ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

কেবলই কানামাছি কেবলই অন্ধকার

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কেবলই কানামাছি কেবলই অন্ধকার

পুরো পৃথিবীর চেহারাটাই আজ খ্যাপাটে বলে মনে হতে পারে। পৃথিবীব্যাপী এত অশান্তি, দেশে দেশে এমন রক্তারক্তি কা- আগেও হয়ত হয়েছে, জানেন তা ইতিহাসবিদরা। কিন্তু মানুষ এই একুশ শতকেও কেন মারমুখী স্বভাবের হয়ে উঠছে দেশে-বিদেশে, তার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা হয়ত মেলে। যুদ্ধবাজরা তাদের ঘুঁটি যেভাবে চালে, তাতে বিপদ বাড়ে বিশ্বেরই। যুদ্ধবাজরা মধ্যপ্রাচ্যে, এশিয়াতে যে ল-ভ- কা- ঘটিয়েছে, আইএস, আল কায়েদা, তালেবান নামক জঙ্গীদের উত্থান ঘটিয়েছে, তার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিজ বাসভূমি ছেড়ে বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিচ্ছে অজানার পথে। শরণার্থী নাম ধারণ করে আশ্রয়ের সন্ধানে ইউরোপের দেশে দেশে পা রাখছে। কিন্তু সেখানেও পদে পদে নানা বাধা। কেউ প্রশ্ন করছে না। কৈফিয়তও চাইছে না, কেন এই লাখ লাখ মানুষকে শরণার্থী হতে হচ্ছে। কী ছিল তাদের অপরাধ। নিজ বাসভূমি ছেড়ে সহায়সম্বলহীন অবস্থায় ভিনদেশে পাড়ি দিতে হচ্ছে, কোন্্ অপরাধে তারা আজ গৃহহীন? কারা দায়ী তাদের এই অবস্থার জন্য। উত্তর আসে না কোনদিক থেকে। যেন এর প্রতিকার নেই। ইউরোপ শরণার্থীদের আশ্রয়স্থল আপাতত হলেও দীর্ঘস্থায়ী মেয়াদে আরও শরণার্থীর স্রোত নামতে পারবে, তা তো নয়। সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক, লিবিয়া, ইয়েমেন, আফাগানিস্তানসহ অনেক দেশ, যারা সম্পদশালী, সেখানে কেউ স্বস্তিতে নেই। সকলেই সন্ত্রস্ত, এমনকি যুদ্ধবাজরাও। সমস্ত সমাজ হয়ে উঠছে সশস্ত্র। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি। এসব অস্ত্র আসে চোরাইপথে। শক্তিশালী দেশই নিজ নিজ মতলবে দরাজ হাতে অস্ত্র সরবরাহ করছে। উদ্দেশ্য, নানা রকমের গোলমাল বাধিয়ে তেলসম্পদে সমৃদ্ধ দেশগুলোকে নড়বড়ে করে দেয়া। তারা কয়েকটি দেশের সরকারের পতন ঘটিয়ে পরিস্থিতি এমন করেছে যে, গৃহযুদ্ধের রেশ আর থামে না। জঙ্গীবাদের বিপুল বিস্তার ঘটিয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, সরকারপ্রধানদের হটিয়ে নিজেদের পছন্দমতো সরকারকে ক্ষমতায় বসাবে। বসিয়েছেও। কিন্তু কোনকিছুই আর এসব সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। তেল সম্পদের দখলকে কেন্দ্র করে লড়াই তুঙ্গে উঠছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ধর্মীয় পরিচয়। শিয়া-সুন্নি কিংবা কুর্দিদের মধ্যকার লড়াই কেবলই মৃত্যুর মিছিলকে বড় করছে। তদুপরি আইএস নামক বিশ্বত্রাস জঙ্গী সংগঠনটির ধ্বংসাত্মক কর্মকা- এবং সশস্ত্র অবস্থান বিশ্বকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। আত্মকলহের দরুন এই দেশগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। বহিঃশত্রুর শক্তিও বাড়িয়ে তুলছে। এসব দেখেশুনে যে কেউ মন্তব্য করতেই পারেন, আজকের মনুষ্য সমাজকে ঠিক প্রকৃতস্থ বলা চলে না। যখন দেখা যায়, ইউরোপের ভূমিতে পা রাখা বা রাখার আগে নৌকাডুবিতে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশীও রয়েছেন। তখন মন বিষণœ হয়ে পড়ে। কারণ ৪৪ বছর আগে নিজ দেশ ছেড়ে শরণার্থী হওয়ার মতো বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে কোটি বাঙালীকে। শরণার্থী জীবনের নির্মমতা কী, তা জানে বাঙালী। কিন্তু স্বাধীন স্বদেশ পেয়ে সেই দুঃসহ জীবনকে ভুলে গিয়েছে বাঙালী। নতুন স্বদেশ তাকে নতুন চেতনা দিলেও সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে আবার ফিরে যেতে হয়েছে পূর্বাবস্থায়। পরাধীনতার শেকল হাতে পরাজিত শক্তি পদানত করে রেখেছিল এক যুগেরও বেশি, যার রেশ আজও