ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেনাকাটা ॥ ঈদের হাওয়া এখন অনলাইনে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কেনাকাটা ॥ ঈদের হাওয়া এখন অনলাইনে

অনলাইনেও এখন ঈদের খুশি। বাংলাদেশী ই-কমার্স সাইটগুলো ঈদ উপলক্ষে নিত্যনতুন পণ্যে সাজিয়েছে তাদের সম্ভার। বিক্রিবাট্টাও হচ্ছে বেশ। কেনাকাটা করতে হলে শপিংমলে যেতে হবে এ ধারণা থেকে অনেক আগেই সরে এসেছে উন্নত দেশগুলোর বাসিন্দারা। অনলাইন লেনদেন সুবিধা অপ্রতুল হওয়ায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এখনও ‘শপিংমল’ ভরসা। ১৯৯৮ সালে প্রথম বাংলাদেশী ই-কমার্স সাইট চালু হয়। এরপর ২০০০ সালের দিকে আরও কয়েকটি ই-কমার্স সাইট তৈরি হয়। তবে এসব সাইটে কেবল প্রবাসী বাংলাদেশীরা ভিনদেশী কার্ড (আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড) ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে পারতেন। তবে এ বছর থেকে স্থানীয় ব্যাংকের মাধ্যমেও কেনাকাটার সুবিধা চালু করা হয়েছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংক ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বেশকিছু ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কেনার সুবিধা পাচ্ছেন। বাংলাদেশী ব্যাংক এ্যাকাউন্টের বিপরীতে অনলাইনে পণ্য কেনার সুবিধাটি এবারের ঈদেই প্রথমবারের মতো পাচ্ছেন বাংলাদেশী গ্রাহকরা। প্রচারণা ও সচেতনতার অভাবে সেগুলো তেমন জনপ্রিয় না হলেও বেশ কয়েকটি ই-কমার্স সাইট ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। আর ঈদ উপলক্ষে তাদের পণ্য তালিকাটাও কম দীর্ঘ নয়। অনলাইনে কেনাকাটা যেভাবে করবেন প্রয়োজন ক্রেডিট কার্ড অনলাইনে কেনাকাটার জন্য প্রথম প্রয়োজনীয় জিনিস হচ্ছেÑ ক্রেডিট কার্ড। এ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেই একজন ক্রেতা তাঁর ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধ করেন এবং একজন বিক্রেতা তাঁর পণ্যের মূল্য পেয়ে থাকেন। আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় ক্রেডিট কার্ড হচ্ছেÑ ভিসা, মাস্টার কার্ড এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস। অনলাইনে কেনাকাটার জন্য পেপাল, মানিবুকার্সসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান সেবা দিয়ে থাকে। তবে যাঁদের ভিসা অথবা মাস্টার কার্ডের অনলাইন লেনদেন সুবিধাটি চালু রয়েছে, তাঁরা বাংলাদেশের সব ই-কমার্স সাইট থেকেই পণ্য কিনতে পারবেন। তবে বাংলাদেশী ব্র্যাক ব্যাংক এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহকরা বর্তমানে বেশকিছু সাইট থেকে পণ্য কেনার সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া এখন বাংলাদেশে বিকাশের সাহায্যেও ক্রয় করা যাচ্ছে। যেভাবে কাজ করে ই-কমার্স ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বর্তমানে অনেক দোকানেই পণ্য কেনার সুযোগ রয়েছে। দোকানগুলোতে থাকা পয়েন্ট অব সেলস বা পস মেশিনে কার্ড ঢোকানো হলে তা ডেটা কানেকশনের মাধ্যমে সংযুক্ত হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সার্ভারে (ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড সরবরাহকারী ব্যাংক)। বিক্রেতা তাঁর পণ্যের মূল্যের নির্দিষ্ট অঙ্ক লিখে দেন পস মেশিনে। ক্রেতার ব্যাংক হিসাব থেকে তখন বিক্রেতার ব্যাংক হিসাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট অর্থ জমা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা বা বিক্রেতার কাউকেই ব্যাংকে যেতে হয় না। ই-কমার্সের ক্ষেত্রেও প্রায় একই প্রযুক্তিতে অর্থ লেনদেন হয়। এক্ষেত্রে কোন পস মেশিন বা কার্ড উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই। ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কেনার সময় সাইটের ‘পেমেন্ট’ অপশনে নিজের ব্যাংক হিসাব (এ্যাকাউন্ট) সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে। এ তথ্য ব্যাংকের এপিআই বা এ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেসের মাধ্যমে ব্যাংকের সার্ভারে জমা হবে। পণ্যের মূল্য পৌঁছে যাবে বিক্রেতার হিসাবে। এরপর সময়মতো বিক্রেতাও ক্রেতাকে তাঁর পণ্য পৌঁছে দেবেন। ঈদে ই-কমার্স সাইটগুলোর আয়োজন এবারের ঈদে কেনাকাটার সবচেয়ে বড় সাইট বাংলাদেশ ব্র্যান্ডস ডট কম। সাইটটিতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ শীর্ষ স্থানীয় ফ্যাশন হাউসের পণ্যই কিনতে পাওয়া যায়। এখানে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, থ্রিপিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবিসহ প্রায় সবধরনের ফ্যাশন পণ্যই