ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সবচেয়ে ভোগান্তি যানজটে ;###;বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ;###;কমলাপুরে কালোবাজারিদের উৎপাত

যাত্রী নিরাপত্তায় নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও ঘরমুখো মানুষের দুশ্চিন্তা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

যাত্রী নিরাপত্তায় নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও ঘরমুখো মানুষের দুশ্চিন্তা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় শেষ পর্যন্ত নিরাপদে ঘরে ফেরা হবে তো! এ নিয়ে ঘরমুখো মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ঈদ উপলক্ষে সরকারী ব্যবস্থাপনা পর্যাপ্ত। এরই ধারাবাহিকতায় নৌ-সড়ক ও রেলপথে যাত্রী পরিবহনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। কিন্তু উৎসবের তিনদিন আগে সবই যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকারী সিদ্ধান্তের অনেকই মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হয় না। ঘরমুখো মানুষের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় যানজটের কারণে। গণপরিবহনে আদায় করা হয় বাড়তি ভাড়া। লক্কড়-ঝক্কড় ও নিষিদ্ধ পরিবহন চলে মহাসড়কে। পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী পরিবহন করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা নিয়ন্ত্রণের কেউ থাকে না। আইন না মানার প্রবণতা তো নতুন করে বলার নেই। সেই সঙ্গে ভাঙ্গাচোরা রাস্তার বিষয়টি তো আছেই। দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর প্রস্তুতি চোখে পড়ে না। এবারের ঈদে জনদুর্ভোগের ক্ষেত্রে নতুন করে যোগ হতে পারে পশুবাহী ট্রাক। রাজধানীতে প্রবেশ ও বহির্গমনের ১৩টি রাস্তা সচল রাখার চ্যালেঞ্জ তো রয়েই গেছে। তবে কঠোরভাবে সব নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হয়ত ভোগান্তি কমও হতে পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। যাত্রী নিরাপত্তায় যত উদ্যোগ ॥ ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারী স্ব-স্ব সংস্থার কাছে সিদ্ধান্তসমূহ আনুষ্ঠানিক পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে দেশের সকল সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে চিঠি দিয়ে রাস্তা সংস্কারের তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে যাত্রীদের বাড়ি ফেরা নির্বিঘœ করতে রাজধানীর প্রধান ৪টি বাস টার্মিনালে থাকছে ভিজিলেন্স টিম। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী-মালামাল বহন, যাত্রী হয়রানি রোধে কাজ করবেন এ টিমের সদস্যরা। বিআরটিএ, ডিএমপি, সিটি কর্পোরেশন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এ টিমে থাকছেন। টার্মিনালগুলোতে ব্যানার ঘেরা একটি নির্দিষ্ট কক্ষ থেকে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এছাড়া ঈদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সারাদেশে ২৫টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। দুই বিভাগে এসব টিম কাজ করবে। ঢাকা প্রবেশ ও বহির্গমনের জন্য দুটি বিকল্প সড়কও চালু হয়েছে। এর একটি- হাতিরঝিল-রামপুরা-শেখের জায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা-সুলতানা কামাল সেতু। অপরটি মিরপুর বাজার-ধৌউর-বিরুলিয়া-আশুলিয়া। ছোট ছোট যানবাহনের মালিকদের বিকল্প এ সড়ক দুটি ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া ২২-২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ দিন এলেনবাড়িতে বিআরটিএর’র সদর দফতরে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর-০২-৯১৩০৬৬২ ও মোবাইল- ০১৯৬৬৬২২০১৯। আগামী ২২ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর মোট ৯ দিন সিএনজি স্টেশনগুলো সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঈদের আগে ও পরের দিনদিন মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান, লরিসহ ট্রাক চলবে না। তবে চামড়া, জ্বালানি, ওষুধসহ নিত্যপণ্য এর আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কের সকল টোল প্লাজা সার্বক্ষণিক খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সড়ক বিভাগের সকল ফেরি সার্বক্ষণিক খোলা রাখার নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে। যানজট রোধে চন্দ্রায় ১৭ সেপ্টেম্বর বাইলাইন উদ্বোধন ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে দুর্ঘটনা রোধে নিউজার্সি ব্যারিয়ার উদ্বোধন করা হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার পরিবহন ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থকে। তবে প্রতি বছরের মতো এবারও যাত্রী নিরাপত্তায় যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা কতটুকু কার্যকর হবে তাই এখন দেখার বিষয়। বিশেষ করে ঈদের অন্তত তিনদিন আগে থেকে ঘরমুখো মানুষের চাপে সবকিছুই যেন পাল্টে যায়। কোন কিছুর ওপর কারো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এদিকে এবারের ঈদেও রাস্তার কারণে দেশের সড়ক-মহাসড়কের কোথাও যানজট হবে না বলে দাবি করেছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কতটুকু স্বস্তি দেবে রাস্তা ॥ ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে এবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সবচেয়ে ভাল। এরপর ঢাকা-সিলেট। ঢাকা-চট্টগ্রামের চার লেনের মহাসড়কের ১৪৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ। কিছু অংশ ভাঙ্গাচোরা। কিছু অংশে কাজ বাকি রয়েছে। এছাড়া ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক হলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই মহাসড়কটিকে রোজার ঈদেও যানজটের কারণে যাত্রী ভোগান্তি চরমে উঠেছিল। ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কেও যানজট ছিল বেশ। এবারও যানজট নিরসনে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি পশুবাহী ট্রাক আসে। এরপর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। এক্ষেত্রে এবার যানজটের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে এ দুটি মহাসড়ক। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ পরিবহন চলাচল বন্ধ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি, পর্যাপ্ত রেকারের ব্যবস্থা, যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো বন্ধ করতে পারলে জনদুর্ভোগ কম হবে। বিশেষ করে ঢাকার ১৩টি প্রবেশ মুখ ও বের হওয়ার পয়েন্ট নিরাপদ রাখতে পারলে দুর্ভোগ আরও কমবে। যানজটের বিষফোঁড়া হিসেবে খ্যাত চন্দ্রাকে বিশেষ নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জনকণ্ঠ’কে বলেন, ঈদের সময় মহাসড়কে লরি, ট্যাঙ্কসহ পণ্যবাহী পণ্য চলতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত মানার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, অনেক সময় পিকআপসহ পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী পরিবহন হয়। এই সমস্যা সমাধানে এবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার টার্মিনালের অনুমতি নিয়ে এসব পরিবহন চলতে হবে। অনেক সময় যাত্রীরা নিজেরাই পাড়া মহল্লায় পণ্যবাহী পরিবহন ভাড়া করে বাড়ি ফিরে। যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, টাঙ্গাইল রোডে যানজট রোধে চন্দ্রা এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার বাইপাসের উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। এর ফলে এবারের ঈদে এই রুটের যাত্রীরা শান্তিতে হয়ত বাড়ি ফিরতে পারবেন। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) হিসাব বলছে, দেশের প্রধান সড়কের অন্তত ৩ হাজার ১০০ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা। ফলে এবার ঈদ-উল-আযহার সময় ঘরে ফেরা লোকজনকে দুর্ভোগে পড়তে হতে পারে। তবে এসব সড়ক মেরামতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় স্বাভাবিক বরাদ্দের বাইরে বাড়তি ২০০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সম্প্রতি। সম্প্রতি সওজের মাঠপর্যায়ের কার্যালয়গুলো থেকে বন্যা ও বর্ষণের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন তৈরি করে তা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ভোলা এলাকার কিছু সড়ক এতই নাজুক যে তা চাষের জমি, নাকি সড়ক, তা আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সওজ সূত্র জানায়, সারাদেশে সওজের বিভাগ আছে ৬৫টি। এর আওতাধীন মহাসড়ক-সড়ক পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ১৯ হাজার কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা রোড; বাকি সড়ক কাঁচা বা ইটের। সওজের মাঠপর্যায় থেকে পাঠানো প্রতিবেদন অনুসারে ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক খুবই বেহাল। কমলাপুরে কালোবাজারিদের উৎপাত ॥ ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির প্রথম দিনে কমলাপুরে রেল স্টেশনের লাইনে তাদের দেখা গেছে। দ্বিতীয় দিন সোমবার ফের সেই পরিচিত মুখ! আবারো ট্রেনের টিকেট সংগ্রহের চেষ্টা। সিসিটিভিতে এমন ফুটেজ দেখে শুরু হয় রেল পুলিশের তৎপরতা। সবশেষে সন্দেহ আর ফুটেজের ছবি দেখে র‌্যাবের সহযোগিতায় আটক করা হয় ছয় জনকে। তাদের মধ্যে তিনজনই টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এই তিনজনের কাছ থেকে ১৭টি টিকেট উদ্ধার করেন। টিকেট কালোবাজারি ঠেকাতে কমলাপুর রেল স্টেশনজুড়ে বুধবার দিনভর এ রকম অভিযান চলে। কারণ রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক নিজেই টিকেট কালোবাজারি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রেলের টিকেট প্রতিবছরই কালোবাজারিদের হাতে চলে যায়। এমন বদনাম তো রেল বিভাগের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রয়েছেই। তাই টিকেট কালোবাজারি ঠেকাতে কমলাপুর, বিমানবন্দর, চট্টগ্রামসহ সিলেট রেল স্টেশনে চলছে চিরুনি অভিযান। তবুও যাত্রীদের অভিযোগ আছেই। তারা বলছেন, দ্রুত অগ্রিম টিকেট শেষ হয়ে যাচ্ছে। চেয়ার অথবা এসি কোচের টিকেট এমনটি সিøপিং টিকেটের হাহাকার চলছে রীতিমতো। বেশিরভাগ যাত্রী শোভন চেয়ারের টিকেট নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা জানিয়েছেন। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তবে রেল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সবারই লক্ষ্য ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করা। কমলাপুর থেকে প্রতিদিন আন্তঃনগর ট্রেনের ১৪ হাজারের কিছু বেশি টিকেট বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে চাহিদা আছে অন্তত ২০ গুণ। সঙ্গত কারণেই টিকেট নিয়ে নানা অভিযোগ থাকবেই। তবে টিকেট থাকা সাপেক্ষে কাউন্টার থেকে কেউই খালি হাতে না ফেরার কথা জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী। কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, বুধবার সকালে মো. আবু শাহজাহান (৬৩), আল আমিন (৩২) ও সুমন আহমেদ নাসির (৩০) নামের এ তিনজনকে স্টেশন থেকে আটক করা হয়। তাদের কাছে ১৭টি টিকেট পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। মজিদ জানান, নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় নজর রাখা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ ও গতিবিধি দেখেই কালোবাজারিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী মামলা করা হবে বলে জানান ওসি। তবে রেলওয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, সন্দেহজনক চলাফেরা ও ভিডিও ফুটেজ দেখে ছয় জনকে আটক করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তিনজন দোষী প্রমাণিত হয়নি। তাই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের কাছে টিকেট পাওয়া গেছে। কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সবকিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তা খতিয়ে দেখছি। বুথ ও সারি কম হওয়ায় টিকেট কিনতে ভোগান্তি বেশি হচ্ছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে স্টেশনে স্থান সঙ্কুলান করতে পারলে বুথের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সবার টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের কাছে টিকেট থাকলে যারা আসবেন কেউই খালি হাতে ফেরত যাবেন না। আমাদের লক্ষ্য যাত্রীদের সেবা দেয়া। টিকেট না দিয়ে সেবা দেয়া সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। স্ব-স্ব ট্রেনের যাত্রার দিন স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রির কথাও জানান স্টেশন ম্যানেজার। মধ্যরাত থেকে মানুষের ভিড় ॥ দ্বিতীয় দিনের টিকেট নিতে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই স্টেশনজুড়ে মানুষের ভিড়। তবে বেলা একটার মধ্যে অধিকাংশ ট্রেনের টিকেট বিক্রি হয়ে যায়। রংপুরের টিকেট কিনতে আসা রহমান মিয়া জানান, তিনি সকাল ৮টায় এসে ১০টার দিকে টিকেট পেয়েছেন। লালমনিহাটের টিকেট নিতে আসা যাত্রী পল্লব জানান, তিনি ও চার বন্ধু মিলে লাইনে দাঁড়িয়েছেন আগেরদিন রাত ১২টার পর পরই। তাস খেলা, ভিডিও গেম, গল্প গুজব আর গানে কেটেছে রাত। এরপর কাউন্টার খোলার অপেক্ষা। সকাল নয়টায় কাউন্টার খোলার পর পরই সাড়ে নয়টার মধ্যে তারা প্রত্যেকেই টিকেট পান। যারাই টিকেট পেয়েছেন সবাই হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন। ফেলেছেন স্বস্তির নিশ্বাস। প্রত্যেকেই হয়ত মনে মনে বলেছেন, যাক বাড়ি যাওয়া তো নিশ্চিত হলো। তবে নারীদের লাইনে ভিড় দেখা যায় তুলনামূলক বেশি। রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক জানান, আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২২ সেপ্টেম্বরের, ১৮ সেপ্টেম্বর ২৩ সেপ্টেম্বরের, ১৯ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৪ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকেট। প্রতি বছরের মতো এবারও অনলাইনে ২৫ ভাগ টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা থাকছে। ৫ ভাগ থাকছে রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য। আরও পাঁচ ভাগ বরাদ্দ ভিআইপি কোটায়। এর বাইরে ৬৫ ভাগ টিকেট কাউন্টার থেকে সরাসরি বিক্রি হবে। একইভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া যাবে ফিরতি টিকেট। এদিন বিক্রি হবে ২৭ সেপ্টেম্বরের টিকেট। ২৪ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৮ সেপ্টেম্বরের, ২৫ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৯ সেপ্টেম্বরের, ২৬ সেপ্টেম্বর ৩০ সেপ্টেম্বরের টিকেট এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ১ অক্টোবরের টিকেট। মন্ত্রী জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি টিকেট কিনতে পারবেন। ঈদের সময় বিক্রি টিকেট ফেরত দেয়া হবে না বলে মন্ত্রী জানান। মুজিবুল হক বলেন, বর্তমানে রেলের মোট ৮৮৬টি কোচ রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ১৩৮টি কোচ ঈদের আগেই ট্রেনের বহরে যুক্ত হবে। তিনি জানান, ১৯৯টি ইঞ্জিন চালু রয়েছে; ঈদ সামনে রেখে মেরামতকৃত আরো ২৫টি বহরে যুক্ত হবে। মন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন সারাদেশে এক লাখ ৮০ হাজার টিকেট ইস্যু করা হয়। ঈদ মৌসুমে অতিরিক্ত চাপ মোকাবেলায় প্রতিদিন সব ট্রেন মিলিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টিকেট বিক্রি করা হবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলবে। এই ট্রেনগুলো ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা-খুলনা, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে ঈদের আগে তিন দিন এবং ঈদের পরে সাতদিন চলবে। এছাড়া ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-শোলাকিয়া রুটে ঈদের দিন দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
×