ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরি ও স্লোভেনিয়া আশ্রয়প্রার্থীদের ঠেলে দিচ্ছে প্রতিবেশী দেশে

শরণার্থী স্রোত অস্ট্রিয়ায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শরণার্থী স্রোত অস্ট্রিয়ায়

প্রায় ১৩ হাজার শরণার্থী ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরি ও সেøাভোিনয়া থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর শনিবার অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করেছে। ইউরোপের মতো বিভক্ত দেশগুলো অভিবাসীদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা জোরদার করে। ১৯৪৫ সালের পর মহাদেশটির সবচেয়ে বড় এ শরণার্থী সঙ্কট কিভাবে অভিবাসীদের ন্যায়সঙ্গতভাবে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভাগ করে দেয়া যায়, তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পশ্চিমাঞ্চলীয় ও পূর্বাঞ্চলীয় সদস্যদের মধ্যে গভীর বিভেদের সৃষ্টি করেছে। এ সঙ্কট ১৮ জাতি ব্লকের মধ্যে সীমান্তের বাধামুক্ত ভ্রমণের শেনজেন চুক্তির ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ানের। কয়েকটি দেশ সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। আর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় চলতি বছর এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ লোক বিপজ্জনক পথে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপে পৌঁছায়। আরইইউ জুন অবধি তিন মাসে প্রায় আড়াই লাখ আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন গ্রহণ করেছে। অস্ট্রিয়াতে কেবল শনিবারই ১৩ হাজার শরণার্থী প্রবেশ করেছে। অস্ট্রিয়ান রেডক্রসের প্রধান বার্তা সংস্থা এপিএসে এ কথা জানান। এ পরিসংখ্যানের যথার্থতা স্থানীয় পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চিত করতে পারেনি। পুলিশ এর আগে বলেছিল, তারা প্রায় ১০ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসীর আগমনের সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অস্ট্রিয়ার পুলিশ জানায়, হাঙ্গেরি অন্তত ৬ হাজার ৭শ’ লোককে সীমান্তে পাঠিয়ে দিয়েছে এবং পরে বার্গেনল্যান্ড সীমান্ত অঞ্চলে আরও লোকের পৌঁছানোর সম্ভাবনা। হাঙ্গেরির ডানপন্থী সরকার অভিবাসীদের সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষ এবং সার্বিয়া সংলগ্ন এর সীমান্ত বরাবর দ্রুত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু শুক্রবার রাতে সেই অবস্থান থেকে সরে গিয়ে হাঙ্গেরীয় কর্তৃপক্ষ অস্ট্রিয়া সংলগ্ন সীমান্তে সরাসরি হাজার হাজার অভিবাসীকে পরিবহনযোগে পাঠাতে শুরু করে। যথাশীঘ্র সম্ভব তাদের হাঙ্গেরীয় ভূখ-ের মধ্য দিয়ে এর বাইরে পাঠিয়ে দেয়া উদ্দেশ্য। বলকান অঞ্চল থেকে পশ্চিম ইউরোপ অভিমুখী জনস্রোতের মোটেই কমতি ঘটেনি। ক্রোয়েশিয়ায় বুধবার থেকে এ পর্যন্ত ২০ হাজার ৭শ’ লোক প্রবেশ করেছে বলে দেশটি জানায়। সাগরের অভিবাসীদের ক্রোয়েশিয়ার ভূখ-ের মধ্য দিয়ে অবাধে যেতে দেবে বলে প্রথমে জানিয়েছিল। পরে জাগরেব বাস ও ট্রেনযোগে শত শত শরণার্থীকে হাঙ্গেরীয় সীমান্তে পাঠাতে শুরু করে। এতে বুদাপেস্ট ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। হাঙ্গেরীয় সরকার অভিবাসীদের রেজিস্ট্রারভুক্ত না করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে ক্রোয়েশিয়াকে অভিযুক্ত করে। সরকার জানায়, সব শরণার্থীকেই উত্তর ইউরোপের দিকে যেতে দেয়ার আগে তাদের রেজিস্ট্রারভুক্ত করা হবে। কিন্তু হাঙ্গেরির মধ্য দিয়ে অস্ট্রিয়া পৌঁছেছে এমন কিছুসংখ্যক অভিবাসী বিবিসিকে জানায় যে, তাদের হাঙ্গেরিতে আদৌ রেজিস্টারভুক্ত করা হয়নি, বাসে করে দেশের ভূখ- পার করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং একটি রেলপথ হেঁটে পার হয়ে অস্ট্রিয়ায় যেতে বলা হয়েছে। হাঙ্গেরীয় সরকারের এক মুখপাত্র এটি নিশ্চিত করতে পারেনি। তিনি বলেন যে, অভিবাসীদের রেজিস্টারভুক্ত করাই নীতি, কিন্তু সেটি করতে তাদের বাধ্য করা যেতে পারে না। হাঙ্গেরি ক্রোয়েশিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের পরিবহনে করে অস্ট্রিয়ার দিকে পৌঁছে দেয়া চালিয়ে গেলেও সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। এ নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শেষ হবে। এরপর হাঙ্গেরি এর সার্বিয়ান সংলগ্ন সীমান্তে চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে প্রণীত কঠোর আইন বলবৎ করবে বলে জানায়।
×