত। ফিরোজা বেগমের মতো মহান ব্যক্তিত্বকে নিয়ে কিছু বলার মতো সাহস আমার নেই। তিনি অন্য কারও মতো নন, তিনি কেবল নিজের মতো। ‘এমনই বরষা ছিল সেদিন’ গানের মধ্য দিয়ে তিনি শুরু করেন তার পরিবেশনা। ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে লালিত্য পাওয়া গানটিতে তিনি আবেগময়তায় মগ্ন হয়ে পড়েন। এরপর কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে ফিরোজা বেগমের প্রথম পরিচয়ের মুহূর্তটি বর্ণনা করেন। শিল্পীর পরের পরিবেশনায় ছিল নজরুলের বিখ্যাত গান ‘পথ চলিতে কভু চকিতে’। গানটি পরিবেশনের পর দর্শকের উদ্দেশে বলেন, আজ আমার মনে হচ্ছে নিজের বাসায় সবাইকে গান গেয়ে শুনাচ্ছি। আমার পরিচিতজনদের পাশাপাশি অনেক শ্রোতার সরব উপস্থিতিতে আমি গর্ব বোধ করছি। তিনি নজরুলের ‘নিরজনে সখী বলো বধুয়ারে’ গানটি পরিবেশনের পর বলেন, ফিরোজা বেগম শুধু নজরুল সঙ্গীতই চর্চা করেন নাই, তাঁর গাওয়া অনেক রবীন্দ্রসঙ্গীত আছে যা সে সময়ে খুবই শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। পরে তিনি পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আজি বিজন ঘরে নিশিথ রাতে’। শিল্পী নাশিদ কামাল বলেন, ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে বহু গজল শুনেছি, তাঁরই গাওয়া ‘ল্যাগতার নেহি হ্যাজি মেরা উজরে দয়ারমে’ গজল গাওয়ার চেষ্টা করছি। গজলের পর ‘যা যারে পাগল মনুয়া’ বন্দিশে একটি ছোট খেয়াল পরিবেশন করেন। ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে শ্রোতাপ্রিয় নজরুলের ‘দূর দীপবাসিনী চিনি তোমারে চিনি’ গানটি পরিবেশন করেন। ফিরোজা বেগম কলকাতা থেকে বাংলাদেশে আসার পর যে গানগুলো খুবই শ্রোতাপ্রিয়তা পায় শিল্পী একে একে তার কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে ছিল ‘নাই হলো মা বসন ভূষণ’, ‘আসে বসন্ত ফুল বনে’সহ বেশকিছু জনপ্রিয় গান। শিল্পী কমল দাশগুপ্তের ‘পৃথিবী আমারে চায়’ গানটিতে শিল্পী নাশিদ কামালের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান শিল্পী শাহীন সামাদ, মোস্তফা জামান আব্বাসী ও আক্তার জাহান। এরপর শিল্পীর একক কণ্ঠে পরিবেশিত গান হলো ‘মোর ঘুমঘোরে এলো মনোহর’, ‘আমি পুরবো দেশের পুরনারী’, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’, ‘আমি যার নূপুরের ছন্দ’, ‘কলঙ্ক আর জোছনায় মেশা তুমি সুন্দর চাঁদ’, ‘গভীর নিশিথে ঘুম ভেঙে যায়’, ‘আমায় নহে গো ভালবাস শুধু ভালবাসা মোর গান’ ও ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেব না ভুলিতে’। শিল্পী নাশিদ কামাল শুধুমাত্র নজরুল সঙ্গীতের মধ্যে তাঁর পরিবেশনা সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত ও সোনালী যুগের জনপ্রিয় আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গানও পরিবেশন করেন। তবে তাঁর পরিবেশিত প্রতিটি গানের সঙ্গে প্রয়াত শিল্পী ফিরোজা বেগমের কোন না কোন যোগসূত্র ছিল। তাঁর সুললিত কণ্ঠে পরিবেশিত গানের ফাঁকে তিনি ফিরোজা বেগমের সঙ্গে সেই যোগ সূত্রকে তুলে ধরেন। এছাড়া তাঁর সঙ্গে যে স্মৃতিকেও তিনি সুন্দরভাবে মন্থন করেন। তাঁর কণ্ঠে একের পর এক গান বিমুগ্ধ চিত্তে শ্রোতারা উপভোগ করেন। কেউ কেউ নিজের অনুভূতিকেও ব্যক্ত করেন অবলিলায়। সব মিলিয়ে অসাধারণ এক সঙ্গীতময়তায় শেষ হয় ফিরোজা বেগমকে নিবেদিত শ্রদ্ধাঞ্জলি।
×