ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্লগার অনন্ত হত্যার ৩ আসামি ঈদে সীমান্তের ওপার গিয়ে আত্মগোপন করতে পারে- এমন তথ্যে ভারত জুড়ে বিশেষ সতর্কতা

দু’দেশের সীমান্তে হাই রেড এ্যালার্ট, গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

দু’দেশের সীমান্তে হাই রেড এ্যালার্ট, গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার

গাফফার খান চৌধুরী ॥ সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার তিন আসামিকে গ্রেফতারে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) আগাম সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সীমান্তে বেশি মানুষের যাতায়াতের সুযোগ নিয়ে দুর্ধর্ষ জঙ্গী ও ব্লগার হত্যাকারীরা সীমান্ত পথে পালিয়ে ভারতে আত্মগোপন করতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গী ও ব্লগার হত্যাকারীদের বিষয়ে ভারতজুড়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে সেদেশের সরকার। আর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দুই দেশের তরফ থেকেই টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অনন্ত হত্যার পলাতক ৩ আসামির ছবিসহ যাবতীয় তথ্য ভারতের এনআইএ এবং সেদেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ও বাংলাদেশের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম (সংঘবদ্ধ অপরাধ) বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী জনকণ্ঠকে বলেন, যে কোন অপরাধীই অপরাধ করার পর প্রথমেই পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপনের চেষ্টা করে থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে প্রথমেই ভারতের প্রসঙ্গ আসে। অপরাধীরা নানা কৌশলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আত্মগোপনের চেষ্টা করে। এজন্য বাংলাদেশের তরফ থেকে সব সময়ই যে কোন অপরাধীর বিষয়ে প্রথমেই ভারতকে অবহিত করে থাকে। যাতে অপরাধীরা পালিয়ে ভারতে আত্মগোপন করতে না পারে। যদি আত্মগোপন করেও থাকে, তাহলে তাদের যেন সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে সংশ্লিষ্ট দেশের কাছে হস্তান্তর করে। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে একটি আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। ভারতের তরফ থেকেও নানা অপরাধ ও অপরাধীর অধিকাংশ বিষয়েই প্রথমে বাংলাদেশকে অবহিত করা হয়ে থাকে। অনন্তর বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম নয়। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে স্বাভাবিক কারণেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে দুই দেশেই বৈধ-অবৈধভাবে বেশি মানুষ যাতায়াত করে। এমন সুযোগটিকে কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে থাকে মোস্টওয়ান্টেড সন্ত্রাসীরা। ব্লগার হত্যার পলাতক আসামিরা এবং দুর্ধর্ষ জঙ্গীরা সুযোগটিকে কাজে লাগাতে সীমান্তপথে পালিয়ে এক দেশের অপরাধী অন্য দেশে আত্মগোপন করতে পারে বলে বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য রয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে দুই দেশের সীমান্তে হাই রেডএলার্ট জারি ছাড়াও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ভারতজুড়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে সেদেশটির সরকার। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ব্লগার অনন্তর হত্যাকারীরা সীমান্ত পথে পালিয়ে যাতে ভারতে আত্মগোপন করতে না পারে, এজন্য ভারতের কাছে আগাম সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ঈদে আসামিরা ভারতে পালিয়ে যেতে পারে বলেও ভারতের কাছে আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। এজন্য ভারতের এনআইএ এবং সেদেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাছে ৩ আসামির ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ভারত সরকার। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সীমান্তে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের তরফ থেকে এমন সহায়তা চাওয়ার পর এবং বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির বোমা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় ভারত সরকার ভারতীয় মুজাহিদিন, বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনের সদস্য ও ব্লগার হত্যাকারীদের বিষয়ে ভারতজুড়ে বিশেষ সতকর্তা জারি করেছে। ঈদের আগে ও ঈদপরবর্তী সময়ে সীমান্তে কড়া নজরদারিসহ হাই রেডএলার্ট থাকছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ভারতে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। যদিও এখন পর্যন্ত অনন্ত হত্যার পলাতক ৩ আসামির ভারতে আত্মগোপন করার কোন তথ্য মিলেনি। বিজিবি, বিএসএফ, এনআইএ ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তরফ থেকে অনন্তর আসামিদের সীমান্তপথে পালিয়ে আত্মগোপনের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আসামিরা বাংলাদেশেই আত্মগোপনে রয়েছে বলে অনেকটা নিশ্চিত দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে আসামিরা সিলেট সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছে। আসামিরা মাঝে মধ্যেই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আত্মগোপনের চেষ্টাও করে যাচ্ছে বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। তাদের গ্রেফতারে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী জনকণ্ঠকে বলেন, অনন্ত হত্যায় গ্রেফতারকৃত আবুল খায়েরকে টিএফআই (টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন-যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ) সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আবুল খায়ের ছাড়াও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকেও ব্লগার হত্যায় গ্রেফতারকৃতদের অনেককেই টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকেও বিশেষ তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য মোতাবেক আসামিদের গ্রেফতারে দেশ-বিদেশে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ আগস্ট র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অর্থায়ক তৌহিদুর রহমান, জসিমউদ্দিন রাহমানীর সহযোগী সাদেক আলী মিঠু ওরফে সাদিক ও জঙ্গী সংগঠনটির সদস্যদের বিদেশ পালাতে সহায়তাকারী সংগঠনের সক্রিয়কর্মী পাসপোর্ট দালাল আমিনুল মল্লিক এবং মোহাইমিনুল ইসলামকে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া গত ১০ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা কারাবন্দি মুফতি জসীমুদ্দীন রাহমানীর ছোট ভাই জঙ্গী সংগঠনটির বর্তমান প্রধান মোঃ আবুল বাশার, প্রচার শাখার জুলহাস বিশ্বাস ও জাফরান আল হাসানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া অনন্ত হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়া মান্নান রাহীর সঙ্গে ফেসবুকে কথোপকথনকারী অভিজিত রায় হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি শফিউর রহমান ফারাবীকে প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
×