ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে কোরবানির পশুর সরবরাহ প্রচুর

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

রাজধানীতে কোরবানির পশুর সরবরাহ প্রচুর

রহিম শেখ ॥ সময় যতই এগিয়ে আসছে ততই বিভিন্ন জেলা থেকে সড়ক ও নৌপথে রাজধানীতে কোরবানির পশুর ট্রাক আসছে। এবার সবচেয়ে বেশি গরু, ছাগল ও মহিষ আসছে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর ও যশোর থেকে। বেশি লাভের আশায় কোরবানির পশু নিয়ে ব্যাপারীরা ছুটছেন রাজধানীতে। তাই অনেকটা আগেভাগেই হাটেও গরু ওঠাতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন ইজারাদাররা। অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে খুঁটি কিনছেন ব্যবসায়ীরা। গরুর খাবারের উপকরণসহ সবকিছুই মিলছে বাড়তি দামে। এদিকে রাজধানীর অন্য হাটগুলোর প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এর বাইরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর অবৈধ হাট বসানোর প্রস্তুতির খবর পাওয়া গেছে। শুধু রাজধানীতে অবৈধ হাটই নয়, সড়কের মাঝেই একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। শনিবার রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, এক রকম প্রতিযোগিতা নিয়েই হাটের জায়গা দখল করছেন ব্যাপারীরা। যে ব্যবসায়ী যত আগে আসতে পারবে তারা ততবেশি পছন্দনীয় জায়গায় তাদের পশুর স্থান করে নিতে পারবে, এমনটাই জানালেন ইজারাদাররা। তবে অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করছেন, গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা আদায় করা হচ্ছে খুঁটিপ্রতি। এছাড়া হাটের ব্যবসা না জমলেও গরুর খাবারের উপকরণসহ সবকিছুই মিলছে বাড়তি টাকায়। রাজধানীতে দিনের তুলনায় রাতেই বেশি ঢুকছে ট্রাকভর্তি গরু। হাটে সবচেয়ে বেশি আসছে দেশী গরু। পাশাপাশি ভারতীয় ও মিয়ানমারের গরুও আসছে গাবতলীর হাটে। রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ-উল-আযহাকে ঘিরে রাজধানীর পশুরহাটে কোরবানির পশুর আমদানি শুরু হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশ অনুযায়ী ঈদের চার দিন আগে থেকে নগরীর অস্থায়ী পশুরহাট বসার কথা রয়েছে। কিন্তু এসব হাটের ইজারাদাররা ৮-১০ দিন আগেই গরু, মহিষ রাখার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। ফলে ঈদের আগ মুহূর্তে সড়কে যানজট ও চাঁদাবাজি এড়াতে এবং দর্শনীয় স্থানে পশু রাখার জন্য ব্যাপারীরা (গরু বিক্রেতা) আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীর এসব হাটে গরু আনা শুরু করে দিয়েছেন। সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটগুলো বাঁশ দিয়ে খুঁটি গেড়ে প্রায় প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব হাটে পশু আমদানি শুরু হলেও বেচাকেনা জমতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। গাবতলী গরুর হাটের পরিচালনা পরিষদের সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, এবার আগেভাগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু আনতে শুরু করেছেন। তবে এখনও সেভাবে বিক্রি শুরু হয়নি। স্বাভাবিকভাবে গাবতলীর হাটে যেভাবে গরু বেচাকেনা হয় সেভাবে হচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ কোরবানি হিসেবে কেনাকাটা করছে। চট্টগ্রামে ১২টি পশুর বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে ॥ চট্টগ্রামে ১২টি পশু বাজারের মধ্যে ৫টি বাজার ইতোমধ্যে জমতে শুরু করেছে। এরমধ্যে শনিবার ছিল নগরীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুরহাট হিসেবে খ্যাত বিবিরহাট। দেশী গরুর পাশাপাশি এ হাটে পর্যাপ্তসংখ্যক সরবরাহ রয়েছে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসা পশু। আজ রবিবার নগরীর বৃহত্তম গরু বাজার সাগরিকা জমে উঠবে ক্রেতা সাধারণের ভিড়ে। ব্যবসায়ীরা টার্গেট করেছেন এই ঈদের প্রথম বাজার হিসেবে কমপক্ষে কয়েক হাজার পশু বিক্রির। অপরদিকে, ইজারাদাররাও সপ্তাহভিত্তিক এ সময়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের মধ্য দিয়ে পশু বিক্রির উপর হাসিল আদায়সহ পশুরহাটের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। এদিকে, পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের অর্থ নিরাপত্তায় মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জাল নোট শনাক্তকরণে এসব বাজারে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ ও শাখায় স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিনাজপুরের কোরবানির হাটে ভারতীয় গরু ॥ দিনাজপুরের কোরবানি পশুর হাট জমে উঠেছে। ভারতীয় গরু আসতে শুরু করেছে। এবার লক্ষাধিক গরু ও ছাগল কোরবানি করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোরবানিকে সামনে রেখে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৯টি পৌরসভা এলাকার হাটে কোরবানির পশুর আমদানি শুরু হয়েছে। মঠবাড়িয়ায় জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর হাট ॥ ভারত থেকে পর্যাপ্ত গরু না আসায় উপকূলীয় এলাকায় এখনও কোরবানির পশুর হাট জমে ওঠেনি। মঠবাড়িয়া পৌর শহরসহ আশপাশের হাট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতা চাহিদামতো গরু না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। ক্রেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, কোরবানির মাত্র ৪/৫ দিন বাকি থাকলেও বাজারে পর্যাপ্ত গরু না থাকায় এবং দাম বেশি হওয়ায় গরু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে ভারতীয় গরুর দাম বেশি হওয়ায় দেশীয় খামারীরা লাভের আসায় দিন গুনছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, বিএসএফের কড়াকড়ি থাকায় সাতক্ষীরা, বেনাপোল, নওয়াপাড়াসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে গরু বাংলাদেশে পর্যাপ্ত না আসায় কোরবানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে গরুর দাম এ বছর অনেক বেশি। এছাড়া গরু বাজারে নিয়ে আসতে আগের চেয়ে ট্রাকের ভাড়া দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে। পথে পথে বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত চাঁদা ও টোল দেয়ার কারণে গরুর দাম এমনিই বেড়ে যাচ্ছে।
×