ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলার নাট্যশালায় দিনভর রঙ্গমাতন সোলায়মান মেলা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শিল্পকলার নাট্যশালায় দিনভর রঙ্গমাতন সোলায়মান মেলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অদ্ভুত সুন্দর এক আয়োজন। কেমন যেন একটা ক্ষ্যাপাটে ভাব চোখে পড়ে। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা আঙ্গিনার সিঁড়ির বাঁ পাশের প্রশস্ত আঙিনা থেকে ভেসে এলো নাটকের সংলাপ। সেখানে ক্রুশের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে দুই নারীকে। তাদের ঘিরে তলোয়ার হাতে উল্লম্ফন করছে দুই ধর্মান্ধ জঙ্গী। আর খোলা জায়গায় চারপাশ থেকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে দর্শক উপভোগ করছেন ব্লগার হত্যা, পেট্রোলবোমায় মানুষ পোড়ানোসহ সমকালীন বিষয়কে উপীজব্য করে গড়া নাটকটি। থিয়েটার আর্ট ইউনিট পরিবেশিত নাটকটির শিরোনাম ছিল খাচ্ছি দাচ্ছি দাড়ি কামাচ্ছি...। নাটকের কিছুটা অবলোকনের পর সিঁড়ি পেরিয়ে নাট্যশালার বারান্দায় উঠতেই চোখে পড়ে খড়ের তৈরি রক্তাক্ত মুখের বিশালদেহী এক দানব। বেঁধে রাখা দানবটির দুই হাতে ঝুলে আছে একদল শিশু। আর ওই দানবটার বাঁ পাশেই চলছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশিত রায়বেশে নৃত্য। সেখানেও দেখা মিলল অজস্র উৎসুক দর্শক। শুক্রবার শরতের বিকেল এভাবেই যেন মেতে উঠেছিল নাট্যশালার আঙ্গিনা। আর এমন বর্ণিল ও অভিনব আয়োজনের উপলক্ষ ছিল বহুমুখী নাট্যপ্রতিভা এস এম সোলায়মান। ছুটির দিনে দিনভর স্মরণ করা হলো রঙ্গমঞ্চ মাতানো বরেণ্য এই প্রয়াত নাট্যজনকে। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত দশটা অবধি অনুষ্ঠিত হলো রঙ্গমাতন সোলায়মান মেলা। আটটি নাট্যদলের অংশগ্রহণে নানা আয়োজনে এই নাট্যব্যক্তিত্বকে জানানো হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। ক্ষ্যাপা পাগলা নামে অভিহিত দেশের থিয়েটার আন্দোলনের অন্যতম এই সংগঠককে নিবেদিত দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করে নাট্যসংগঠন প্রাচ্যনাট। নাট্যশালা আঙ্গিনার বারান্দা, ভেতরের প্যাভিলিয়ন ও মিলনায়তনজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় মেলা। প্রতিটি নাট্যদলের বরাদ্দ ছিল পৃথক পৃথক পরিসর। সেসব স্থানে মেলায় অংশ নেয়া আটটি নাট্যদল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দিনের বিভিন্ন সময়ে উপস্থাপন করে তাদের নিজস্ব পরিবেশনা। নাট্যশালা মিলনায়তনে দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় উন্মুক্ত বৈঠক। বৈঠকের বিষয় ছিল ‘চোখ বুজে থাকুন : বাইরে প্রলয় ঘটছে’। বৈঠকের মূল আলোচক ছিলেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। সন্ধ্যা ৬টায় বহিরাঙ্গনে অংশগ্রহণকারী আট দলের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় এস এম সোলায়মান রচিত এই দেশে এই বেশে নাটকের অংশবিশেষ। সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার আর্ট ইউনিট প্রযোজিত এবং এস এম সোলায়মান রচিত ও নির্দেশিত নাটক কোর্ট মার্শাল। নাট্য প্রদর্শনী শেষের আয়োজনটি দারুণ বর্ণিল। মেলায় অংশ নেয়া সবগুলো নাট্যদলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় অগ্নিচক্র-নৃত্য । মেলায় অংশগ্রহণকারী আটটি নাট্যদল হলো প্রাচ্যনাট, আরণ্যক, উদীচী, থিয়েটার আর্ট ইউনিট, বটতলা, মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়, তীরন্দাজ রেপার্টরী নাট্যদল ও বাতিঘর। দলগুলোর পরিবেশনায় উপস্থাপিত বৈচিত্র্যময় বিষয়। এছাড়া অংশগ্রহণকারী দলগুলোর স্টলে উপস্থাপন করা হয় নাট্যবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়। আগুনের জবানবন্দী শীর্ষক নাট্যাংশ পরিবেশন করে আরণ্যক নাট্যদল। মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়ের কোলাজ কোরিওগ্রাফির পরিবেশনাটির শিরোনাম ছিল ভিন্ন আয়োজনে মহাকাল। না শিরোনামের প্রযোজনা উপস্থাপন করে বটতলা। বাতিঘর নাট্যদলের পরিবেশনার শিরোনাম ছিল অন্ধ হলেই কি প্রলয় বন্ধ থাকে!!!। তীরন্দাজ উপস্থাপন করে কর্তৃত্ব গ্রহণ করো নারী শীর্ষক প্রযোজনা। প্রাচ্যনাটের পরিবেশনার শিরোনাম ছিল ২+২ = ৫!। প্রসঙ্গত, নাটককে ঘিরেই অনেকগুলো পরিচয় ধারণ করেছিলেন এস এম সোলায়মান। অভিনয়টা ছিল তাঁর সহজাত। সেই সঙ্গে নাটকের নির্দেশনা ও রচনায় রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। নাটকের সূত্র ধরেই কখনো গান গেয়েছেন কখনো বা গীত লিখেছেন। বহুমাত্রিক চরিত্রের এই মানুষটি যেন নাটকে এনেছিলেন নবপ্রাণ। সঙ্গীত ও কোরিওগ্রাফির সফল প্রয়োগে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নবনাট্যধারায় নির্মাণ করেন নতুন আঙ্গিক। হীরক জয়ন্তীতে ভালবসায় সিক্ত ইমদাদুল হক মিলন ॥ গত ৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনের জন্মদিন। এ উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের সুধীজনের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত হন এ লেখক। ‘ইমদাদুল হক মিলন হীরক জয়ন্তী উৎসব’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইমদাদুল হক মিলন হীরক জয়ন্তী উদযাপন পর্ষদ। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বসে এ মিলনমেলা। তাতে ইমদাদুল হক মিলনকে শুভেচ্ছা জানাতে জড়ো হন নানা অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। জড়ো হন এ লেখকের ভক্ত-অনুরাগী ও সুহৃদরা। শ্রদ্ধা ও ফুলেল ভালবাসা তাঁরা অভিনন্দন জানান এ লেখককে। এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যক রশীদ হায়দার, সেলিনা হোসেন, কবি আসাদ চৌধুরী, কালি ও কলম আবুল হাসনাত, কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদ, কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কবি কামাল চৌধুরী, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হয়ে উপস্থিত ছিলেন ইমদাদুল হক মিলন। অনুষ্ঠানে ইমদাদুল হক মিলনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে রয়েছে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ শিশুসাহিত্যিক ফোরাম, নদী পরিব্রাজক, বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র, চাঁদেও হাঁট, শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ ইত্যাদি। এ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রবীণ সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী, শিল্পী হাশেম খান, অভিনেতা নাদের চৌধুরী, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ প্রমুখ। সবার শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছায় আপ্লুত ও অভিভূত হন ইমদাদুল হক মিলন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, লেখার টেবিল আমার কাছে প্রার্থনার মতো। ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন সকালে আমি সেখানে বসি। সেটা আমার ভালবাসা ও প্রার্থনার জায়গা। যত ঝড়Ñঝাপটা যাক, আমি প্রতিদিন এ ভালবাসার নেশায় লেখার টেবিলে বসি, লেখার চেষ্টা করি। লিখে যে এত মানুষের ভালবাসা পাব তা ভাবিনি। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, জীবনকে অন্তরঙ্গভাবে অনুভব করেছেন মিলন। জীবনের মানে এর উত্থান-পতন গঠন পুরোপুরি তার লেখায় স্থান পেয়েছে। এ কারণেই তার লেখা এত প্রিয়। দেবারতি গোস্বামীর মনোমুগ্ধকর ওড়িশি নৃত্য ॥ মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির অনবদ্য প্রকাশে ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করলেন কলকাতার নৃত্যশিল্পী দেবারতি গোস্বামী। একক নৃত্যের সঙ্গে ছিল দলীয় পরিবেশনা। শুক্রবার শরত সন্ধ্যায় কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে এই নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করে ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি)। দ্রোহ উল্লাসে অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ॥ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। এই বীরকন্যার ৮৩তম আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শুক্রবার বিকেলে। কথা, গান ও কবিতায় সাজানো অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল দ্রোহ উল্লাসে অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা। সেগুন বাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সূর্য সেন সঙ্ঘ। প্রদীপ প্রজ্ব¡লনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াংকা আচার্য্য। প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধের নাটক নিয়ে শাহ ওয়ালিদ আকরাম নির্মিত তথ্যচিত্র।
×