লন্ডনের সবচেয়ে পুরনো বণিক সংগঠন ইনস্টিটিউট অব ডিরেক্টরসের চেয়ারম্যান আয়ান ডোরমার জানিয়েছেন, এ বছর জুনে তাঁরা এক অনুষ্ঠানে কিছু বলার জন্য জুলিয়া গিলার্ডকে আমন্ত্রণ করেছিলেন। জুলিয়া অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি ২০১০ সালের জুন থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। নারী হিসেবে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কিছু খ-চিত্র জুলিয়া সেখানে তুলে ধরেন।
কিছু কিছু রাজনীতিক ও সহকর্মী জুলিয়াকে আক্রমণ করে বেশ কড়া কথা বলেছিলেন। লিবারেল দলীয় সিনেটর বিল হেফরনান তাঁকে একবার ‘সম্পূর্ণ নিষ্ফলা’ বলে অভিহিত করেছিলেন, যেহেতু জুলিয়ার কোন সন্তান নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাঁর সময়ে বিরোধী নেতা টনি এ্যাবোট তাঁকে নিয়ে একটি পোস্টার করেন, যার স্লোগান ছিল ‘ডাইনিকে ছাড়’ (ডিচ দ্য উইচ)। এই পোস্টার নিয়ে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন। পার্লামেন্টেও বিভিন্ন সময়ে বিতর্কে লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো ব্রিটেনেও বিভিন্ন সময়ে উচ্চপদে থাকা নারীরা সহকর্মী ও অন্যদের কাছ থেকে কম-বেশি তির্যক মন্তব্য হজম করেছেন। যার মূল কথা ছিল, তিনি নারী হয়ে কিভাবে এই পদে এলেন। সমালোচনা সত্ত্বেও নারী এখন এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছর জাতিসংঘে একজন নারীর মহাসচিব হওয়ার সম্ভাবনা এখন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে উজ্জ্বল।
জাতিসংঘের ৭০ বছরের ইতিহাসে এ পর্যন্ত আটজন পুরুষ ঘুরে ফিরে মহাসচিব হয়েছেন। তবে কোন নারী এখনও পর্যন্ত এই পদে আসীন হননি। যদি তাই হয় তবে তিনি যে আরেক দফা সমালোচনার মুখে পড়বেন, তা সহজেই অনুমেয়।
সমালোচকরা প্রশ্ন তুলতে পারে, জাতিসংঘ মহাসচিবের পদের গুরুত্ব এখন কমে গেছে অথবা সংস্থা হিসেবেই জাতিসংঘ তার ভূমিকা ঠিকমতো পালন করতে পারে না। সাধারণত প্রথম কোন নারী পদে আসীন হলে তিনি সহজেই অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনÑ অনেকের প্রশংসা পান, পান সমালোচনাও। আয়ান ডোরমার বলছেন, তিনি ছিলেন একটি ব্রিটিশ মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রথম নারী পরিচালক, নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রথম নারী নির্বাহী পরিচালক এবং বর্তমানে তিনি ইনস্টিটিউট অব ডিরেক্টরসের প্রথম নারী চেয়ারম্যান। কোন কোন বিশ্লেষকের মতে, একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকলে, তা ইতিবাচক ফল বয়ে আনে। এই অর্থে যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শগুলো আসে। অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের তুলনায় জাতিসংঘ বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে থাকে। তাই প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্যায়ে একজন নারীর আগমন ঘটা কোন অস্বাভাবিক ঘটনা হবে না। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই ‘শিল্পকলা, বিনোদন ও ক্রীড়াজগতের শত শত খ্যাতিমান নারীকে শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন ও নিকোল কিডম্যান দুুজন বিশ্ব সংস্থাটির নারী এ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন। অন্যদিকে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মর্যাদা সম্পন্ন বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করছেন হলিউড তারকা এ্যাঞ্জেলিনা জোলি। এভাবে নারীদের সমাজের মূলধারার সঙ্গে সংযুক্ত রাখার কাজে ভূমিকা রেখে চলেছে জাতিসংঘ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত দেশে দেশে সীমান্ত বিরোধ নিরসনে নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব পালন করেছে জাতিসংঘ। সময়ের প্রয়োজনে জাতিসংঘের অগ্রাধিকার তালিকায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। সংস্থাটি এখন রাজনৈতিক বিরোধ নিরসনের চেয়ে মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন ও শরণার্থী ইস্যুগুলোর ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তাই সংস্থাটির শীর্ষ পর্যায়ে নারী নিয়োগ দেয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ থেকেও এ বিষয়ে ইঙ্গিত মিলেছে।
মহাসচিব পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন যাঁরা
এ পর্যন্ত দুজনের নাম এসেছে। এঁরা হলেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক এবং বুলগেরিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরিনা বোকোভা। হেলেন ক্লার্ক পরপর তিনবার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাকা ছাড়াও ছয় বছর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথা অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ থেকে কেউ মহাসচিব হতে পারেন না। জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি অঞ্চল থেকে ঘুরেফিরে কাউকে এ পদে আনা হয়। সে হিসেবে ২০১৭ সালের মহাসচিব আসার কথা পূর্ব ইউরোপ থেকে। সেদিক থেকে ইরিনা বোকোভাই বেশি সম্ভাবনাময়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: