ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশুগঞ্জে হচ্ছে ৪০০ মে.ও কম্বাইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট

বিদ্যুতে সহায়তা দিচ্ছে এডিবি-আইডিবি

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিদ্যুতে সহায়তা দিচ্ছে এডিবি-আইডিবি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আশুগঞ্জে তৈরি হচ্ছে ৪০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট। এটি তৈরিতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪২০ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের ২ হাজার ৩৫৮ কোটি ২৮ লাখ ২ হাজার এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির তহবিল থেকে ১৫২ কোটি ৩৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। এটি স্থাপিত হলে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি কমিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে বৃহৎ অর্থে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা কমিশনে এ বিষয়ক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ওপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভার সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের ভিত্তিতে বিদ্যুত বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের দক্ষ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এ প্রেক্ষিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, এ প্রকল্পের অনুকূলে বৈদেশিক সহায়তাপ্রাপ্তির বিষয়টি এডিবির কন্সালটেশন মিশনের তৈরিকৃত এইড মেমোরি-এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাছাড়া অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত করেছে এডিবি ও আইডিবি। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। নির্ভরযোগ্য ও স্থায়ী বিদ্যুত সরবরাহ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত করতে পারে। এ লক্ষ্যে সরকার পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্লান ২০১০ প্রণয়ন করেছে। সরকারের ভিশন এবং মিশন হলো ২০২১ সালের মধ্যে সকলের জন্য সহজলভ্য বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করা। আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন দেশের বৃহত্তম বিদ্যুতকেন্দ্র যা বিদ্যুত খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। এ কেন্দ্রটি রাজধানী ঢাকা থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি পাঁচটি তাপবিদ্যুত ইউনিট, একটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং একটি গ্যাস ইঞ্জিন প্ল্যান্টের সমন্বয়ে গঠিত। এসব বিদ্যুত ইউনিটের প্রধান জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস। ষাটের দশকে পাওয়ার স্টেশন নির্মাণ অনুমোদন হয় এবং ১৯৭০ সালে ৬৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিটের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৮৬ সালে ইউনিট-৩, ১৯৮৭ সালে ইউনিট-৪, ১৯৮৮ সালে ইউনিট-৫ স্থাপিত হয়। এরপর ১৯৮২ সালে কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাস টারবাইন-১, ১৯৮৬ সালে গ্যাস টারবাইন-২ স্থাপন করা হয় এবং ১৯৮৪ সালে স্টিম টারবাইন যুক্ত হয়। এছাড়া ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল ৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি গ্যাস ইঞ্জিন পাওয়ার প্ল্যান্ট বিদ্যুত উৎপাদন শুরু করে। বর্তমানে এ স্টেশনের উৎপাদন ক্ষমতা ৬৭১ মেগাওয়াট। ইউনিট-৩ এর পুনর্বাসন ও সংস্কারকাজ ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে, ২০১১ সালের নবেম্বর মাসে ইউনিট-৪ এর সংস্কার ও পুনর্বাসন এবং ২০০৮ সালে ইউনিট-৫ পুনর্বাসন ও সংস্কার করা হয়। ইতোমধ্যেই ইউনিট-৩ পুনর্বাসনের কাজ ১০ বছর অতিবাহিত হয়েছে এবং বর্তমানে এর জ্বালানি দক্ষতা ৩২ শতাংশ। এই ইউনিটের গড় জ্বালানি ব্যয় দৈনিক ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলা এপিএসসিএলের জন্য বরাদ্দকৃত গ্যাসের পরিমাণ দৈনিক ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ইউনিট-৩ এর স্থানে প্রতিস্থাপিত হবে। এর জন্য অতিরিক্ত কোন গ্যাসের প্রয়োজন নেই। তাছাড়া প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের জ্বালানি দক্ষতা ৫৭ শতাংশ, যা প্রাকৃতিক সম্পদের দক্ষ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করবে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ২৮৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাস টারবাইন স্থাপন, ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা স্টিম টারবাইন স্থাপন, গ্যাস টারবাইন স্টেপ-আপ ট্রান্সফরমার স্থাপন, গ্যাস ইন্সুলেটেড সুইচ গিয়ার (জিআইএস) সিস্টেম স্থাপন, ডিস্ট্রিবিউটেড কন্ট্রোল সিস্টেমের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম স্থাপন, সকল আনুষঙ্গিক পুর কাজ (পাইলিং, ফাউন্ডেশন, স্থাপনা ও ভবন নির্মাণ) এবং বিদ্যমান ৪০০ কেভি সঞ্চালন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদ্যুত সঞ্চালন। সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী পাওয়ার সেক্টর মাস্টারপ্লান ২০১০-এ ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য সরকার বেশ কয়েকটি বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের প্রেক্ষিত পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০২০ সালে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
×