ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক শ্রেণীর হকার ও তান্ত্রিক সর্বরোগের পসার সাজিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে;###;এরা স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য হুমকিস্বরূপ

উন্নত স্বাস্থ্যসেবার যুগেও হাটবাজারে প্রতারিত হচ্ছে বহু মানুষ

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

উন্নত স্বাস্থ্যসেবার যুগেও হাটবাজারে প্রতারিত হচ্ছে বহু মানুষ

সমুদ্র হক ॥ দেশের প্রায় প্রতিটি শহর উপজেলা ও হাটবাজারে গাছগাছালি জীববৈচিত্র্যের (বায়ো ডাইভারসিটি) নানা উপকরণ নিয়ে পসরা সাজিয়ে প্রদর্শন করে এক শ্রেণীর হকার ও তান্ত্রিক। এরা কথার জাদু ও মারপ্যাঁচে রোগব্যাধি ছাড়াও এমন সংবেদনশীল জায়গাগুলোতে স্পর্শ করে সাধারণ মানুষ মোহে পড়ে এবং কখনও তা বিশ্বাসও (!) করে। এ ধরনের তান্ত্রিকদের ফাঁদে পড়ে কিছু সাধারণ লোক এবং অজ্ঞ ও কুসংস্কারের থাবায় পড়া মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। কথিত সর্বরোগের ওষুধ ও জীবনের শেষ চিকিৎসার কারবারিদের দাপটে স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা হলেও হুমকির মুখে পড়ছে। সর্বরোগের কথিত চিকিৎসকরা ওষুধ বেচতে অনেক কৌশলের আশ্রয় নেয়। কে কোথায় ভোর রাতে স্বপ্নে দেখে ওষুধ বানিয়েছে তার ফিরিস্তি তুলে ধরে। সেই ওষুধ সেবন করে বা খেয়ে কতজন কোন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছে তার তালিকা এবং তামিল দেয়া কিছু অভিনীত চরিত্র হাজির করে। কোন জলজ ও এ্যাম্ফি প্রাণীর (উভচর) তেল (জোঁকের তেল নামে অধিক পরিচিত) এবং কয়েক প্রাণীর শুঁটকি করা মাংস, হাড়হাড্ডি, চামড়া, লেজ দাঁত ইত্যাদি প্রদর্শন করে মজমা জমায়। বড় দেশে গবেষণা হয়েছে এমন আজগুবি গল্প বলে মানুষকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে। অনেক ক্ষেত্রে তা সফলও হয়। মানুষের বায়োলজিক্যাল বিষয়সহ শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গ নিয়ে তারা এমন সব কথা বলে যা তরুণ, নববিবাহিত ও মধ্য বয়সীদেরও মনস্তত্ত্বে আঘাত করে। এদের গল্প বলার ধরন এমন-দাম্পত্য জীবনে নানা কারণে রাগ অনুরাগের পালা থেকেই থাকে। বাগবিত-াও হতে পারে। আবার মিলও হয়ে যায়। এই তান্ত্রিক ও ক্যাভাসাররা এই বিষয়গুলো পুঁজি করে চাপার জোরে সম্পূর্ণ মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে তা নিয়ে যাবে সরাসরি জৈবিক জীবনের প্রভাবের ওপর। এসব অবাস্তব গল্প অবিবাহিত তরুণরা শুনে যৌবনে পদার্পণের স্বাভাবিক নিয়মের কিছু উপসর্গের ভুল ধারণা নিয়ে ভীতিকর অবস্থার মধ্যে পড়ে। বিষয়টি গোপন করে কোন কিছু না বুঝেই তারা তান্ত্রিকদের বটিকা হালুয়া সালসা তেল ইত্যাদি ব্যবহার শুরু করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফলাফল হয় উল্টো। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এমন এক জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয় যা সারাতে ভাল চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জীবন বাঁচতে বহু অঙ্কের টাকা ব্যয় হয়। মানব জীবন নিয়ে খেলা করা এসব তান্ত্রিকদের কথিত চিকিৎসায় যখন জীবনের শেষ দিনটি অতি দ্রুত কাছে চলে আসে তখন ভাল হাসপাতালের চিকিৎসকগণও সঙ্কটে পড়েন রোগীর জীবন নিয়ে। হালে আরেক ধরনের কথিত চিকিৎসকের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কেউ স্বপ্নে রাতারাতি অলৌকিক ক্ষমতার (!) অধিকারী হয়ে শিশি বোতলে পানি ভরে ফু দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে। কখনও কোন কিশোর বালক এই ক্ষমতা পেয়ে গেছে বলে প্রচার চালানো হয়। তারপর লোকজনের ঢল নামে। অনেকে আসে দূরদূরান্ত থেকে। যে এলাকায় এই পানি পড়া দেয়া হয় সেখানে মেলার অবস্থা সৃষ্টি হয়। বোতলে পানি ভরে অপেক্ষায় থাকে একটি ফু পেতে। প্রচার চালানো হয় দীর্ঘদিনের জটিল ব্যামোসহ যে কোন অসুখ সারার নিয়তে যে পানি পড়া নেবে তা সেরে যাবে (এও কি সম্ভব)। এক সময় দেখা যায় শিশি বোতলে পানি পড়ার মেলা ভেঙ্গে গিয়েছে। সর্পরাজসহ নানা নামে নামের কয়েক শ্রেণীর তান্ত্রিকের আগমন ঘটেছে। তাদের অবস্থান দুইভাবে ১. জনসমাগম সড়কের ধারে ২. কোন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে। এরা ধ্যানের মতো বসে পড়েন। মনে হবে ধ্যান বা তপস্যা করছে। এ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করা সর্পরাজ ও তান্ত্রিকদের সেক্রেটারি আছে। আছে ড্রইংরুম। টেলিফোন কয়েকটা।
×