ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণের বোঝা আর লাশ দেশে আনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিন যুবকের পরিবার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঋণের বোঝা আর লাশ দেশে আনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিন যুবকের পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ২১ সেপ্টেম্বর ॥ ‘পরিবারের সবার জন্য ঈদের কেনাকাটা করে কয়েক দিন বাদেই আমার নাসির দেশে আইবো। কিন্তু এইড্যা কি অইল! আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেল এমনিভাবেই। মুই এহন ক্যামনে বাঁচুম। একদিকে সৌদি পাঠানোর আট লাখ টাকা ঋণ, অন্যদিকে লাশ দেশে ফেরত আনমু ক্যামনে...’ এভাবেই বিলাপ করতে করতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন সৌদি আরবে নিহত নাসিরের বাবা সিরাজ ঢালী। ২০০৭ সালে আট লাখ টাকা ঋণ করে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সৌদি আরব পাঠান ছেলেকে। নাসিরের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনদের কেউই। একই অবস্থা নিহত মামুন ও রিপনের বাড়িতেও। নিহত নাসিরের বাবা সিরাজ ঢালী জানান, জমি বিক্রি করে চার লাখ টাকা ও কয়েকটি এনজিওর মাধ্যমে আরও চার লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ছেলেকে সৌদি আরব পাঠান। ঋণের টাকা এখনও তিনি পরিশোধ করতে পারেননি। ছেলের উপার্জনের টাকা দিয়ে কোন রকম সংসার চলত। কিন্তু এখন বেঁচে থাকার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। নিহত মামুনের বাবা হারুন ফকির বলেন, কয়েকদিন বাদেই মামুনের দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু মুঠোফোনে মামুনের মৃত্যুর খবর আসার পর কোন অবস্থাতেই মনটা সামলাতে পারছি না। রিপনের চাচা আনোয়ার হোসেন বলেন, তিন বছর আগে কষ্ট করে রিপনকে সৌদি আরব পাঠিয়েছি। ঋণের বোঝা মাথায় এখনও। কিভাবে বেঁচে থাকব। সরকার সহযোগিতার হাত না বাড়ালে আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। স্থানীয় মজনু হাওলাদার জানান, আমাদের এলাকার তিন যুবক একসঙ্গে মারা যাবে এটা মেনে নিতে পারছি না। সরকারের কাছে জোর দাবি তাদের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। মাদারীপুর সদরের মোস্তফাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুদ্দুস মল্লিক জানান, নিহতদের পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আর্থিক সাহায্য দেয়া হবে এবং মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারীভাবে সহযোগিতা করা হবে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শফিউর রহমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত নয়টার দিকে সৌদি আরবের দাম্মামের উপশহর নাড়িয়ায় মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারালে ঘটনাস্থলে মাদারীপুরের তিনজন মারা যান। এ সময় গুরুতর আহত হন দু’জন। নিহতরা হলেন, মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ার ভাঙ্গার গ্রামের হারুন ফকিরের ছেলে মামুন ফকির (২৮), সিরাজ ঢালীর ছেলে নাসির ঢালী (২৫) ও কুনিয়া ইউনিয়নের খাটোপাড়া গ্রামের রিপন (৩০)।
×