কোরবানির ঈদ বা ঈদ-উল আজহা মুসলমানদের জন্য একটি ধর্মীয় উৎসব। পশু কোরবানির কারণে ঈদ-উল আজহা একটু বেশিই আনন্দদায়ক হয়ে থাকে।
কোরবানি সম্পর্কে যেনে নিন
কোরবানির ইতিকথা : হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পর পর তিন দিন স্বপ্ন দেখলেন, তিনি তাঁর নিজ পুত্র ইসমাইলকে (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে যবেহ করছেন। তিনি তার স্বপ্নের কথা তাঁর পুত্রকে জানালেন এবং পুত্র যোগ্য সন্তান হিসেবে উত্তর দিলেন আপনি আল্লাহর নির্দেশ পালন করুন। তখন ইব্রাহীম (আঃ) ছরি দিয়ে যবেহের জন্য প্রস্তুত হয়ে ইসমাইলকে (আঃ) মাটিতে শুয়ে দিলেন এবং তার গলায় ছুরি চালালেন। কিন্তু যবেহ হলো না। আল্লাহ ইব্রাহীমের পরীক্ষায় সফলকাম হওয়ার সুসংবাদ হিসেবে ইসমাইলের পরিবর্তে জান্নাত থেকে এক মহান পশু কোরবানির ব্যবস্থা করলেন। (সূরা সাফফাত আয়াত ১০২-১০৭.)
কোরবানির ফজিলত
কোরবানির শরীরে যত পশম থাকে, প্রত্যেকটা পশমের পরিবর্তে এক একটি নেকি পাওয়া যায়।
কোরবানির দিনে কোরবানি করাই সবচেয়ে বড় ইবাদত।
কাদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব : ১০ জিলহজ্জের ফজর থেকে ১২ জিলহজ্জের সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থাৎ কোরবানির দিনগুলোতে যার নিকট সদকা হয়। ফেতরা ওয়াজেব হওয়া পরিমাণ অর্থ। সম্পদ থাকে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। মুসাফিরের ওপর কোরবানি করা ওয়াজেব নয়। যার ওপর কোরবানি ওয়াজেব নয়, সে কোরবানির নিয়তে পশু কোরবানি করলে সেই পশু কোরবানি করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
যার ওপর কোরবানি ওয়াজেব সে কোরবানি না করলে কোরবানির দিন চলে যাওয়ার পর একটা বকরীর মূল্য ছদগা করা ওয়াজেব।
কোন কোন জন্তু কোরবানি করা যায়
বকরী, পাঁঠা, খাসি, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা, গাভী, ষাঁড়, বলদ, মহিষ, উট এই কয় প্রকার গৃহপালিত জন্তু দ্বারা কোরবানি করা যায়।
কোরবানি জন্তুর বয়স প্রসঙ্গ
বকরী, খাসি, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা কমপক্ষে ১ বছর বয়সের হতে হবে। বয়স যদি কমও হয় কিন্তু এরূপ মোটা তাজা যে ১ বছর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের থেকে ছোট মনে হয় না। তবে সেই পশু কোরবানি চলে। অন্তত ছয় মাস বয়স হতে হবে। বকরী কোন অবস্থায় এক বছরের কম হতে পারবে না।
কোরবানি জন্তুর স্বাস্থ্যগত অবস্থা প্রসঙ্গ
কোরবানির পশু ভাল এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।
লেংড়া পশু কোরবানি জায়েয নয়।
যে পশুর দাঁত নেই তার দ্বারা কোরবানি জায়েয নয়।
যে পশুর কান জনম থেকেই নেই তা জায়েয না। তবে কান ছোট হলে সমস্যা নেই।
যে পশুর শিং মূল থেকে ভেঙ্গে যায় কোরবানি জায়েয না। তবে শিং ওঠেইনি বা কিছু ভেঙ্গে গেছে এরূপ পশু জায়েয আছে।
অতিশয় কৃশকায় ও দুর্বল পশু যার এতটুকু শক্তি নেই। যে জবেহের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না, তার দ্বারা কোরবানি জায়েয নয়।
কোরবানির গোশত খাওয়া এবং বণ্টনের তরিকা
অংশীদারিগণ গোশত অনুমান করে বণ্টন করবেন না। বাটখারা দিয়ে ওজন করে বণ্টন করতে হবে। অবশ্য কোন অংশীদার পাঁয়া ইত্যাদি বিশেষ কোন অংশ না নিয়ে তার ভাগে গোশত কিছু কম হলেও তা হবে।
কোরবানির গোশত নিজে খাওয়া, পরিবারকে খাওয়ানো, আত্মীয়স্বজনকে দেয়া এবং গরিব মিসকিনকে দেয়া সবই জায়েজ। মোস্তাহাব ও উত্তর তরিকা হলো তিন ভাগে করে একভাগ নিজেদের জন্য রাখা। এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে দেয়া এবং এক ভাগ গরিব মিসকিনকে দেয়া।
কোরবানির গোশত বা বিশেষ কোন অংশ পরিশ্রমিক রূপে দেয়া জায়েজ নয়। কোরবানির গোশত বা বিশেষ কোন অংশ পরিশ্রমিক রূপে দেয়া জায়েজ নয়।
কোরবানির পশুর চামড়া সম্পর্কিত তরিকা
কোরবানির চামড়া খয়রাত করা যায়, তবে বিক্রি করলে সে পয়সা নিজে ব্যবহার করা যায় না। খয়রাত করা জরুরী এবং ঠিক ঐ পয়সাটাই খয়রাত করতে হবে।
কোরবানির চামড়ার টাকা মসজিদ, মাদ্রাসার নির্মাণ কাজে পরিশ্রমিক বাবদ খরচ করা যাবে না। খয়রাতই করতে হবে।
কোরবানির পরে যাতে পশুর রক্তে পরিবেশ দূষিত না হয় সেজন্য রক্ত, আবর্জনা মাটিতে গর্ত করে ঢেকে রাখতে হবে।
ঈদ সবার আনন্দে কাটুক।
সূত্র : আহকামে জিন্দেগী
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: