ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক বৈশ্বিক ফোরামের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এবার অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক বৈশ্বিক ফোরামের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাচ্ছে  বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) প্রধান পদে নির্বাচিত হওয়ার পরে এবার অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক বৈশ্বিক ফোরাম ‘গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের’ (জিএফএমডি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেতে চলেছে বাংলাদেশ। আগামী মাসে জেনেভাভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির এক শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চেয়ারম্যান পদটি পাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়। চলতি বছর অক্টোবরে বাংলাদেশকে জিএফএমডি ফোরামের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। শীর্ষ পদে থেকে এই দায়িত্ব পালনকালে আগামী বছরের শেষদিকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় শীর্ষ সম্মেলন। এছাড়া দায়িত্ব পালনকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও অবৈধ মানবপাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে। এক্ষেত্রে দক্ষতা দেখানোরও সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। জিএফএমডি ফোরামের বর্তমান চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব পালন করছে তুরস্ক। তবে আগামী ১৪-১৬ অক্টোবরে সংস্থাটির অষ্টম সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে দেশটি। জাতিসংঘ এই সম্মেলনে সহযোগিতা দেবে। এই ফোরামের কয়েকটি এজেন্ডা জাতিসংঘের ২০১৫ সাল পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কর্মসূচীতে (এসডিজি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসডিজির এসব কর্মসূচী আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে পাস হবে। জাতিসংঘের প্রায় সব কটি সদস্য দেশ জিএফএমডির অনুসমর্থনকারী। অভিবাসন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রায় সব সংস্থা এই ফোরামের সঙ্গে কাজ করে থাকে। তবে জনশক্তি রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে সামনের সারিতে অবস্থান করছে। তাই এই সংস্থার শীর্ষ পদে থেকে বাংলাদেশ কিভাবে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পারে বা ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এগিয়ে নিতে জিএফএমডি ফোরামকে কিভাবে কাজে লাগাতে পারে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জনশক্তি রফতানিকারক দেশগুলো তাদের অভিবাসী কর্মীদের অধিকার রক্ষা ও তাদের পরিবারের উন্নয়নে কী কী সুবিধা পেতে পারে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করাই হবে ওই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য। এদিকে আগামী মাসে তুরস্কে অনুষ্ঠিতব্য জিএফএমডি শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি উপলক্ষে বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই একটি জাতীয় পর্যালোচনা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিরডাপ মিলনায়তনে এই পর্যালোচনা হয়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী যৌথভাবে এই পর্যালোচনার আয়োজন করে। এতে সহযোগিতা দেয় সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি)। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। এই পর্যালোচনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অভিবাসন’। উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হলো অভিবাসন এবং অভিবাসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে উন্নয়নের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে সকল পক্ষের মতামত নিয়ে একটি কৌশলপত্র নির্ধারণের কাজ চলছে। এই কৌশলপত্রটি তুরস্ক সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হবে। জিএফএমডির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর আগামী বছর বাংলাদেশ সংস্থাটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবে। এতে বিশ্বের প্রায় ১৮০টি দেশের ৫ শতাধিক প্রতিনিধিযোগ দেবেন বলে আশা করছে বাংলাদেশ। এখানে অভিবাসনের বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হবে। সম্মেলনের সাইড লাইনে জনশক্তি আমদানিকারক দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে সমঝোতা করার সুযোগ থাকবে। কর্মী পাঠানোর বিষয়ে বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়েও সেসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা হবে। এছাড়া ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জিএফএমডির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য রাষ্ট্র ৩০টি। সম্প্রতি জেনেভায় জিএফএমডির স্টিয়ারিং কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জিএফএমডির চেয়ারম্যান পদের জন্য বাংলাদেশকে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে জোর সমর্থন জানানো হয়। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, তিউনিশিয়া, মেক্সিকো, মরিশাস ও ফিলিপিন্স। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির চেয়ারম্যান পদ পেতে চলেছে। এর আগে গত বছর বিশ্বের সব চেয়ে বড় দুটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আইপিইউ ও সিপিএ প্রধানের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ। আইপিইউয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। আর সিপিএ’র চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
×