ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শর্ত পূরণে মিলবে এডিবির বাজেট সহায়তা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শর্ত পূরণে মিলবে এডিবির বাজেট সহায়তা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ শর্ত পূরণেই মিলবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রায় দুই হাজার কোট টাকার (২৫ কোটি ডলার) বাজেট সহায়তা। এ ঋণ পেতে শেয়ারবাজার সংস্কারে নতুন ২৬ শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। আগামী নবেম্বর মাসে এডিবির সঙ্গে এ বিষয়ক একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বলছে, বর্তমানে চুক্তির খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে এই শর্তগুলো পূরণযোগ্য বলে মনে করছেন এডিবি ডেস্কের প্রধান ইআরডির যুগ্ম-সচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আগে থেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি। এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব বলেই এই ঋণে সম্মতি দেয়া হয়েছে। কেননা এর আগেও এ রকম নানা শর্ত পূরণ করে আমরা এডিবির কাছ থেকে ঋণ পেয়েছি। তাছাড়া এসব শর্ত পূরণ করা হলে আমাদেরও তো লাভ হয়, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ে। সূত্র জানায়, এর আগে পুঁজিবাজার উন্নয়ন কর্মসূচীতে (দ্বিতীয় পর্যায়ে) প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা (৩০ কোটি ডলার) সহায়তা দেয় এডিবি। ১৫ কোটি করে দুই দফায় ৩০ কোটি ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এজন্য পুঁজিবাজার বিষয়ক মোট ২৮টি শর্ত বাস্তবায়ন করতে হয় সরকারকে। সম্প্রতি এ কর্মসূচীর কাজ শেষ হয়েছে। বাজেট সহায়তা বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী জনকণ্ঠকে বলেছেন, বাজেট সহায়তা হলে সরকারের অর্থ ব্যবহারের স্বাধীনতা খর্ব হয় না। প্রকল্পভিত্তিক অর্থায়ন করলে ওই টাকা শুধু নির্দিষ্ট প্রকল্পেই ব্যয় করতে হবে। আর বাজেটে সহায়তা দিলে সরকার নিজের প্রয়োজন ও ইচ্ছা অনুযায়ী ঋণের টাকাটা ব্যয় করতে পারে। এটি সরকারের জন্য কাক্সিক্ষত ঋণ। সূত্র জানায়, তৃতীয় পুঁজিবাজার উন্নয়ন কর্মসূচী শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে বাজেট সহায়তার এ অর্থ পাওয়ার কথা। এজন্য পুঁজিবাজারসহ আর্থিক খাতের সংস্কারসংবলিত ২৬টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। প্রথম ধাপে চলতি অর্থবছরের মধ্যে ৮টি শর্ত পূরণ হলে ৬৫০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী ১৮টি শর্ত পূরণ হলে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ছাড় করবে এডিবি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব শর্ত পূরণ করবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এডিবির বেঁধে দেয়া শর্তের মধ্যে পুঁজিবাজার বিষয়ক আইন-কানুন সংশোধনের বেশকিছু প্রস্তাব রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোÑ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) জনবল বৃদ্ধিসহ সংস্থাটিকে আরও শক্তিশালীকরণ এবং এসইসির সব কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করা, পুঁজিবাজার কারসাজিতে জড়িতদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা এবং পুঁজিবাজারের নির্দিষ্ট আয়ের ওপর কর মওকুফ সুবিধা প্রদান। শর্তের মধ্যে আরও রয়েছে বীমা খাতের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন। আইডিআরএ’র জনবল কাঠামো ও মনিটরিং ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়া স্বাধীন ফাইন্যান্সিয়াল কাউন্সিল গঠন করার শর্ত দেয়া হয়েছে। যারা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অডিট করতে সক্ষম হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন-কানুন হালনাগাদেরও প্রস্তাব রয়েছে এডিবির শর্তে। এসব সংস্কারমূলক কাজ বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেবে এডিবি। এজন্য অতিরিক্ত সাত লাখ ডলার অনুদান সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব আবু সাঈদ ফকির এ বিষয়ে বলেন, মূলত পুঁজিবাজার উন্নয়নে কিছু কার্যক্রম নিতে বলেছে এডিবি। সেসব শর্ত পূরণে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। দুই ধাপের এ অর্থ সরকারের যে কোন খাতে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। এটি সংস্থাটির একটি ভাল ঋণ বলে জানান তিনি। এডিবি বলছে, শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট আইন-কানুন এবং প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের অভাবে কয়েকটি বড় কারসাজির ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এজন্য এডিবি খাতটিকে শক্তিশালী করতে দুই দফা ঋণ দিয়েছে। এজন্য গত পাঁচ বছরে অনেক ভাল অবস্থানে উঠে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় দফায় পুঁজিবাজার উন্নয়ন কর্মসূচীতে অর্থায়ন করছে এডিবি। সূত্র জানায়, শর্ত পূরণ না হওয়ায় পুঁজিবাজার উন্নয়ন বিষয়ক আগের ঋণটি আটকে যায়। তৎকালীন এডিবি ঢাকা কার্যালয়ের আবাসিক পরিচালক তেরেসা খো-এর সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে ইআরডির তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত ঋণটি পায় বাংলাদেশ। নতুন ঋণের শর্ত পূরণে কোন ধরনের গাফিলতি যাতে না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে ইআরডি। বাজেট সহায়তা হিসেবে মোট অর্থের মধ্যে ১০ কোটি ডলার নমনীয় ঋণ হিসাবে দেবে এডিবি। পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ২৫ বছরে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। সুদ দিতে হবে ২ শতাংশ হারে। বাকি ১৫ কোটি ডলার আসবে তুলনামূলক কঠিন শর্তের ঋণ হিসাবে। এ ঋণের বিপরীতে লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদহারের (লাইবর) সঙ্গে দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সব মিলিয়ে সুদের হার দাঁড়ায় ৩ শতাংশের বেশি। মাত্র তিন বছরের রেয়াতকালসহ ১৫ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আবার অব্যয়িত অর্থের ওপর আরও দশমিক ১৫ শতাংশ চার্জ দিতে হবে সংস্থাটিকে।
×