ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সামরিক সংঘাত এড়াতে একমত মার্কিন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা

সিরিয়ায় সৈন্য পাঠাবে রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সিরিয়ায় সৈন্য পাঠাবে রাশিয়া

দামেস্ক চাইলে রাশিয়া সিরিয়ায় লড়াই করতে সৈন্য পাঠানোর কথা বিবেচনা করবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের এক মুখপাত্র শুক্রবার এ কথা বলেন। ওই মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল-মোয়াল্লেমের মন্তব্যের জবাব দিচ্ছিলেন। আল মোয়াল্লেম রুশ সৈন্যরা সিরীয় বাহিনীর পাশে লড়াই করছে বলে প্রকাশিত খবরের সত্যতা অস্বীকার করেন, তবে তিনি বলেন যে, প্রয়োজন হলে সিরিয়া রুশ সাহায্যের জন্য অনুরোধ করবে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা সিরীয় সংঘাত নিয়ে শুক্রবার ৫০ মিনিট টেলিফোনে কথা বলেন। এটিই ছিল এক বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যাশটন বি কার্টার ও রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগোর মধ্যে প্রথম সরাসরি যোগাযোগ। এতে সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগই প্রতিফলিত হয়। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট, ইয়াহু নিউজ ও বিবিসির। পেসকভ বলেন, যদি সিরিয়া তার ভূখ-ে রুশ সৈন্য পাঠানোর অনুরোধ জানায়, তা হলে সেটি নিয়ে আলোচনা ও বিচার-বিবেচনা করা হবে। আল মোয়াল্লেম বৃহস্পতিবার বলেন যে, সিরিয়ার সেনাবাহিনী এখনও নিজের উদ্যোগেই লড়াই চালাতে সমর্থ এবং রাশিয়ার কাছ থেকে আরও গোলাবারুদ ও উন্নততর অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া প্রয়োজন। রাশিয়া সেগুলোর সরবরাহ ত্বরান্বিত করেছে বলে তিনি জানান। তিনি সিরীয় টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় চলমান রুশ সমরসজ্জা নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করে। এর লক্ষ্য সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শক্তি বৃদ্ধি করা বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। রাশিয়া ইসলামিক স্টেট গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এক ব্যাপকভিত্তিক কোয়ালিশন গঠনের আহ্বান জানায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বৃহস্পতিবার এ লড়াইয়ে ‘এক অংশীদার’ হিসাবে সিরীয় সরকারকে যুক্ত করতে ওয়াশিংটন ও এর মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানান। রাশিয়া ইসলামিক স্টেটকে এর নিজস্ব নিরাপত্তার প্রতি এক সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছে। কারণ বহু রুশ নাগরিক সন্ত্রাসী দলটিতে যোগ দিয়েছে। উদ্বেগের কারণ হলো এই যে, সিরিয়া ও ইরাকে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর কেউ কেউ ফিরে এসে রুশ ভূখ-ে হামলা চালাতে পারে। রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এক এসবির ডেপুটি চীফ জেনারেল সের্গেই স্মিরনভ জানান, ২,৪০০ রুশ নাগরিক ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছে বলে এখন রাশিয়ার হাতে তথ্য রয়েছে। এ সংখ্যা আগে জানানো সংখ্যার চেয়ে যথেষ্ট বেশি। স্মিরনভ তাদের সংখ্যা ১,৭০১ বলে এপ্রিলে জানিয়েছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন এফ কেরি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক আলোচনা সিরিয়ায় আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেই সম্পর্কিত বিভিন্ন উপায় স্থির করতে সহায়ক হবে। তিনি লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, স্পষ্টত ইসলামিক স্টেটকে ধ্বংস করা এবং সিরিয়ার বিষয়ে এক রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করাই যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য। আসাদকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রেখে এ সমাধান অর্জন করা যেতে পারে না বলে আমরা মনে করি। পেন্টাগনের মুখপাত্র পিটার কুক এক বিবৃতিতে বলেন, সিরিয়ায় দুটি দেশের সামরিক তৎপরতার মধ্যে যাতে সংঘাত বেধে না যায়, তা নিশ্চিত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে কার্টার ও শোইগু সম্মত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র যখন সেখানে ইসলামিক স্টেট জঙ্গীদের বিরুদ্ধে এক বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তখন সেই সংঘাত এড়ানো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক লক্ষ্য। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে কোন সরাসরি সামরিক অভিযানে দুটি দেশ সহযোগিতা করতে পারে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। হোয়াইট হাউসের এক সাবেক কর্মকর্তা জুলিয়ান স্মিথ বলেন, সিরিয়াতে আমাদের দুটি বড় কাজ রয়েছে একটি হলো এক কূটনৈতিক মীমাংসার কাজে মধ্যস্থতা করা এবং অন্যটি ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করা। উভয় কাজেই আমাদের রাশিয়ার কাছে যেতে হবে। তিনি বলেন, যত অপ্রীতিকর বোধ হোক না কেন, মার্কিন প্রশাসকের জন্য এ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কথা না বলে উপায় নেই। পালমিরায় আইএস লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা, নিহত ২৬ ॥ সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন নগরী পালমিরায় ইসলামিক স্টেটের জঙ্গীদের (আইএস) লক্ষ্য করে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে সিরীয় সরকারের যুদ্ধবিমান। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান ওবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, যুদ্ধবিমানের ২৫টি হামলায় ১২ জঙ্গীসহ অন্তত ২৬ জন লোক প্রাণ হারিয়েছে। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য পালমিরা শহরটি চলতি বছর মে মাসে দখল করে নেয় আইএস। ওবজারভেটরি আরও জানিয়েছে, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইদলিব শহরে বিমান হামলায় ১৭ জন নিহত হয়েছে। ইদলিব শহরটি একটি জিহাদী গোষ্ঠীর ঘাঁটি এবং ইসলামিক চরমপন্থী দলগুলো শহরটিকে আর্মি কনকোয়েস্ট বা সেনাবাহিনীর বিজয় হিসেবেই জানে। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার দেয়া নতুন ধরনের নির্ভল অস্ত্র ব্যবহার করছে সিরিয়া। এর আগে শুক্রবার মার্কিন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সিরীয় সঙ্কট নিয়ে প্রথবারের মতো টেলিফোনে আলোচনা করেন।
×