ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষক কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি আজ ও কাল

পে-স্কেল ইস্যুতে আজ মাঠে নামছেন সরকারী কলেজ শিক্ষকরা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পে-স্কেল ইস্যুতে আজ মাঠে নামছেন সরকারী কলেজ শিক্ষকরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পে-স্কেল ইস্যুতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের পাশাপাশি বৃহত্তর কর্মসূচী নিয়ে আজ মাঠে নামছেন দেশের সরকারী কলেজ, শিক্ষা বোর্ডসহ ও সংশ্লিষ্ট দফতরের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। দাবি আদায়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মকর্তরা আজ ও আগামীকাল পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিলের প্রতিবাদ ও অধ্যাপকদের বিদ্যমান বৈষম্যমূলক বেতন স্কেল আপগ্রেডেশনের দাবিতে সারাদেশের ৩০৫ সরকারী কলেজে কর্মবিরতি পালন করা হবে। জানা গেছে, দাবি আদায়ে আসন্ন ঈদের পর সরকারী কলেজে লাগাতার ধর্মঘটের মতো কর্মসূচী পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষকরা। এদিকে শিক্ষক আন্দোলনের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ ও আগামীকালের সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে। পরীক্ষার নতুন তারিখও ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, পে-স্কেলে বৈষম্যের চিত্র দেখে ইতোমধ্যেই এক দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন সারাদেশের সরকারী কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে চলছে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি। দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে সমিতির নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন পে-স্কেলে টাকা বাড়লেও মর্যাদার দিক দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন তারা। সিলেকশন গ্রেড বাতিল করার মধ্য দিয়ে সরকারী কলেজ শিক্ষকদের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, তা কোন অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। সিলেকশন গ্রেড না থাকায় অধ্যাপকরা চতুর্থ গ্রেড থেকে অবসরে যাবেন, এতে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা উচ্চ পদগুলোতে আসবেন, এটা বৈষম্যমূলক। এ সমস্যা সমাধান না করলে তারা দীর্ঘমেয়াদী কঠোর কর্মসূচীর দিকে যাবেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা। শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলছিলেন, ২৭০টি সরকারী কলেজ, তিনটি আলিয়া মাদ্রসা, ১৪টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ও ১৬টি কমার্শিয়াল কলেজে এ কর্মবিরতি চলবে। তিনি বলেন, বর্তমানে কলেজের অধ্যাপকেরা (সর্বোচ্চ পদ) চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা। সিলেকশন গ্রেড থাকায় এতদিন আংশিক অধ্যাপক গ্রেড-৩-এ যেতে পারতেন। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়ায় এখন এই পথ বন্ধ হয়ে গেল। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা গ্রেড-৫ থেকে পদোন্নতি পেয়ে সরাসরি গ্রেড-৩ এ উন্নীত হন। অথচ শিক্ষকদের বেলায় গ্রেড-৫ থেকে পদোন্নতি হওয়ার পর গ্রেড-৪ এ উন্নীত করা হয়। এই বৈষম্য নিরসনেরও দাবি করে আসছেন তারা। কিন্তু সেটা নিরসন না করে উল্টো সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় শিক্ষকেরা আরও বৈষম্যের শিকার হবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ২৭২টি সরকারী কলেজ, ১৪টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি), ১৬টি সরকারী কমার্শিয়াল কলেজ ও চারটি সরকারী মাদ্রাসা-ই-আলিয়া রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ আছে ১৫ হাজার ২৪৬টি। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ ৬৩৪টি, সহযোগী অধ্যাপক দুই হাজার ৪০৩টি, সহকারী অধ্যাপক চার হাজার ২১৪টি ও প্রভাষকের পদ সাত হাজার ৯৯৫টি। পে-স্কেলে প্রভাষকরা বেতন পাবেন নবম গ্রেডে, সহকারী অধ্যাপকরা সপ্তম গ্রেডে, সহযোগী অধ্যাপকরা পঞ্চম গ্রেডে এবং অধ্যাপকরা চতুর্থ গ্রেডে। তবে মোট অধ্যাপকের অর্ধেকের সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বেতন পান তৃতীয় গ্রেডে। যেহেতু এখন আর সিলেকশন গ্রেড থাকবে না সেহেতু বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের সেখানে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। আর এমন বৈষম্যের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। জানা যায়, সরকারী কলেজের প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় লাগে। এরপর সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হতে লাগে আরও তিন বছর। আর সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক হতে সময় লাগে আরও দুই বছর। মোট ১০ বছরে অধ্যাপক হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় সময় লাগে ১৮ থেকে ২২ বছর। আর সিলেকশন গ্রেড পেতে সময় লাগে আরও কয়েক বছর। শিক্ষকরা জানান, অষ্টম বেতন স্কেলে তাদের বেতনের টাকা বাড়লেও পদের দিক দিয়ে অবনমন হচ্ছে। তারা মোট চারভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সিলেকশন গ্রেড না থাকায় তারা আর তৃতীয় গ্রেডে উঠতে পারবেন না। এতে ৩০ বছর চাকরি করেও তাদের চতুর্থ গ্রেডে থেকেই অবসর গ্রহণ করতে হবে। অথচ প্রশাসনের উপসচিব পদ পঞ্চম গ্রেডের। তারা পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম-সচিব হয়ে এক ধাপ ডিঙিয়ে সরাসরি তৃতীয় গ্রেডে চলে যান। এতে দুই ক্যাডারের বৈষম্য বাড়বে।
×