ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ৭ দফা তুলে ধরলেন ফোরাম নেতৃবৃন্দ

পে স্কেল ইস্যুতে এবার মাঠে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারও

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পে স্কেল ইস্যুতে এবার মাঠে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পে স্কেল ইস্যুতে এবার দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমেছে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সবচেয়ে বড় জোট ২৪তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ফোরাম। নতুন স্কেলে বৈষম্য সৃষ্টির প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে সরকারী কলেজে অচলাবস্থার মধ্যেই বুধবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সাক্ষাত করে সাত দফা দাবি তুলেছেন বিসিএস ফোরামের নেতৃবৃন্দ। ‘আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি’ এমন মন্তব্য করে বিসিএস ক্যাডারের সদস্যরা বৈষম্য লাঘবে শিক্ষামন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, শিক্ষা ক্যাডার এমনিতেই নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আছে। অষ্টম জাতীয় পে স্কেল যেমন আমাদের প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গেছে, তেমনি কিছু হতাশাও তৈরি করেছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে সারাদেশের সরকারী কলেজ, শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে অচলাবস্থার মধ্যেই বুধবার বেলা তিনটায় সচিবালয়ে ২৪তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ফোরামের নেতৃবৃন্দ মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ফোরামের সভাপতি এনামূল হক, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম মাসুম ছাড়াও এ সময় শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, প্রলয় দাশ, একেএম মাসুদ, দিল আফরোজ, রওশন আরা, শফিকুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান, দোলোয়ার হোসেন প্রমুখ। মন্ত্রীর সঙ্গে এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পে স্কেলকে ঘিরে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সমস্যা সমাধানে শিক্ষামন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন। ফোরামের নেতৃবৃন্দ বলেন, অষ্টম জাতীয় পে স্কেল ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপনার মাধ্যমে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন, শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী এই পে স্কেল ঘোষণা করায় যার পর নাই আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। তবে পে স্কেল যেমন আমাদের প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গেছে, তেমনি কিছু হতাশাও তৈরি করেছে। আমরা অবগত হয়েছি অষ্টম জাতীয় পে স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল ব্যবস্থাটি পূর্বের ন্যায় আর বলবৎ থাকছে না। আর এ বিষয়টি বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতো শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদেরও হতাশায় নিমজ্জিত করেছে। তারা আরও বলেন, ২৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এ কারণে যে, তারা মাত্র একদিনের জন্য সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তির এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন। কারণ সরকারী কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতি না পাওয়ার কারণে তাঁদের চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ থেকে পঞ্চম গ্রেডে আর্থিক সুবিধা হিসেবে একটি সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত হন। আর ২৪তম ব্যাচের ১০ বছর পূর্তি হয়েছে গত ১ জুলাই। সে হিসেবে গত ১ জুলাই আমাদের সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তির কথা ছিল। অথচ ২৪তম বিসিএসের প্রশাসন, পুলিশসহ কমপক্ষে আটটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই সিলেকশন গ্রেডের সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সরকারকে শিক্ষাবান্ধব সরকার অভিহিত করে সরকারী কলেজ ও সংশ্লিষ্ট দফতরের এ শিক্ষক-কর্মকর্তারা সাত দফা দাবি তুলে ধরেছেন। দাবির মধ্যে আছে- বেতন বৈষম্য নিরসনে শিক্ষা ক্যাডারের পদ ও বেতন স্কেল আপগ্রেড মাউশির মহাপরিচালকের পদকে এক নম্বর গ্রেডে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। এক নম্বর গ্রেডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নায়েমের মহাপরিচালক, এসসিটিবির চেয়ারম্যান, নয়টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, অনার্স-মাস্টার্স কলেজের অধ্যক্ষের পদকে আপগ্রেড করা। মাউশি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, নায়েম, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালক, এনসিটিবির সদস্য ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের সচিব এবং অনার্স-মাস্টার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ পদ দুই নম্বর গ্রেডে উন্নীত করা। অধ্যাপকদের পদ তিন নম্বর গ্রেড ও সহযোগী অধ্যাপকদের পদ চার নম্বর গ্রেডে উন্নীত করা। অন্যান্য ক্যাডারের ন্যায় শিক্ষা ক্যাডারের গাড়ি ক্রয়ের ঋণ ও সংরক্ষণ ভাতাসহ সমতাপূর্ণ সুবিধা নিশ্চিত করা এবং বিষয়ভিত্তিকের পরিবর্তে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতির ব্যবস্থাপকরা। শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার পর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকার শিক্ষক সমাজের মর্যাদার বিষয়টিকে সব সময়েই প্রধান্য দেয়। এখনও দিচ্ছে। শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে আমরা আন্তরিক। কিভাবে বিষয়টির সুন্দর সমাধান হয় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যেই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে আমি শিক্ষক সমাজের বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছি। অর্থমন্ত্রীও সমাধানের জন্য আন্তরিক। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি দেখবেন। শিক্ষামন্ত্রী সরকারী কলেজের শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, দেখেন আপনারা কর্মবিরতি করছেন। অথচ আমাকে একবারও বলেননি যে সমস্যা কোথায়। আমি তো শিক্ষা পরিবারের একজন কর্মী। কর্মবিরতি করছেন আমি দিনাজপুর বসে টেলিভিশনে দেখেছি। এটা কেন? আমাকে শিক্ষকরা এতদিনে বলেননি। তবু কিন্তু আমরা চাই সুন্দর সমাধান। শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান তারাও যেন বিষয়টি ভাবেন। শিক্ষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী আরও বলেন, এখন কথা হয়েছে। আপনারা সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন এটা ভাল হয়েছে। আমি কমিটির কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে পারব। এ সময় মন্ত্রী কিভাবে শিক্ষকদের এ সমস্যা সমাধান করা যায় সে বিষয় আলোকপাত করে লিখিত একটি প্রস্তাব আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের জমা দেয়ার পরামর্শ দেন। শিক্ষকরাও বিষয়টিতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষে প্রাথমিক শিক্ষকদের হতাশা ॥ কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আলমগীরের সঙ্গে আন্দোলনরত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বৈঠক। মহাপরিচালকের কার্যালয়ে এ বৈঠকে শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে অংশ নেয়া এক শিক্ষক নেতা বলেন, মূলত মহাপরিচালকের কাছে তাঁরা নিজেদের দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেছেন। মহাপরিচালক বলেছেন, দাবিগুলো তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মেসবাহ উল আলমের কাছে তুলে ধরবেন এবং এ নিয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা করবেন। পরে এ বিষয়ে তাঁদের জানানো হবে। কিন্তু মহাপরিচালকের এমন অবস্থানে আমরা আশ্বস্ত হরে পারছি না। আমরা হতাশ।
×