বহমান। হয়ত মনে হবে সমগ্র মানব সমাজেরই চিন্তা-ভাবনা দৃষ্টিভঙ্গী বিকারগ্রস্ত এবং সে কারণেই কার্যকলাপও আজ বিকৃত। সভ্য সমাজে যুক্তি ছিল সবচেয়ে বড় শক্তি। মতবিরোধ ঘটলে যুক্তি- বিচারের দ্বারা বিরোধ মেটানো হতো। এখন যুক্তির আর ধারও নেই। ভারও নেই। সব ব্যাপারেই রফা এখন শক্ত হাতে। সামান্যতম বিরোধেও লোহা-ইস্পাত না হলে নিষ্পত্তি হয় না। গায়ের জোর যখন মাথার জোরকে ছাড়িয়ে যায় তখন বুঝে নিতে হয়, মানব সমাজে ঘোর দুর্দিন উপস্থিত। এ শুধু বিশেষ কোন দেশের কথা নয়, সমস্ত পৃথিবীতেই এটা ঘটছে। কবি জীবনানন্দ দাশ জেনেছিলেন,‘ পৃথিবীর এখন গভীর গভীরতর অসুখ’। সেই অসুখ আর সারে না। অর্ধশতাব্দীর বেশি পেরিয়ে গেলেও। বরং অসুখ আরও তীব্রতর হয়ে উঠছে বিশ্বশান্তি শব্দটি ক্রমেই বই আর বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। হিংসা, দ্বেষ, হানাহানি, রক্তারক্তি নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা আজ মানুষের নিজস্ব ভাষায় পরিণত হচ্ছে। হিংসাকে জয় করার কথা বলেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। যিনি নিজেই হরিজনদের হিংসার শিকার হয়ে গুলিতে প্রাণ হারান। এ যে নিতান্তই নীতিকথা আজ। তাই হিংসা আজ পরম ধর্মে পরিণত হয়েছে। এর চর্চা শক্তির অপব্যয় কেবলই। মানব সমাজ আজ এক নতুন যুগের সম্মুখীন। পুরনো ধ্যান-ধারণা দ্রুত বদলাচ্ছে। ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বোধশূন্য, দ্বিধা-দ্বন্দ্বহীন নিরঙ্কুশ মানুষ, নির্দ্বিধায় যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত। এখনই যা নমুনা দেখা যাচ্ছে, মনে হয় পুরো মানুষ নয়, হাফ-ব্যাকড মানুষ, আধ-খেঁচড়া করে ছেড়ে দিয়েছে। জন্তু-জানোয়ারের মতো একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এ জাতীয় মানুষকে যদি বন্যপ্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়, তাহলে সেটাকে কী খুব অন্যায্য ব্যাপার বলে মনে হবে? সত্যি বলতে কী, সভ্যতা আজ বিপন্ন। এ মুহূর্তে দেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর সর্বপ্রধান কার্য হওয়া উচিত সভ্যতাকে বর্বরতার হাত থেকে মুক্ত করা। রাজনীতিকে সর্বপ্রকার দুর্নীতির পরিপোষক থেকে সরিয়ে আনা। শহরের রাস্তায় যেমন পুঞ্জীকৃত জঞ্জাল, সমাজের সমস্ত স্তরে তেমন পুঞ্জীভূত দুর্নীতি। এ শুধু আমাদের দেশে নয়, অসাধুতা সারা পৃথিবীতে ছেয়েছে। পৃথিবীর সকল মানুষ যে একই মানব পরিবারের অন্তর্গত, আমাদের শিক্ষা-সভ্যতা এ বোধটি মানুষের মনে কোনমতেই জাগাতে পারেনি। বরং বিভেদকে আরও বাড়িয়েই দিয়েছে। শিক্ষা যদি পুঁথিগত না হয়ে মানুষকে চেনা-জানার শিক্ষা হতো, মানুষকে ভালবাসার জন্য ধর্মীয় আদর্শকে কাজে লাগাত, রাজনীতি যদি নীতিহীনতা ছেড়ে মানুষের কল্যাণের কথা ভাবত, তাহলে বিভেদ-বিরোধ অনেকাংশ দূর হতো; তা হওয়াটাই সঙ্গত। রাজনৈতিক দল যারা গঠন করেছিলেন তারা সদুদ্দেশ্য নিয়েই করেছিলেন- এমনটা বলা যায়। কিন্তু ভাল জিনিসেরও অপপ্রয়োগ হলে তা হিতে বিপরীত হতে বাধ্য। ধর্ম যদি ধর্মব্যবসায়ীর হাতিয়ার হয়ে ওঠে, রাজনীতি হয় নীতিহীনের চর্চার বিষয় এবং শিক্ষাদান এসে পড়ে অশিক্ষিতের হাতে, তা হলে বিড়ম্বনা ঘটারই কথা। আজকের বাংলাদেশ সেই বিড়ম্বনার সম্মুখীন। অথচ এই সবের বিরুদ্ধে বাঙালী বিগত শতকের ষাট দশক হতে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু এর হাত থেকে পরিত্রাণ মিলছে না। তার কার্যকারণও রয়েছে। পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট পরবর্তী সামরিক জান্তা শাসন সেই আন্দোলনের অর্জনকে ধূলিসাত করে দিয়ে দেশকে পেছনের দিকে টেনে নিয়েছে। বিকলাঙ্গ চিন্তা-চেতনার সমাজ তারা গড়ে তুলেছেও। ধর্মকে ব্যবহার শুধু নয়, মিথ্যা বা অসত্যকে সমাজে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করার