ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নত প্রশিক্ষণ-অবকাঠামো দুটোই জরুরী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

উন্নত প্রশিক্ষণ-অবকাঠামো দুটোই জরুরী

জাতীয় এ্যাথলেটিক্স সময়মতোই হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের জন্য প্রস্তুতি হয়ে গেছে। এবার শুধু অনুশীলন করে দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত ওই আসরের জন্য বাংলাদেশের পুরোপুরি গুছিয়ে ওঠা। কিন্তু জাতীয় এ্যাথলেটিক্স আলোর কোন নিশানা কি দেখাল? এবারই প্রথম কোন জাতীয় এ্যাথলেটিক্স ছিল রেকর্ডবিহীন। আর এমনটা দেখে সাবেক এ্যাথলেটরাও হয়েছেন হতাশ। যে তিমিরে ছিল এ্যাথলেটিক্স সে তিমিরেই আছে। এর বড় কারণ হিসেবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে উদাসীনতাকেই বড় করে দেখছেন এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম চেঙ্গিস। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময়ে চিঠি দিয়ে এবং মৌখিকভাবে বলেও কাজ হয়নি। অবশ্য সরকার থেকে এ্যাথলেটিক্স কমপ্লেক্স গড়ার জন্য নারায়ণগঞ্জে ১২ বিঘা জমি বরাদ্দ হয়েছে। সেটা প্রক্রিয়াধীন এবং কমপ্লেক্সটি হলে এ্যাথলেটদের অনেক উন্নতি হবে বলে আশা করছেন তিনি। অর্থাৎ আপাতত কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সে কারণে আসন্ন এসএ গেমসে কোন ফেডারেশনই পদক জয়ের নিশ্চয়তা নিয়ে অবতীর্ণ হতে পারবে না বলে দাবি চেঙ্গিসের। সর্বশেষবার এসএ গেমস থেকে স্বর্ণ জিতেছিল বাংলাদেশ ২০০৬ সালে। কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সে গেমসে একমাত্র স্বর্ণটি জিতেছিলেন ১১০ মিটার হার্ডলসে নোয়াখালীর এ্যাথলেট মাহফুজুর রহমান মিঠু। এরপর আর এসএ গেমস থেকে কোন স্বর্ণপদক জেতা হয়নি বাংলাদেশী কোন এ্যাথলেটের। আর এ্যাথলেটিক্সে বাংলাদেশের যে বিন্দুমাত্র উন্নতি ঘটেনি সেটার প্রমাণ এবারের ৩৯তম জাতীয় এ্যাথলেটিক্স আসর। নতুন করে কোন রেকর্ড হয়নি এবং বেশ কিছু ইভেন্টের সেরারা আগের সেরা নৈপুণ্যের ধারেকাছেও যেতে পারেননি। এ কারণে প্রতিযোগিতা দেখতে আসা সাবেক এ্যাথলেটরাও হতাশার সুরে বলেছেন, ‘এতদিনে কী উন্নতি হলো? আমরাই ভাল ছিলাম। আন্তর্জাতিক কোন প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জেতার মতো কাউকে তো চোখে পড়ল না।’ হ্যাঁ অবস্থাটা এমনই করুণ। কোন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়নি এ্যাথলেটিক্সে। আগের সেই করুণ চিত্রটাই এখনও আছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে কয়েক কোটি টাকায় গড়া এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকটির অবস্থা একেবারেই করুণ। ট্র্যাকের ভেতরে খানখন্দের উপস্থিতি। এখানে দৌড়ে এ্যাথলেটদের উল্টো ইনজুরিতে পড়ারও যথেষ্ট শঙ্কা আছে। এমনকি এখানে এ্যাথলেটদের জন্য কোন রেস্ট রুম, ওয়ার্ম আপ জোন এসব কিছুই নেই। এমনকি এখনও সেই প্রাগৈতিহাসিককালের হ্যান্ড টাইমিংয়ে হয় প্রতিযোগিতার ফলাফল। যদিও ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তির সবই আছে। তবে সেসব চালু করার প্রতি কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। পড়ে থাকতে থাকতে প্রায় অকেজো হওয়ার পথে দামী এসব যন্ত্র। তাই এসএ গেমসের আগে উন্নত অনুশীলনেরও সুযোগ নেই। বাংলাদেশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো