ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেলী ফুল

বিলম্বিত বর্ষায় ফুটেছে সফেদ সুগন্ধী ফুল, খোঁপা জুড়ে আছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিলম্বিত বর্ষায় ফুটেছে সফেদ সুগন্ধী ফুল, খোঁপা জুড়ে আছে

মোরসালিন মিজান ॥ স্কুলের একেবারে শুরুতে পাঁচটি ফুলের নাম শেখানো হতো। মনে পড়ে? এখনও পড়ানো হয়। শিশু শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় এখনও কমন প্রশ্নটিÑবাংলাদেশের পাঁচটি ফুলের নাম বল! হ্যাঁ, সেই পাঁচ ফুলের একটি বেলী! খুব পরিচিত ফুল। একইসঙ্গে ভীষণ প্রিয়। প্রায় সারাদেশেই দেখা যায়। মালা গাঁথার ফুলটি। মাথায় করে রাখার ফুলটি। বেলী ফুলের মালা খোঁপায় জড়িয়ে কী যে আনন্দে কাটে কিশোরীদের! তরুণীদের! বছরের বিভিন্ন সময়ে ফুলটি ফুটে। এখন এই শরতেও হাত বাড়ালে মুঠোভর্তি হয়ে যাবে বেলীতে। ফুল ফোটার মূলত সময় ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ। তবে এই সময় কালকে মুখ্য বলা যাবে না। বিলম্বিত বর্ষায় দিব্যি ফুটে আছে শ্বেতশুভ্র বেলী। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, বেলীর বৈজ্ঞানিক নাম- জেসমিনাম সামব্যাক। এটি মূলত পাহাড়ী উদ্ভিদ। হিমালয় অঞ্চলে বিশেষ চোখে পড়ে। বেলীর আদি ভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ। গুল্ম জাতীয় গাছটি ১ মিটারের মতো উঁচু হয় বলে জানান তিনি। বেলী গাছ উচ্চতায় কম। লতার মতো হালকা নরম কা-। একটির সঙ্গে অন্যটি জড়িয়ে থাকে। তখন ছোট-খাটো ঝোপঝাড়ের মতো মনে হয়। গাছের পাতা ছোট এবং গাঢ় সবুজ। ঘন পাতার মাঝে ছোট ছোট ফুল হয়। থোকা থোকা ফুলের পাপড়ি। সুবিন্যস্ত। বেলীর হাসির শুরুটা সন্ধ্যায়। এ সময় ফুলটি ফোটে। পরদিন দুপুরে ঝরে যায়। মাঝখানের সময়টুকু মিষ্টি ঘ্রাণে ভরিয়ে রাখে বেলী। ফুলের ঘ্রাণ বাতাসে ভেসে বেড়ায়। অনেক দূর থেকে নাকে এসে লাগে। সবার আগে ঘ্রাণই বলে দেয়, আশপাশের কোথাও বেলী ফোটে আছে! ঘ্রাণের পাশাপাশি দবদবে সাদা রঙের বেলী একটি পবিত্র অনুভূতির জন্ম দেয়। এ সবের বাইরে, বলা জরুরীÑ বেলী ফুল মানেই বেলী ফুলের মালা। সুঁই সুতোয় ফুলটিকে গেঁথে নিয়ে সুন্দর মালা তৈরি করা হয়। বহুকাল ধরে তৈরি হচ্ছে এ মালা। রাজধানী ঢাকার রাস্তায় ফুটপাথে এসব মালা বিক্রি করে বেড়ায় ছিন্নমূল ছেলে-মেয়েরা। প্রথমে বড়সড়ো একটি দাম হাঁকে বটে। বিক্রি করে নামমাত্র দামে। উচ্ছল তরুণীরা বেলী ফুলের মালা যতœ করে খোঁপায় পেঁচিয়ে নেন। হাতে চুরির মতো পরেন। এর পর যেদিকে তাঁরা হেঁটে যান, সেদিকেই ছড়িয়ে পরে বেলীর সুবাস। উদ্ভিদবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে সাধারণত চার জাতের বেলী হয়। এগুলোর একটি রাই বেলী। এই গাছ দেড় থেকে দু’হাত লম্বা হয়। ফুল ছোট। পাপড়ি সুসজ্জিত হয়। ঘ্রাণ তীব্র। আরেক জাত খয়ে বেলী ছোট গাছ ধরনের। প্রচুর ফুল ফোটে। এটিও সুগন্ধি খুব। এটি মূলত মালা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তৃতীয় জাত মতিয়া বেলী। এটি আকার বড় হয়। পাপড়ি সংখ্যাও বেশি। থোকায় থোকায় ফুল ধরে। আর যে জাতটি, ভরিয়া বেলী নাম। ওজন ১ ভরির মতো। বেলী ফুলের একে বলা হয় রাজা! এই রাজা এই রানীরা প্রকৃতির হাসি। এই হাসি অটুট থাকুক।
×