ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাঙ্গেরির সীমান্ত বন্ধের পদক্ষেপ অভিবাসীদের ঠেলে দিচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার দিকে

মাইনভরা পথে শরণার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মাইনভরা পথে শরণার্থীরা

হাঙ্গেরি তার সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় পশ্চিম ইউরোপে যেতে মরিয়া শরণার্থীরা এখনও স্থলমাইনে ভরা এমন ভূখ-ের মধ্য দিয়ে পথ পাড়ি দিতে বাধ্য হতে পারে। স্থানীয় ত্রাণকর্মীরা এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এদিকে, অভিবাসীভর্তি প্রথম বাসটি ইইউ সদস্য ক্রোয়েশিয়াসংলগ্ন সার্বিয়ার সীমান্তের দিকে বুধবার রওনা দেয়। শরণার্থীরা হাঙ্গেরির তৈরি করা কাঁটাতারের বেড়া এড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে ইইউ’র এক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। খবর টেলিগ্রাফ ও এএফপির। হাঙ্গেরি মঙ্গলবার তার সীমান্ত এলাকায় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে সীমান্তপথ বন্ধ করে দিলে জাতিসংঘ ও হাঙ্গেরির দক্ষিণ দিকের প্রতিবেশী সার্বিয়া এ পদক্ষেপের প্রতি তীব্র নিন্দা জানায়। কোন কোন শরণার্থী বেড়ার মধ্যে গর্ত খুঁজে বের করে তা দিয়ে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করে। অন্যরা ক্রোয়েশিয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার নতুন পথ খুঁজতে থাকে এবং এতে ১৯৯০-এর দশকে বলকান যুদ্ধের সময় পুঁতে রাখা মাইনগুলোর আঘাতে লোকজন হতাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। হাঙ্গেরীয় সীমান্ত বিশেষভাবে মাইন পোঁতা। সেখানে ভয় রয়েছে যে, অভিবাসীরা সীমান্ত ক্রসিং এড়ানোর জন্য খোলা গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় সহজেই অজানা ভূখ-ে নিজেদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারে বিশেষত যদি তারা সতর্কতার চিহ্নগুলো বুঝতে অক্ষম হয়। প্রায় ৬৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকা এখনও অনিরাপদ বলে বিবেচিত হয় এবং ওই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অন্তত ৫০০ লোকের মৃত্যু ঘটেছে। দক্ষিণ হাঙ্গেরির স্বেচ্ছাসেবী সংঘ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ ফর পিসের সমন্বয়ক ড্যানিয়েল সজ্যাটমারি বলেন, এটিই খুবই বিপজ্জনক। সেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি মাইন রয়েছে, কিন্তু তারা এ সম্পর্কে জানে না। এ সংঘটি অভিবাসীদের খাদ্য ও পানীয় দিয়ে থাকে। অভিবাসী দুর্বল অর্থনীতির কারণে ক্রোয়েশিয়াকে বহুলাংশে এড়িয়ে যায়। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া হাঙ্গেরিতে ফিরে আসা বা সেøাভেনিয়ার মধ্য দিয়ে অস্ট্রিয়া ও জার্মানি যাওয়ার সহজ পথ প্রদান করে। হাঙ্গেরির কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের পদক্ষেপ কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা একে ১৯৫১ সালের রিফিউজি কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে। সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, হাঙ্গেরির অবস্থান ভীতিজনক এবং এটি অভিবাসীদের চোরাচালানিদের হাতে পড়ার সুযোগ করে দেবে। হাঙ্গেরি অবৈধভাবে সীমান্ত লঙ্ঘনের দায়ে তিন বছরের কারাদ-ের বিধান করে আইন তৈরির পরদিন মঙ্গলবার ৩৬৭ জনেরও বেশি বেআইনীভাবে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করে। তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার পুলিশ এ কথা জানায়। তারা জানায়, সার্বিয়াসংলগ্ন সীমান্তে হাঙ্গেরির নির্মিত কাঁটাতারের বেড়ার ক্ষতিসাধনের জন্য ৩১৬ জনের এবং দেশটিতে অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য অন্য ৫১ জনের বিচার করা হবে। সোমবার রেকর্ডসংখ্যক ৯ হাজার ৩৮০ জন হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করে এবং তাদের বেশিরভাগই জার্মানিতে যেতে চায়। বার্লিনে মেরকেল ও তাঁর অস্ট্রিয়ান প্রতিপক্ষ ওয়েনার ফ্যামান ওই বিশৃঙ্খলা দূর করতে ইউরোপীয়দের সংহতির আহ্বান জানান এবং আগামী সপ্তাহে ইইউ’র এক বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন। মেরকেল সময় ফুরিয়ে আসছে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান। ইইউ’র পূর্বাঞ্চলীয় সদস্যরা সংস্থার নির্দেশিত কোটামতো শরণার্থীদের গ্রহণ করতে সরাসরি অস্বীকার করায় এ বিবাদ আরও তিক্ত রূপ নিয়েছে। তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তে আবার কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন। এর আগে চলতি মাসেই এ পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি অভিবাসী জার্মানি পৌঁছায়। পরে ইইউ কর্মকর্তারা ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠক হবে বলে ঘোষণা করেন।
×