দক্ষতাও দেখিয়েছে। রাজনীতিকে কঠিন করে তোলার অভিপ্রায়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, লুটেরা শ্রেণী, মেধাহীন পেশাজীবী এবং রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত উচ্ছিষ্টদের সমন্বয়ে রাজনীতির চর্চা করেছে জান্তা শাসকরা, তাতে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মার ছাপই ছিল প্রধান। সেই পশ্চাদপদ তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ সহজ নয়। অনেক দুস্তর-কঠিন প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার জন্য যে শক্তিমত্তা প্রয়োজন, প্রয়োজন জনগণকে সংগঠিত করা; বাস্তবে সেদিক থেকে অনেক পেছনে পড়ে আছে দেশপ্রেমিকরা। ফলে দেশের চিন্তা এবং জ্ঞান সাধনার বৃহত্তর অংশই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে এখনও। গ্রাম পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে গেলেও এর ব্যবহার সম্পর্কে গুরুত্বের বিষয়টাতেও যথেষ্ট সচেতন করে তোলা হচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী যে জিঘাংসা ছড়িয়ে পড়েছে, তার কালো থাবা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত থাকতে পারবে, এমনটা বলা সহজ নয়। দেশ এখন এক অগ্নিগর্ভ সময় পার করছে বলা যায়। বিদেশী মুরব্বিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে, বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নিতে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে উৎখাত করার জন্য, সরকার অপসারণ শুধু নয়, এরা সরকারপ্রধানের জীবননাশও চায়। ২১ দফা চেষ্টা করে, গ্রেনেড হামলা চালিয়েও তারা তাদের ষড়যন্ত্র সফল করতে পারেনি। দেশের ভেতরের কিছু অপশক্তি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে অপপ্রচার চালিয়েছে। এদের কাছে দেশ, জাতি, সমাজ গুরুত্ব বহন করে না। এরা নিজেদের স্বার্থের জন্য, ক্ষমতার জন্য এমনভাবে লালায়িত যে, জঙ্গীবাদ পর্যন্ত দেশে বিস্তার ঘটিয়েছে। বোমাবাজির মহড়াও দিয়েছে। সর্বশেষ এ বছরের গোড়ায় তারা জঙ্গী ও সন্ত্রসাবাদের নৃশংস প্রদর্শন করেছে। বোমা মেরে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করার জন্য হেন কাজ নেই তারা করছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাতে জিএসপি সুবিধা না দেয়, সে তৎপরতায় তারা সফল হয়েছে। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নেয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে দরিদ্র দেশে ফিরিয়ে নিতে চায়। দরিদ্র মানুষকে ঋণ দিয়ে বশে রাখার প্রক্রিয়াটাই প্রাধান্য পায়। গরিবদের ওপর খবরদারি বহাল রাখাটাই লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদেই বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতসহ কিছু অপশক্তি ব্যক্তি স্বার্থে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা ঘরের শত্রু বিভীষণ। শুধু নিজেদের স্বার্থের কারণে তারা দেশের ভাবমূতি ক্ষুণœœ এবং দেশের মানুষের ক্ষতি করে। প্রধানমন্ত্রীর মতো আমরাও জানি, এই অপশক্তি দীর্ঘদিন ধরেই অপতৎপরতায় লিপ্ত। বিদেশী প্রভুদের আর্শীবাদ ধন্য হয়ে এরা চায় প্রভু তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। ফলে তারা অতীতের চেয়ে শতগুণ শক্তিতে দুর্নীতি আর লুটপাটে মত্ত শুধু নয়, রক্তপাতের নহর বহাবে। ২০০১ সালে যা করেছে তার শতগুণ বেশি নারকীয়তা, নৃশংসতা প্রদর্শন করবে। