ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পাদক সমীপে

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সম্পাদক সমীপে

সড়কে লাশের মিছিল আমরা টেলিভিশন খুললেই দেখি, পত্রিকা খুললেই দেখি সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের নিথর দেহগুলো পড়ে আছে। এ হত্যাকারীদের বিচার কে করবে? একটা দুর্ঘটনা একটা পরিবারকে সারাজীবনের জন্য দুঃখের প্রদীপ ধরিয়ে দেয়। সড়ক দুর্ঘটনায় জীবনের অপচয় যেন নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থার হতশ্রী অবস্থা ও চালকদের বেপরোয়া মনোভাব অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। পথচারীদের অজ্ঞতার কারণে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারের সময়ও দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৫ জনের মৃত্যু ঘটছে। বছরে মৃত্যুর এ সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, বছরে গড়ে ১২ হাজার লোক নিহত ও ৩৫ হাজার লোক আহত হন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১২টি দেশের মধ্যে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে বাংলাদেশে নিহতের হার সর্বোচ্চ এবং এ সংখ্যা ১৬৯ জন। সড়ক দুর্ঘটনা দেশের অর্থনীতির জন্যও ডেকে আনছে সর্বনাশ। এক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির দুই শতাংশ। বাংলাদেশের ৩৪৯২ কি.মি. রাজপথ এবং ৪২৬৮ কি. মি. আঞ্চলিক পথ, মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার সড়কের অবকাঠামোগত লক্ষণীয় উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় অগণিত মানুষের মৃত্যু দেশবাসীকে শঙ্কিত করে। সড়ক দুর্ঘটনায় এদেশে প্রতিবছর চার হাজারেরও বেশি মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, মহাসড়কের ৪ শতাংশ এলাকায় শতকরা ৩৫ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার কারণে বার্ষিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৭ হাজার কোটি টাকা। শতকরা ৬৯ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য বেপরোয়া বাস ও ট্রাক চালকরা দায়ী। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করে, অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠা অদক্ষ চালকদের কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। শুধু অদক্ষ চালক দায়ী কেন? দক্ষ চালক যখন বেশি অর্থ পাওয়ার লোভে রাতের পর রাত নির্ঘুম রাত কাটিয়ে গাড়ি চালায়। তখন দক্ষতা দিয়ে কি হবে? বাংলাদেশের সড়কে অবৈধ হাট-বাজারের জন্য ২৮% সড়ক দুর্ঘটনা হয় আর রাস্তার মোড়ের জন্য হয় ১৮%। আগে বের করতে হবে। কেন, কোথায় এবং কি কারণে দুর্ঘটনা হচ্ছে? ব্ল্যাকস্পট নির্ণয় করতে হবে। প্রতিটি সড়কে নসিমন, ভটভটি, করিমন, নানা রকমের ইঞ্জিনচালিত পরিবহন দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকদের বেপরোয়া আচরণ আর ওভারটেকিং দায়ী হলেও চালকদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনার কোন ব্যবস্থা নেই। বাস-ট্রাকমালিক ও চালকদের শক্তিশালী সংগঠনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘুষের সম্পর্কের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এজন্য সংশ্লিষ্ট চালকদের শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার ঘটনা একেবারেই বিরল। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘাতক যানবাহন চালকরা পার পেয়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় যেভাবে জীবনের অপচয় ঘটছে তা দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দায়িত্বশীলতার কোন বিকল্প নেই। চালক হোক আর যাত্রী কিংবা পথচারী হোক দুর্ঘটনা রোধে সবার মধ্যে দায়িত্বশীলতা গড়ে উঠলে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর মিছিল থামিয়ে দেয়া যাবে। সাইদুর রহমান সাইদুল নান্দাইল, ময়মনসিংহ ভেজাল ঠেকান বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে অনেক এগিয়েছে। আমাদের প্রয়োজনীয় ওষুধের শতকরা ৯৫ ভাগ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের কিছু উন্নতমানের ওষুধ দেশের তৈরি মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই গৌরবের বিষয়। আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সুখবর। পর্যবেক্ষণের অভাবে বাজারে ওষুধের বদলে বিষও বিক্রি হচ্ছে দেদার। এ সব নিম্নমানের ওষুধে বাজার ইতোমধ্যেই সয়লাব যা আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরিবর্তে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। জানা গেছে, পাঁচটি কোম্পানির তৈরিকৃত প্যারাসিটামল সিরাপে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক ডাই-ইথিনল গ্লাইকল পাওয়া গেছে। এসব কোম্পানির সিরাপ খেয়ে ইতোমধ্যে বহু শিশু কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং তাদের মধ্যে ৭৬ জনের মৃত্যুও হয়েছে। খবরটি সত্যিই উদ্বেগজনক। ভেজাল ওষুধ তৈরি থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত জড়িত রাঘব বোয়ালরা। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের আইনের আওতায় আনা কঠিন। কিন্তু দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবনরক্ষা ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা অতি জরুরী। আর তার জন্য প্রয়োজন হলে আইনের সংস্কার এবং প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করা হোক। আবুল খায়ের ভূঁইয়া ঢাকা
×