ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ কোরবানি সামনে রেখে বেসরকারী পর্যায়ে মজুদকৃত ছয় লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে ট্রাক সেলে পেঁয়াজ বিক্রির পরিমাণ বাড়াবে টিসিবি। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে সরকার। বলা হচ্ছে, কোন সঙ্কট নেই, সাধারণ ভোক্তারা পেঁয়াজ পাবেন। নিত্যপণ্যের বাজারে জাত ও মানভেদে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭৫ টাকায়। আর সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এই পণ্যটি বিক্রি করছে ৫০ টাকায়। দাম কম হওয়ার কারণে টিসিবির পেঁয়াজের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। টিসিবির ট্রাক আসামাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টায় শেষ হয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজ। এ কারণে সংস্থাটি তাদের বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, প্রতি মাসে গড়ে দুই লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে দেশে। তবে রমজান মাস ও কোরবানি ঈদের সময় পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। মসলাজাতীয় এই পণ্যটির সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কোরবানির সময়। এই সময় অতিরিক্ত দুই লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ে। সম্প্রতি ভারতের রফতাানি মূল্য বৃদ্ধি এবং বৃষ্টি ও বন্যায় উৎপাদনে ধস হওয়ায় এ দেশে এই পণ্যটির দাম দ্রুত বেড়ে যায়। মিয়ারমার, চীন, পাকিস্তান, মিসর এবং তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও দাম তেমন কমেনি। এই বাস্তবতায় টিসিবি ৫০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। কিন্তু তাতেও কমছে না দাম। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের দাম না বেড়ে কমে আসছে এটাই স্বস্তি। তবে কোরবানি সামনে রেখে দাম আরও কমবে। খুচরা বাজারেও যাতে ৫০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হতে পারে সেজন্য বেসরকারী পর্যায়ে মজুদকৃত ছয় লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি টিসিবি বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেবে। এসব কারণে দাম আর না বেড়ে বরং কমবে। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশীয় পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে আমদানি হচ্ছে। তাই পেঁয়াজের কোন সঙ্কট দেশে নেই। এদিকে, রাজধানীর ২৪টি পয়েন্টে সাধারণ মানুষ লাইন দিয়ে ট্রাক থেকে টিসিবির পণ্য কিনছেন। এখানে সবার দৃষ্টি পেঁয়াজের দিকে। যেসব লোক লাইনে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করেন না তাঁরাও ভিড় করছেন টিসিবির পেঁয়াজের জন্য। বর্তমানে সারাদেশে ১৭৩ স্থানে খোলা ট্রাকে পেঁয়াজ ছাড়াও চিনি, সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনি ৩৭ এবং সয়াবিন তেল ৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতা একসঙ্গে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি এবং ১০ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে ১০টি ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ৫টি এবং বাকি জেলা সদরে দুটি করে খোলা ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীতে বিক্রির জন্য ট্রাকপ্রতি প্রথম ২৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত থাকলেও তা বাড়িয়ে ৩০০ কেজি করা হয়েছে। এছাড়া চাহিদা বেশি এমন সব বাজারে ৩৫০ কেজি করে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কোরবানির আগে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। এ প্রসঙ্গে টিসিবির তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জনকণ্ঠকে বলেন, শুরু থেকেই পেঁয়াজ বিক্রি বাড়ানো হয়েছে। প্রথমে ২৫০ কেজির সিদ্ধান্ত থাকলেও এখন প্রতিটি ট্রাকে বিক্রির জন্য ৩০০-৩৫০ কেজি দেয়া হচ্ছে। কোরবানির সময় এটা আরও বাড়ানো হতে পারে। তিনি বলেন, দাম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত টিসিবি তার বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। এদিকে, কোরবানি সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও মসলার দাম বেড়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম তুলনামূলক কম থাকলেও কোরবানি ঈদ সামনে রেখে আমদানিকারকরা মসলার দাম বাড়াচ্ছেন। কালিজিরা-এলাচসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার দাম ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। গত এক মাসের ব্যবধানে প্রায় দেড়গুণ দাম বেড়েছে এলাচের। ভালমানের এলাচ এক মাস আগে ছিল কেজি এক হাজার ৩২০ টাকা এখন তা এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দারুচিনি কেজি ২৬০-২৮০, জিরা কেজি ৩১০-৩৫০, লবঙ্গ কেজি ১১৫০-১২২০, সাদা গোলমরিচ কেজি ১৫৬০-১৬২০, কালো গোলমরিচ কেজি ১০২০, ধনিয়া কেজি ১২০, আলুবোখারা কেজি ৩৯০, কিশমিশ ২৮০-৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মসলার দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাপ্তানবাজারের জামশেদ স্টোরের ম্যানেজার আবদুল গনি মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানিপর্যায়ে মসলার দাম বেড়েছে। এ কারণে খুচরাপর্যায়ে দাম বেশি দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তিনি বলেন, কোরবানির সময় মসলার বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এ কারণেও দাম বেড়ে যেতে পারে।
×