ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভ্যাট জটিলতা কেটে যাবে ॥ বিষয়টি পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত অর্থমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ভ্যাট জটিলতা কেটে যাবে ॥ বিষয়টি পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত অর্থমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা শীঘ্রই কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, সরকার বিষয়টি নিয়ে অনমনীয় নয় এবং এ বিষয়ে আলোচনার দরজাও বন্ধ নয়। বিষয়টি পুনর্বিবেচনারও ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আশা করি, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূল্য সংযোজন কর মূসক (ভ্যাট) নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। রবিবার সচিবালয়ে বিকেলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র নির্মাণসংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ওই সময় উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রীও ভ্যাট নিয়ে কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, মূসক নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, আমি আশা করি এর একটি সম্মানজনক সমাধান সম্ভব। সমাধানটি শীঘ্রই হয়ে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গত ছয় বছরে আমরা অনেক বিষয় রিভিউ করেছি। অন্যদিকে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নতুন বেতন কাঠামোতে মর্যাদাহানি হয়েছে বলে আন্দোলন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে বসতে হবে। তাঁদের পদের ৫/৬টা ধাপ রয়েছে। পিরামিডটা কোথাও হয়ত কমবেশি হয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী মনে করেন শিক্ষকরা যে আন্দোলন করছেন, তা ঠিক নয়। তিনি বলেন, বেতন কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে কোথাও তাঁদের মর্যাদাহানি করা হয়নি। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছেÑ সাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে মুহিত বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দ্বার তো রুদ্ধ নয়। ভ্যাট আরোপের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা কোন রিজিড পজিশন নয়। আমরা একটা পদক্ষেপ নিয়েছি। বাণিজ্যমন্ত্রীও বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এর সমাধানও হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা ভাবতে হবে। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর আরোপ করা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মূসক প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মূসক দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থীরা নয়। গত শুক্রবার সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানের আগে অর্থমন্ত্রী আবার এ বিষয়ে কথা বলেন। ওই দিন তিনি বলেন, মূসক নিয়ে আন্দোলনের কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পান না তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপ করা সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। একইসঙ্গে দেশব্যাপী সব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আলাদা করে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনগুলোর নেতারা এসব কথা বলেন। তাঁরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ঘোষণার দাবিতে চলমান আন্দোলনেও সমর্থন দেন। ছাত্রজোটের মধ্যে রয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন এবং ছাত্র ঐক্য। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সৈকত মল্লিক লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রতিটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভ্যাট প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট চলবে। এনবিআরের বক্তব্যকে ‘চাতুরিপূর্র্ণ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে করে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ কমার বিপরীতে টিউশন ফি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি জনার্দ্দন দত্ত নান্টু বলেন, কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিজেদের মতো করে লাখ লাখ টাকা টিউশন ফি নির্ধারণ করছে। ছাত্ররা বাধ্য হচ্ছে সে ব্যয় বহন করতে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অর্থ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। যা ১৯৯২ সালে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উদ্দেশ্যগুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা ইউজিসি এসব বিষয়ে নির্বিকার। ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে গড়ে ওঠা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চের’ পক্ষ থেকে অপর এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার আলোকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি নির্ধারণ করতে হবে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আকরামুল হাসান এক বিবৃতিতে চলমান বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের যৌক্তিক ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগকে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানান।
×