রয়েছে। সারাদেশে পণ্য সরবরাহের সুবিধা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ক্ষেত্রে পণ্যের ওজনের ওপর ভিত্তি করে ডেলিভারি চার্জ নেয়া হয় ৮০ থেকে ১২০ টাকা। ঢাকার বাইরে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে সুন্দরবন কুরিয়ারের সহায়তা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে ঢাকার মধ্যে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে নিজস্ব সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ছাড়াও ডাচ্-বাংলা এবং ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহকরা এ সাইট থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। ঈদ উপলক্ষে নতুন করে সাজানো হয়েছে অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স সাইট গিফটহাট ডট কম। সাইটটিতে পাওয়া যাচ্ছেÑ জামদানি, মসলিন ও সিল্কের শাড়িসহ কটনের বিভিন্ন ফ্যাশন পণ্যও। আর ঈদের জন্য প্রতিটি পণ্যে ৬৯ ডলার পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদের শাড়ি ছাড়াও উপহার হিসেবে সাইটটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল, ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও শার্ট। শিশুদের জন্যও বিভিন্ন উপহারসামগ্রী রয়েছে। বাচ্চাদের পোশাক ছাড়াও রয়েছে পুতুল, চকোলেট, কার্টুন কেক ও আইসক্রিম। সাইটটির ব্যবস্থাপক আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সাইট থেকে অনেক পণ্যের অফার রয়েছে। তবে ফুল, কেক, চকোলেট, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া এবং বিভিন্ন কম্বো গিফট সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। জারিফ ফ্যাশন নামে প্রতিষ্ঠানটির একটি নিজস্ব ফ্যাশন হাউস রয়েছে, এ ফ্যাশন হাউসের পণ্যগুলোই সাইটটির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়ে থাকে।’ কেনাকাটার জন্য আরেকটি জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট হলো গিফটমেলা ডট কম (িি.িমরভঃসবষধ.পড়স)। ঈদে এবার বিভিন্ন ধরনের কটনের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাচ্ছে এ সাইটটিতে। ঈদের শপিং ছাড়াও উপহারসামগ্রী হিসেবে এখানে রয়েছে হাজারো পণ্যের সমাহার। িি.িনধহমষধফবংযরমরভঃ.পড়স সাইট এ বছর ঈদ উপলক্ষে কটন হ্যান্ড এমব্রয়ডারি পাঞ্জাবি, কটন ব্লক প্রিন্ট এবং এমব্রয়ডারি সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না। রয়েছে ফতুয়া, শার্টসহ একাধিক উপহারের আইটেমও। সাইটটিতে ভিসা ও মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে পণ্য কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। ঈদের কাঁচাবাজারটি পর্যন্ত অনলাইনে করার সুবিধা রয়েছে এ বছর। ই-কমার্স সাইট উপহার বিডি ডট কম এবার বিভিন্ন ধরনের মাংস এবং পোলাওয়ের চাল থেকে শুরু করে বেসন-ছোলা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে এ সাইটটিতে। মুরগির ও গরুর মাংসসহ আস্ত ছাগলই কেনার সুবিধা রয়েছে সাইটটিতে। এছাড়া নান্দনিক সব ঈদ কালেকশন নিয়ে এসেছে আরফিগিফট ডট কম সাইটটি। এখানে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজসহ নানা ধরনের ফ্যাশন পণ্য কেনার সুযোগ রয়েছে। ফেসবুকে ‘বাংলাদেশী গহনার’ জুয়েলারি প্রদর্শনী বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশী গহনা’র জুয়েলারি সামগ্রীর প্রদর্শনী চলছে। ফেসবুকে বাংলাদেশী গহনার ফ্যানপেজে বাংলাদেশী ডিজাইনার্স কালেকশন, ডায়মন্ড কাট জুয়েলারি, গোল্ড প্লেটেড ইন্ডিয়ান জুয়েলারি, ব্রাইডাল সেট জুয়েলারি, পিওর সিলভার জুয়েলারি, অরিজিনাল কুন্দন জুয়েলারি, কিউবিক জারকান সেট, লকেট ও নেকলেসসহ হাজারো ডিজাইন ও আইটেমের জুয়েলারির প্রদর্শনী চলছে। ডিজাইনার সাবরিনা আক্তার টিনার নক্সায় বাহারি নক্সার জমকালো সব সেট পাওয়া যাচ্ছে এই সাইটে। আগ্রহীরা অনলাইনে বা ফোনের মাধ্যমে অর্ডার দিতে পারবেন। তিন হাজার টাকার বেশি পণ্য ক্রয় করলে রয়েছে ফ্রি হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা। ডায়মন্ডওয়ার্ল্ড থেকে গয়না কেনার সুবিধাও এখন অনলাইনে রয়েছে। যেভাবে পণ্য পাবেন ক্রেতারা অনলাইনে অর্ডার করার পর ই-কমার্স সাইট কর্তৃপক্ষই ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন। কোন কোন ই-কমার্স সাইট পণ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিবহন খরচ নিয়ে থাকে, তবে প্রধান শহরগুলোতে একেবারে বিনা খরচেই পণ্য পৌঁছে দেয়া হয়। আর দূরত্বভেদে বাসায় পণ্য পৌঁছাতে সময়ের হেরফের হতে পারে। সাধারণত ১০ থেকে ২০ ঘণ্টার মধ্যেই পণ্য বাসায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।
×