ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুন্সীগঞ্জে ৮৪ ক্ষুদে ব্যবসায়ীর মাথায় হাত

সরকারী জমি দখল

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সরকারী জমি দখল

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ শ্রীনগর উপজেলার কুকুটিয়া বাজারের ৮৪টি সরকারী দোকান জোর করে দখল নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী। তার এ কাজে অংশীদার হিসেবে রয়েছে স্থানীয় আরেকটি মহল। এতে ওই বাজারের ৮৪ ক্ষুদে ব্যবসায়ী পথে বসতে শুরু করছে। তাদের মধ্যে এখন হা-হুতাশ শুরু হয়েছে। বরাদ্দের ওই জায়গাটুকু চলে গেলে কি করে সংসার চালাবেন এ নিয়ে ওই ৮৪ ব্যবসায়ী এখন আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। কুকুটিয়া বাজারের ওই দোকান ভিটিগুলো সরকারের পেরিফেরি ম্যাপভুক্ত খাস সম্পত্তি। এগুলো ওই বাজারের ৮৪ ব্যবসায়ী সরকারের নিয়ম নীতি মেনে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে বরাদ্দ নেয়। বরাদ্দপ্রাপ্তরা সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করে শুকনো মৌসুমে দোকান-পাট বসালেও বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে তা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এ সুযোগে সরকারের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ওই জমিতে ড্রেজার দিয়ে মাটি ভড়াট শুরু করেছেন এই নেতা। বাজার থেকে ১শ’ গজ দূরে অবস্থিত ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, তিনি নিজে সরজমিনে গিয়ে দু’বার মাটি ভড়াট করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তারা নিষেধ মানছে না। বিষয়টি উপজেলা ভূমি অফিসকে জানানো হয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হাবিবুর রহমান জানান, ভরাটকৃত জমি কুকুটিয়া বাজারের পেরিফেরি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। যা সরকারের ১নং খাস খতিয়ানে ৫৬১ দাগে বাজার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাজারের ওই জায়গা সরকারের নিয়মনীতি মেনে মোতালেব শেখ, শহিদুল ইসলাম, নিজাম ঢালী, শেখ আসালত, বাবুল হোসেন, কাউসার হোসেন, মোঃ সেলিম, আঃ মান্নান খান, আক্তার হোসেনসহ ৮৪ জন ব্যবসায়ীকে বরাদ্দ দেয়া হয়। বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মান্নান শেখ বলেন, তিনি ওই বাজারে প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করেছেন। বাজারের জায়গা হওয়ায় এ বাজারের অনেক ব্যবসায়ী সরকারের কাছ থেকে ভিটি বরাদ্দ নিয়েছেন। এখন ক্ষমতা দেখিয়ে অন্যায়ভাবে ভূমিদস্যুরা তা গ্রাস করে নিচ্ছে। কুকুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বাবুল চৌধুরী, ইউনুছ মেম্বারও একই কথা বলেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা গোলাম সারোয়ার মামুন বলেন, আমি ওই জায়গার সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। জায়গাটি আমার ফুপাত ভাই মনির হোসেন মোল্লা ভরাট করছে। এটি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস বলছে এটি সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ও কুকুটিয়া বাজারের পেরিফেরি ম্যাপভুক্ত জায়গাÑ এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জায়গাটি নিয়ে মুন্সীগঞ্জ আদালতে মনিরের একটি মামলা চলমান আছে। কিন্তু মামলা শেষ না হওয়ার পূর্বে মাটি ফেলে জায়গা ভরাট করা কি আইনসম্মত হচ্ছে? এরকম প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। এই কাজের সহযোগী শাহজাহান চিশতী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে আমার নামেও প্লট বরাদ্দ রয়েছে। আমি নই বরং গোলাম সারোয়ার মামুনই ওই জায়গাটি ভরাট করছে বলে অভিযোগ করেন। তবে আমরা চাচ্ছি এটিকে দীর্ঘ মেয়াদী লিজ নেয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিলরুবা ফেরদৌসী বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। আমি এখন অন্য একটি উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এটি শেষ করেই আমি কুকুটিয়া গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বগুড়ার গ্রামে গোরস্তান দখলের চেষ্টা স্টাফ রিপার্টার, বগুড়া থেকে জানান, শিবগঞ্জের ফেনী গ্রামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি এলাকার পুরানো গোরস্তান দখলের পাঁয়তারা করছে। ইতোমধ্যে কবরস্থানের ওপর খড়ের পালা ও নির্মাণ সামগ্রী ফেলা হয়েছে। গ্রামের লোক প্রতিবাদমুখর হয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে নালিশ করেছে। তারা এখন রাত জেগে গোরস্তান পাহারা দিচ্ছে। ফেনী গ্রামটি আটমূল ইউনিয়নের মধ্যে। গ্রামে প্রায় একশ’ শতাংশ ভূমির ওপর ঈদগাহ ও গোরস্তান আছে। আশপাশের গ্রামের মানুষ বংশপরম্পরায় প্রায় দুইশ’ বছরের পুরানো এই গোরস্তানে মৃত ব্যক্তিদের দাফন করে। ঈদগাহের পাশেই আছে একজন কামেল পীরের মাজার। নিত্য বছর সেখানে উরশ অনুষ্ঠিত হয়। এলাকার এক ব্যক্তি নিজেকে ওই জায়গার মালিক দাবি করে ওই ভূমি দখলে উঠেপড়ে লেগেছে। লোকজন জানায়, শামসুজ্জোহা তালুকদার (জোহা তালুকদার নামে অধিক পরিচিত) নামের ওই ব্যক্তি এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। দিন কয়েক আগে তিনি লাঠিয়াল নিয়ে গোরস্তানের মাটি কেটে দখল করতে গেলে গ্রামবাসীর বাধার মুখে ফিরে যায়। গ্রাম্য সালিশে গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে জোহা তালুকদার দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। রাতের মধ্যেই সেখানে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে ও খড়ের পালা তুলে দখলের প্রস্তুতি নেয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে জানালে তদন্তের জন্য একটি টিম পাঠান। তদন্ত টিমও পুরানো গোরস্তান দেখে রিপোর্ট দেয়। তারপরও জোহা তালুকদার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে দখলের পাঁয়তারা করায় এলাকাবাসী রাত জেগে পালাক্রমে গোরস্তান পাহারা দিচ্ছে। গ্রামবাসীর পক্ষে শাজাহান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, পুরানো গোরস্তান রক্ষায় তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। রবিবার তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভূমিমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেবে।
×