ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মক্কায় তীব্র দাবদাহ হজযাত্রীদের হাঁসফাঁস

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মক্কায় তীব্র দাবদাহ হজযাত্রীদের হাঁসফাঁস

বাবুল হোসেন, মক্কা থেকে ॥ তীব্র খরতাপে পুড়ছে পবিত্র মক্কা নগরী। তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৪৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত। শনিবার হারাম শরীফ এলাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগে এই তাপমাত্রা ছিল ৪৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এরকম অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় এখন হাঁসফাঁস অবস্থা বাংলাদেশী হজযাত্রীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের। বাংলাদেশী হজযাত্রীরা এখন অসহনীয় তাপমাত্রায় সর্দিকাশিসহ এজমা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। যাদের আগেই শ্বাসকষ্ট ছিল তারা পড়েছেন আরও দুর্ভোগে। মক্কার হিজরা রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার হজযাত্রী চিকিৎসা নিতে আসছেন। যাদের বেশির ভাগই ঠা-াজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এর বাইরে হঠাৎ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়া, পেটের পীড়া ও পানি শূন্যতার সমস্যা নিয়েও আসছেন অনেকে। গোটা মক্কায় এখন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দাবদাহ চলছে, বইছে লু হাওয়া। তবে দিনের সূর্যের আলোর তীব্র দহন রাতে সামান্য কমলেও আছে খরতাপ প্রবাহ। বাতাসে আগুনের হল্কা। সূর্যের খরতাপ ছাড়াও বাসাবাড়ি, হোটেল ও ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের এসি এই উত্তাপ আরও বাড়াচ্ছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসাবাড়ি, হোটেল ও গাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামার পর এই তীব্র তাপে বিপাকে পড়ছেন হাজীরা। খরতাপ থেকে বাঁচতে অনেকে ছাতা ব্যবহার করছেন। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন দোকান থেকে ফলের ঠা-া জুস ও বিভিন্ন সংস্থার সরবরাহ করা বোতলজাত ঠা-া পানি খেয়ে শরীর জুড়ানোর চেষ্টা করছেন। এরকম এসির ব্যবহার ও খরতাপে চলাফেরা করতে গিয়ে সর্দিকাশিসহ ঠা-াজনিত নানা রোগ ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন বাংলাদেশী হজযাত্রীরা। মক্কায় বাংলাদেশ ক্লিনিক সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার ঠা-াজনিত সমস্যার চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন। শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার চিকিৎসা নিয়েছেন এই ক্লিনিকে। এদের মধ্যে জটিল সমস্যার ২৫৬ জনকে রেফার করা হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৩০ জন। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ খিজির হায়াত খান জনকণ্ঠকে জানান, হার্টের সমস্যা, সিভিয়ার নিউমোনিয়া, মস্তিকে রক্তক্ষরণ সমস্যার কারণে এসব হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। খেজুর ও যমযমের পানি খেলে ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ ভাল হয়ে যাবে কতিপয় হজ এজেন্সির এমন বিভ্রান্তিকর কথায় বাংলাদেশী অনেক হজযাত্রীর ক্রনিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে বাংলাদেশের প্রেসক্রিপশন না আনায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। এদিকে তীব্র খরতাপেও কিন্তু থেমে নেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাবা শরীফমুখী ঢল। লাখ লাখ হজযাত্রী তীব্র খরতাপ মাথায় নিয়ে তপ্ত রাজপথ মাড়িয়ে হারাম শরীফে জামাতে নামাজ আদায় করছেন। হারাম শরীফের বাইরে চারপাশে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় লাখ লাখ হজযাত্রী হারাম শরীফের বাইরে তপ্ত রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে জামাতে নামাজ পড়ার সময় দহনে পুড়েছেন। বাংলাদেশ থেকে আসা হজযাত্রী এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চন্নু জানান, হারাম শরীফের চারপাশে ও রাস্তায় হজের সময় সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে দিলে হজযাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমত। যদিও হারাম শরীফের চারটি প্রধান ফটকের বাইরে পানির ফোয়ারা চালু করে কৃত্রিমভাবে শীতল পানির কণা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। শীতল বাতাসের ফ্যান ও এই শীতল পানি কণা হজ মৌসুমে আরও বিস্তৃত করা গেলে কষ্ট কিছুটা কমে আসবে বলে মনে করেন অনেকে।
×