ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নূর হোসেনের প্রত্যাবর্তন আটকে গেল আইনের মারপ্যাঁচে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নূর হোসেনের প্রত্যাবর্তন আটকে গেল আইনের মারপ্যাঁচে

শংকর কুমার দে ॥ চাঞ্চল্যকর নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটক বহুল আলোচিত নূর হোসেনকে ফিরিয়ে দিতে চায় ভারত। বাংলাদেশও ফিরিয়ে আনতে চায় তাকে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছেন না নূর হোসেন। আইনের মারপ্যাঁচে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কারাগারেই থাকতে চাচ্ছেন তিনি। সোমবার নূর হোসেনের পক্ষে এই প্রথমবারের মতো আদালতে কোন আইনজীবী উপস্থিত হয়ে তার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন পেছাতে চাইছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারের অনুরোধের প্রতি সাড়া দিয়ে ভারত সরকার বেআইনী অনুপ্রবেশের মামলাটি প্রত্যাহার করে ফিরিয়ে দিতে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। তবে বেআইনী অনুপ্রবেশের মামলায় পশ্চিমবঙ্গের আদালতের ওপর তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নির্ভর করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নূর হোসেনের দেশে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া পেছাতে চেয়েছেন তার আইনজীবী অনুপ ঘোষ। সোমবার উত্তর চব্বিশ পরগনার মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তার বেআইনী অনুপ্রবেশের মামলার প্রেক্ষিতে এই আবেদনের শুনানি হয়। শুনানির দিনে নূর হোসেনের আইনজীবী অনুপ ঘোষের বক্তব্য শোনে আদালত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, আদালতের পক্ষ থেকে প্রথমে মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয় আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে সরকারী আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন দে মামলাটির গুরুত্ব আদালতে ব্যাখ্যা করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী বলেন, ভারতীয় দ-বিধির ৩২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী দায়ের করা মামলার বিষয়ে আবেদন করেছে সরকার। আবেদনে সরকার বলেছে, নূর হোসেন বাংলাদেশের দাগী অপরাধী। তার নামে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস রয়েছে। বাংলাদেশে গ্রেফতার এড়াতেই তিনি ভারতে এসে বেআইনীভাবে লুকিয়েছিলেন। আদালতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী তার আবেদনে বলেন, বাংলাদেশ সরকার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নূর হোসেনকে নিজেদের দেশে ফেরত নিতে চেয়েছে। সেজন্যই সরকার অনুপ্রবেশের মামলাটি প্রত্যাহার করে নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায়। আদালতে আবেদনের কপি রাজ্য সরকারের গোপন বিভাগেও পাঠানো হয়েছে, যারা এ ধরনের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গের সংশ্লিষ্ট আদালতের ওপর। নূর হোসেন ভারতে বেআইনী অনুপ্রবেশের ঘটনায় যে অপরাধ করেছেন তার বিচার ও শাস্তি হওয়ার পরে তাকে ফেরত পাঠানো হবে নাকি বিচার চলাকালীন ভারত সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের অনুমোদনক্রমে মামলা তুলে নিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করানো যাবেÑ বিষয়টির ওপর সম্পূর্ণ ক্ষমতা আদালতের। প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর নূর হোসেন আর তার দুই সঙ্গী সেলিম ও খান সুমন কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে কৈখালী এলাকায় গ্রেফতার হয়েছিলেন গত বছরের ১৪ জুন। গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স এ্যাক্ট আইনের ১৪ ধারায় ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয় । বাগুইহাটি থানার মামলা নং ৩৩৯। এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা আদালতে। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার, প্রাইভেটকারের চালক জাহাঙ্গীর, শেখ রাসেল, জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম, ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন এবং বন্ধু লিটনসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয়জনের লাশ ও পরদিন আরেকজনের লাশ পাওয়া যায়। বহুল আলোচিত অন্যতম আসামি নূর হোসেনের অনুপস্থিতিতেই চাঞ্চল্যকর না’গঞ্জের সাত খুনের মামলার চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দেয়ায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আদালতে।
×