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পরাজিত শক্তি অর্থে, অস্ত্রে ক্রমশ বলীয়ান হয়ে উঠেছে। এরা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে দেশে অশান্তি, অরাজক অবস্থা সৃষ্টির জন্য, যা তারা প্রায়শই করার অপচেষ্টা চালায়। জনগণের সমর্থনহীন যুদ্ধাপরাধীর দল এখন নানা নামে জঙ্গী সংগঠন গড়ে তুলছে। এরা যেমন বোমা বানাতে জানে, তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারও জানে। এরা আর অশিক্ষিত নয় বরং মেধাবী ছাত্রদের এ সবে জড়িত করে হত্যাকা- চালাচ্ছে। বিস্ময়কর যে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন তেমনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরাও জড়িত হয়ে পড়ছে জঙ্গী সংগঠনগুলোতে। কিসের প্রলোভনে এরা স্বাভাবিক মানবজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে খুনীতে পরিণত হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা মনোবিদরা ভাল বলতে পারবেন। উগ্রতা, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারত না যদি বিএনপি এদের লালন না করত। এদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দলটি নিজেই জঙ্গীদের খপ্পরে পড়ে এখন দিশাহারা। এই দলের অনেকেই জঙ্গীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে- এমনটা সরকারী দল থেকে বলা হয়। তাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শত্রু মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের বলেছেন। শত্রুপক্ষ আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কাও করেছেন তিনি। ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসের রাজনীতি যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনমত তৈরি করা জরুরী। রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে যারা জঙ্গীবাদকে মদদ দিয়েছে, ক্ষমতার বাইরে থেকেও তারা অনুরূপ মদদ দিয়ে প্রমাণ করছে যে, তারা জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ থেকে সরে আসেনি। অথচ তারা রাজনৈতিক দলের সাইনবোর্ডের নিচে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র চায়। জঙ্গীবাদে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। যেমন নেই শিক্ষা । জঙ্গীরা নারীশিক্ষা শুধু নয়, সাধারণ শিক্ষারও বিরোধী। তালেবানরা মাদ্রাসা শিক্ষা ছাড়া অন্য শিক্ষারও ঘোর বিরুদ্ধ। আর বাংলাদেশে জঙ্গীদের সমর্থকরাও অনুরূপ অবস্থানে। তাই দেখা গেছে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার সময় শতসহস্র অনুরোধেও তারা শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি দেখায়নি। দেশে শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক বলা যায়। শিক্ষার হার বাড়ছে কাগজে কলমে। বাস্তবে শিক্ষিতজন মিলছে না। তদুপরি শিক্ষাকে এখন কোচিংনির্ভর করা হয়েছে। কোচিং সেন্টারগুলো হাজার কোটি টাকা আয় করে। অথচ কর দেয় না। এদের অর্থ জঙ্গী ও সন্ত্রাসী খাতে যে বরাদ্দ হয় না, তা নিশ্চিত করবে কে। এসব পরিচালনা করে থাকে জামায়াত-শিবির। যেমন বেসরকারী বিশ্বাবিদ্যালয়গুলো শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করেছে। এদের শিক্ষার মানও ভাল নয় বলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্তদের নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে চায় না। এগুলো অনেকটা উঁচুদরের বা হাইরেটের কোচিং সেন্টার। নিচে পোশাক কারখানা বা শপিংমল, উপরে বিশ্ববিদ্যালয়। এমন পরিবেশ শিক্ষার সহায়ক হতে পারে না। ব্যবসায়ীরা এ খাতে বিনিয়োগ করছে লাভের জন্য শিক্ষার বিস্তারের জন্য নয়। এরা সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে প্রচার রয়েছে। এদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলোকিত মানুষ তৈরি করতে পারছে কিনা সন্দেহ। সেলিম আলদীনের ‘শকুন্তলা’ নাটকের একটি দৃশ্যে অন্ধকারাচ্ছন্ন মঞ্চে শকুন্তলা চিৎকার করে ওঠে, কেবলই কানামাছি কেবলই অন্ধকার। আজ মনে হয়Ñ দেশ নিয়ে, শিক্ষা নিয়ে এক কানামাছি খেলা চলছেÑ যা অন্ধকারকে আরও প্রসারিত করতে চায়। আমাদের এই কানামাছি আর অন্ধকার থেকে মুক্ত হতেই হবে।
×