ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহরের সীমানা ছাড়িয়ে গ্রামের অলিগলিতেও

রাজশাহীতে ফের মাদকের থাবা

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

রাজশাহীতে ফের মাদকের থাবা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ২২ থেকে ২১ বছর বয়সের মেয়ে। ছাত্রীবেশে ঘোরাঘুরির সময় তার ব্যাগ তল্লাশি করে পাওয়া গেল এক হাজার নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ‘ইয়াবা’। রাজশাহী নগরীর হাদিরমোড় বৌ বাজার এলাকা থেকে শাকিলা আখতার পপি নামের এ নারীকে শুক্রবার মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা গ্রেফতার করে। শাকিলা আখতার পপি চারঘাটের তাতারপুরের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী। পুলিশের ভাষ্য সে মাদক ব্যবসায়ী। শুধু শাকিলা নয়, তার মতো অনেক নারী এখন মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আছে যুবক ও শিশুরাও। রাজশাহী নগরীর অলিগলিতে এরা কৌশলে বিক্রি করে বিভিন্ন ধরনে মাদক। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ও হেরোইন বিক্রি করে। এরাই আবার গ্রামের সীমানা পেরিয়ে শহরের অলিগলি ছেড়ে মাদক পাচার করছে জেলা থেকে জেলায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধরনও পাল্টেছে মাদক কারবারিদের তাদের আগ্রাসনে রাজশাহী নগরীও হয়ে উঠেছে ইয়াবারাজ্যে। রাজশাহীর সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা চারঘাট, বাঘা ও গোদাগাড়ীর সীমানা পেরিয়ে রাজশাহী নগরীও এখন ভাসছে মাদকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রতিদিন নগর ছাড়াও জেলার কোন না কোন উপজেলা কিংবা মাদক পয়েন্টে ধরা পড়ছে মাদকের চালান। তবে এর পরিমাণ খুবই নগণ্য। এরচেয়ে কয়েকশগুণ মাদক পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী তিন উপজেলায় আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। তারা এখন নারীদের ব্যবহার করছে মাদক বহনের কাজে। গত এক সপ্তাহের অভিযানে রাজশাহী অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার রাজশাহীর পবা উপজেলার মুরারীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৩৩১ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এ ঘটনায় দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটকও করা হয়েছে। রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক জিল্লুর রহমান জানান, আটককৃতরা পবা উপজেলার মুরারীপুর এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। এছাড়া সম্প্রতি জেলার বাঘা উপজেলায় আড়ানীর নূরনগরে হানা দিয়ে ৬টি চোলাই মদের কারখানা আবিষ্কার করে র‌্যাবের সদস্যরা। এসব কারখানা থেকে এক লাখ ২৬ হাজার ৯শ’ লিটার চোলাইমদ উদ্ধার করে সেগুলো ধ্বংস করা হয়। সীমান্তবর্তী উপজেলাসমূহের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এসব উপজেলায় সব সময় থাকে মাদকের কারবার। তবে ঈদকে সামনে রেখে এসব উপজেলার মাদক ব্যবসায়ী চোরাচালানি সিন্ডিকেট আবারো বেপরোয় হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব চোরাকারবারিরা দিনের পর দিন মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়ে তা যানবাহনযোগে পাচার করছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে। আর এসব পণ্য পাচার করতে তারা ব্যবহার করছে সমাজের দরিদ্র পরিবারের বেকার ছেলে ও মেয়েদের। মাদক পাচার করতে গিয়ে প্রশাসনের হাতে আটকও হচ্ছে দরিদ্র পরিবারের লোকজনই। রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক জিল্লুর রহমান জানান, বর্তমানে মাদক ব্যবসার প্রসার বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিন ধরাও পড়ছে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তারপরেও লোকবল সঙ্কটসহ নানা কারণে আটকানো যাচ্ছে না মাদক ব্যবসায়ীদের।
×