ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঞ্চয়ের অভ্যাস

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সঞ্চয়ের অভ্যাস

সঞ্চয় মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সবারই সঞ্চয় করা উচিত। নিজের ও পরিবারের জন্য সঞ্চয়ের মানসিকতা থাকলে ভবিষ্যত আনন্দদায়ক হয়ে উঠতে পারে। কারও কারও মতে, সঞ্চয় ছাড়া চলা হালবিহীন নৌকায় ওঠার মতো। সঞ্চয়ের অন্যতম শর্ত হচ্ছে বাজেট করে চলা। বাজেট নিজের ও পরিবারের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার অন্যতম উপায়। সেক্ষেত্রে মাসের শুরুতেই বাজেট তৈরি করে নিতে হয়। সাংসারিক বাজেটের পাশাপাশি ব্যক্তিগত খরচের একটা বাজেট থাকা জরুরী। বাজেট করার আগে আয়ের উৎস ও ব্যয়ের তালিকায় চোখ বুলিয়ে নিতে হয়। কারণ আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ না জানলে সঞ্চয় করা সম্ভব হয় না। বাজেট থাকলে কোন্ খাত থেকে কত সঞ্চয় করা যাবে সেটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে। অনেকে বলে থাকেন যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের আবার সঞ্চয়! কিন্তু তা সত্ত্বেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য সামান্য হলেও সঞ্চয় করা বুদ্ধিমানের কাজ। সঞ্চয় মানুষের মনে অন্যরকম মনোবল ও সাহস বাড়িয়ে তোলে। সঞ্চয় করা কিছুটা কষ্টকর হলেও সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সদিচ্ছার। সেই সদিচ্ছাই গড়ে তুলতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে সঞ্চয়ের মনোভাব নিয়ে বড়দের সঙ্গে স্কুলের ছোট ছেলেমেয়েদেরও ব্যাংকিং সেবায় যুক্ত করার সংবাদটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক একটি ঘটনা। শৈশব থেকে সঞ্চয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, আর্থিক শিক্ষার প্রসার এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। অর্থ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সঞ্চয় করার মনোভাব এবং অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। চলতি বছরের জুন শেষে শিক্ষার্থীদের হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার। এই পর্যন্ত ক্ষুদে সঞ্চয়ীদের ব্যাংকে জমা পড়েছে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা। বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে এই হিসাব খোলা ও জমার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এই হিসাব খুলতে নতুন ব্যাংকগুলোও এখন এগিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে এই সেবা পৌঁছে গেছে দেশের সব প্রান্তে। বর্তমানে সঞ্চয়ের পরিমাণ যে অঙ্কে দাঁড়িয়েছে তা দিয়ে নতুন দুটি ব্যাংক খোলা সম্ভব। মাত্র ৫ বছরে এই অসাধারণ কার্যক্রম প্রশংসার দাবি রাখে। সঞ্চয়ের এই উদাহরণটি পরিবারের অন্যদের ক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত হতে পারে। সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে দেশে সরকারী ও বেসরকারীভাবে ব্যাংক-বীমাসহ নানা সংস্থার কার্যক্রম চালু রয়েছে। এসব সংস্থায় সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়লে এক সময় বড় ধরনের আমানত সঞ্চিত হয়। যা থেকে দোকান, ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ এবং দৈবত-দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ ও পড়াশোনার খরচ মেটানো সম্ভব হয়। দৈনন্দিন জীবনে নানা প্রয়োজনে টাকা খরচ করতেই হবে। এক্ষেত্রে যদি একটু সাবধান হওয়া যায় তবেই ব্যক্তিগত জীবনে সমৃদ্ধি চলে আসে। মিতব্যয়িতা জীবনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে শতভাগ সফল একটি পদ্ধতি। সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে সঞ্চয় করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাঁচার পথ তৈরি করা উচিত। এ জন্য প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সঞ্চয়ে রাখা যেতে পারে। আর এটা করা গেলে আর্থিকভাবে দিনকে দিন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।
×