অনেক এগিয়ে গেছে। তাদের ধরার মতো পরিস্থিতি নেই অবকাঠামোগত এসব সমস্যার কারণে। এ বিষয়ে এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চেঙ্গিস বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে চিঠি দিতে দিতে এবং মৌখিকভাবে অনেকবার বলার পরেও তারা এজন্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক প্রায় অচল হয়ে গেছে। জর্জরিত এ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকটাই শুধু আছে, কিন্তু এ্যাথলেটদের সুবিধার জন্য যা প্রয়োজন সেসব ফ্যাসিলিটিজ নেই।’ হ্যান্ড টাইমিংয়ের যেটা বড় সমস্যা সেটাই অনেক ক্ষতিকর যে কোন এ্যাথলেটের জন্য। কারণ এবারও দেশের দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ বিশ্ব এ্যাথলেটিক্সে সম্প্রতি অংশ নিয়ে টাইমিং করেছিলেন ১১.১৩ সেকেন্ড। কিন্তু হ্যান্ড টাইমিংয়ে এবার সেটা দেখিয়েছে ১০.৬০! দ্রততম মানবী শিরিন আক্তার এই পুরনো যুগের টাইমিং সিস্টেমে নিয়েছেন ১২.২০ সেকেন্ড। জাতীয় আসরে এত ভাল টাইমিং নিয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক কোন আসরে এ কারণে সমস্যার মুখে পড়তে হয় বাংলাদেশী এ্যাথলেটদের। এসএ গেমসে একসময় গৌরবময় কিছু অর্জন ছিল বাংলাদেশের। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে শাহ আলম দু’বার এবং বিমল চন্দ্র তরফদার স্বর্ণ জিতেছিলেন। ২০০ মিটারে মাহবুব স্বর্ণ জিতেছিলেন। মাহবুব আর শাহ আলম দু’জনই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর সেই মানের আর কোন স্প্রিন্টার পায়নি বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক টাইমিংয়ে মিলি সেকেন্ড পর্যন্ত হিসেব সূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করা যায়। এই মুহূর্তে বিশ্বের কোথাও আর হ্যান্ড টাইমিংয়ের ব্যবহার আছে বলে জানা যায়নি। অন্তত দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেই নেই। যে কোন গেমসের অন্যতম আকর্ষণ এ্যাথলেটিক্স ও সাঁতার। সাঁতারের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকলেও এ্যাথলেটদের উন্নয়নে তেমন কোন কমপ্লেক্স নেই। আর অব্যবস্থাপনা এবং হ্যান্ড টাইমিং ছাড়াও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে এ দুটিতেই বাংলাদেশের লেজেগোবরে অবস্থা। তবে নারায়ণগঞ্জে এ্যাথলেটিক্স কমপ্লেক্স গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেটা শেষ হলে হয়ত উন্নতির ছোঁয়া লাগবে এ্যাথলেটিক্সে। কিন্তু সেটা আসন্ন এসএ গেমসের আগে তো নয়ই, কবে শেষ হবে তাও অনিশ্চিত। সে কারণে এসএ গেমসে সাফল্যের আশা একেবারেই ক্ষীণ। এ বিষয়ে চেঙ্গিস বলেন, ‘আগের মতো এখন কোন ফেডারেশন নেই যারা এসএ গেমস থেকে পদক জেতা সম্ভব এমন নিশ্চয়তা দিতে পারবে। প্রতিপক্ষরা যেভাবে এগিয়েছে সে তুলনায় আমরা পিছিয়েছি। আশা করতে হলে, কিছু পেতে হলে এ্যাথলেটদেরও কিছু দিতে হবে। এ্যাথলেটদের উন্নত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নেই। তবে এ্যাথলেটিক্স কমপ্লেক্স করার জন্য সরকারের কাছে জমি চাওয়া হয়েছিল সেটা পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জে ১২ বিঘা জমির ওপর সেটা প্রক্রিয়াধীন। প্রক্রিয়াটা শুরু হওয়াতে আমি খুশি। এটা হলে এ্যাথলেটিক্সে উন্নতির ছোঁয়া লাগবে। কারণ তাদের পর্যাপ্ত পরিচর্যার উপায় ও সুযোগ থাকবে।’
×