ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘আম্মু আমি সত্যিই মরতে চাইনি... কেউ কি চরিত্র সম্পর্কে বাজে কথা শুনতে চায়’

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

‘আম্মু আমি সত্যিই মরতে চাইনি... কেউ কি চরিত্র সম্পর্কে বাজে কথা শুনতে চায়’

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সহপাঠীদের মিথ্যা অপবাদে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হওয়া এক কলেজ ছাত্রী তার মায়ের কাছে লিখে গেছে তার মৃত্যুর কারণ। আত্মহত্যার ৬ দিন পর মঙ্গলবার এ বিষয়ে পাইকগাছা থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছেন নিহত উর্মির মা নাজমা বেগম। মামলার প্রস্তুতি চলছে স্বীকার করে তদন্তকারী কর্মকর্তা দারোগা স্বপন কুমার রায় মঙ্গলবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, চিঠিতে নাম লেখা সকল সহপাঠী পলাতক রয়েছে। পাইকগাছার লক্ষ্মীখোলা কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্রী ছিল উর্মি। বাবা রেজাউল ইসলামের আদরের বড় সন্তান উর্মির পিছনে লাগে একই গ্রামের সিরাজুল ইসলামের কন্যা আপন চাচাতো বোন লাকি খাতুন, হারুনের কন্যা হেনা, শিক্ষক খলিলের পুত্র রাব্বি হোসেন, রফিকের পুত্র রনি, গনির কন্যা শামছুন্নাহারসহ অনেকে । কলেজে প্রায় সময়ই উর্মির চরিত্র নিয়ে অপবাদ দিত তারা । এসব সহপাঠী দীর্ঘদিন ধরে তাকে বিভিন্নভাবে প্রকাশ্যে অপমান করে। লাকি খাতুন প্রকাশ্যে রনি নামের এক ছেলেকে উৎসাহ দেয় উর্মির সঙ্গে খারাপ কাজ করার জন্য। এভাবে উর্মিকে মিথ্যা অপবাদ নীরবে সহ্য করতে হয়। এক পর্যায়ে ৯ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়িতে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে উর্মি। মায়ের কাছে লেখা কলেজ ছাত্রীর শেষ চিঠির কিছু আংশ ....‘আম্মু তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আম্মু তুমি ভাবতে পার যে আমি মনে হয় কোনো ছেলের জন্য মরে যাচ্ছি। কিন্তু না আমি কোনো ছেলের জন্য এটা করছি না। আম্মু আমি সত্যিই মরতে চাইনি। কিন্তু কি করবো বলো। কেউ কি তার চরিত্র সম্পর্কে বাজে কথা শুনতে চায়। আম্মু তুমি জান না সেদিন কলেজে সবার সামনে লাকি, হেনা, রনি, শামছুন্নাহার এরা সবাই আমাকে বলেছে যে আমি নাকি চরিত্রহীন। ... কদিন আগে রাব্বিও আমাকে কলেজে সবার সামনে অনেক বাজে কথা বলেছে। আর সবাই তাই জানে যে আমি অনেক খারাপ হয়ে গেছি ...... আরো কত কি আম্মু। আম্মু তুমি আমাকে মাপ করে দিও। আমিও কোনোদিন ভাবিনি যে আমাকে এভাবে মরতে হবে। ভালো থেকো আম্মুৃ। আম্মু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কতটা আশা নিয়ে পাইকগাছায় পড়তে এসেছিলাম। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না। আমি তোমার আশা পূরণ করতে পারলাম না।’ মৃত্যুর পর উর্মির ডায়রির মধ্যে পাওয়া যায় মায়ের কাছে লেখা ৩ পৃষ্ঠার আত্মহত্যার কাহিনী সংবলিত চিঠিটি। উর্মির বাবা রেজাউল করিম তার মেয়ের চিরকুটে লেখা আত্মহত্যার কারণ জানিয়েছেন সাংবাদিকদের কাছে। এই চিঠি রবিবার দেয়া হয় পাইকগাছা থানায়। এ ব্যাপারে পাইকগাছা থানার উপ-পরিদর্শক স্বপন কুমার রায় জানান, পাইকগাছা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
×