ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশে গরুর বাজার ধরতে চাইছে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশে গরুর বাজার ধরতে চাইছে মিয়ানমার

তৌহিদুর রহমান ॥ ভারত থেকে গরু সরবরাহ কমে আসায় বাংলাদেশের বাজার ধরতে চায় মিয়ানমার। ভারতীয় গরু প্রবেশ কমে আসার সুযোগ নিতে চাইছে প্রতিবেশী দেশটি। এই লক্ষ্যে গরুর উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মিয়ানমার। এদিকে ভারতের রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘের (আরএসএস) পর এবার মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠী মা বা থা ‘গরু হত্যা বন্ধে’ প্রচার শুরু করেছে। মিয়ানমারের একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানায়। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বাংলাদেশে গরু প্রবেশ বন্ধের ভারতীয় উদ্যোগে সরবরাহ কমেছে। বেড়েছে গরুর দাম। আর এরই সুযোগ নিতে চায় মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা। দেশটির গরু ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের গরুর বাজার ধরতে চায়। সে কারণে সীমান্ত এলাকায় গরুর উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানকার গরু ব্যবসায়ীরা কয়েকটি জেলায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে আকিয়াব, মোরাহাঙ, কিয়াকটোয়া, কিয়াকুপরু, ম্যাবোন ও পাকতোয়া। মিয়ানমারের কালাদান প্রেস নেটওয়ার্কের এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গরুর চাহিদা বেড়েছে। এ বছর বিএসএফ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় এই চাহিদা বেড়েছে। আর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই ফলে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে এখন প্রতিদিন অন্তত ৫শ’ গরু-মহিষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্যের মাধ্যমে এসব গরু বেচাকেনা হচ্ছে। সে কারণে মিয়ানমারের গরু ব্যবসায়ীরা সীমান্ত শহরে গরু চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সূত্র জানায়, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমারের বন্যার ফলে প্রায় ৫ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় প্রায় ১০ হাজার গরু-মহিষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে কয়েক হাজার গবাদিপশু মারাও যায়। বন্যার কারণে মিয়ানমারে এবার গরুর সঙ্কট রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশের গরুর বাজার ধরতে চায় দেশটির ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় গরুর চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মিয়ানমারের আয়তন অনেক বড়। সেখানে জমির কোন সমস্যা নেই। এ কারণে দেশটির সামনে এখন বাংলাদেশে গরু সরবরাহের সুযোগ এখন হাতছানি দিচ্ছে। মিয়ানমার গরু উৎপাদন বাড়ালে অর্থনৈতিক লাভ হবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা গরু উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। মিয়ানমারের উদ্যোক্তাদের সংস্থা মিয়ানমার সেন্টারের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমারে এখন এক কোটি ৪০ লাখ গরু-ছাগল রয়েছে। এছাড়া সেদেশে আরও ৩০ লাখ মহিষ রয়েছে। মিয়ানমার সেন্টার থেকে বলা হয়েছে, গবাদিপশুর উৎপাদন বাড়াতে মিয়ানমার সরকার দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। এছাড়া গবাদি পশুর উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোক্তাদের মিয়ানমারের মৎস্য ও প্রাণী ফেডারেশন থেকে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মিয়ানমারের জমি লিজ নিয়ে চাষ করার জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই প্রস্তাব দিয়েছে। মিয়ানমার এ প্রস্তাবে সাড়া দিলে সেখানে গরু চাষও করতে পারবে বাংলাদেশীরা। সেই গরু অনায়াসেই বাংলাদেশেও আনা যাবে। তবে জমি লিজের প্রস্তাবের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি মিয়ানমার। এদিকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫শ’ গরু-মহিষ বাংলাদেশে ঢুকছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে এসব গরু আসছে। এভাবে গরু-মহিষ আমদানি অব্যাহত থাকলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের কোরবানির বাজারের উল্লেখযোগ্য অংশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এবার ঈদ সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে প্রায় ২৫ হাজার গরু দেশে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা গরু কেনার জন্য সেখানে ভিড় করেছেন। শাহপরীর দ্বীপ করিডর দিয়ে জুলাই মাসে ৪২৫ গরু, ৭১০ মহিষ ও সাতটি ছাগল আমদানি হয়েছে। আগস্টে আমদানি হয়েছে এক হাজার ৯৫৪ গরু, এক হাজার ৬২ মহিষ ও ৩৮ ছাগল। এখন ঈদ সামনে রেখে সেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ গরু-মহিষ দেশে ঢুকছে। প্রতিটি গরু-মহিষের জন্য ৫০০ টাকা ও ছাগলের জন্য ২০০ টাকা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে এসব পশু আনছেন ব্যবসায়ীরা। বিজিবির তত্ত্বাবধানে শাহপরীর দ্বীপ করিডরে রাজস্ব আদায় করা হয়। এদিকে আরএসএসের পর এবার মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠী মা বা থা গরু হত্যা বন্ধে প্রচার শুরু করেছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার ইয়াঙ্গুনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা মিয়ানমার নাউ-এর এক খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধ ধর্মীয় গোষ্ঠী মা বা থা গরু হত্যা বিরোধী প্রচারণা শুরু করেছে। সংগঠনটির সদস্যরা মিয়ানমারের সরকারের প্রতি গরু হত্যা বন্ধে উদ্যোগ নিতে দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির যুক্তি বৌদ্ধ ধর্মের রীতি অনুযায়ী প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ। তবে কোরবানির ঈদে অনেক পশু জবাই করা হয়। এই পশু হত্যা বন্ধে ব্যাপকভাবে প্রচার শুরু করেছে সংগঠনটি। মিয়ানমারের ধর্ম ও বর্ণ রক্ষা সংস্থা- মা বা থার প্রায় আড়াই লাখ সদস্য রয়েছে। কট্টরপন্থী এই সংগঠনটি বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গত জুনে মিয়ানমারের এই প্রভাবশালী সংগঠনটি ইয়াঙ্গুনে এক মহাসমাবেশে নিষ্পাপ প্রাণী হিসেবে গরু হত্যা বন্ধের দাবি তোলে। এখন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পুনরায় গরু হত্যা বন্ধের দাবি তুলেছে সংগঠনটি।
×