ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবের আনন্দ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

উৎসবের আনন্দ

পরিবার-পরিজনের সঙ্গে একত্রিত হয়ে উৎসব আনন্দের যেসব উপলক্ষ আছে দুই ঈদ তারই মধ্যে হচ্ছে অন্যতম। এরপর রয়েছে পয়লা বৈশাখ, দুর্গা পুজো, বড়দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমাসহ নানা উৎসব। বাঙালীর উৎসব বৈচিত্র্যে ভরা এ কথা সর্বজনবিদিত। এসবকে কেন্দ্র করেই হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতি শুধু গড়ে ওঠেনি, হয়েছে সমৃদ্ধও। নানা সংস্কৃতির অনুষঙ্গের ধারাগুলো একত্রিত হয়ে মিলেছে এক মোহনায়। আর সেই মোহনা হচ্ছে আজকের বাঙালী সংস্কৃতি। মূলত বাঙালীর প্রাণের আবেগ-অনুভূতির এক বড় সম্মিলন এ সংস্কৃতি। তাই প্রত্যেকটি উৎসব হয়ে ওঠে সর্বজনীন। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবার উৎসবে সবাই যেভাবে আনন্দ ভাগ করে নেয় তাতে জয় হয় অসাম্প্রদায়িক চেতনার। গীত হয় মানুষের জয়গান। প্রায় প্রতিটি উৎসবে বাঙালীর আনন্দের বহির্প্রকাশ ঘটে নিজস্ব সংস্কৃতির অনুষঙ্গের মাধ্যমে। গ্রামপ্রধান দেশ হওয়ায় গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সাংস্কৃতিক উপকরণই প্রাধান্য পায়। এরই ধারায় আয়োজন করা হয় নৌকাবাইচের মতো হাজার বছরের পুরনো নদীভিত্তিক এক চিত্ত ও স্নায়ু দোলানো খেলা। হা-ডু-ডু, দাড়িয়াবান্ধার পাশাপাশি ফুটবলও দেয় অনাবিল আনন্দ। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্রিকেটও। দিনে দিনে ক্রিকেট গ্রামে-গঞ্জে নির্মল আনন্দের উপকরণ হয়ে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে। এসব খেলাধুলার মধ্য দিয়ে সবাই আনন্দে শামিল হয়ে ভালবাসার বন্ধন করে তোলে দৃঢ়। উৎসবাদিতে সবচেয়ে বেশি আনন্দের খোরাক যোগায় যাত্রাপালা, জারি, বাউল ও কবিগানের আয়োজন। কোন কোন পাড়া-মহল্লায় অল্প-বিস্তর নাটকও মঞ্চস্থ হয় সৌখিন আয়োজকদের মাধ্যমে। সমভূমির পাশাপাশি পাহাড়ী জনপদেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানাদিতে হৃদয় ভরে ওঠে। কয়েকদিনব্যাপী এসব আয়োজন উপভোগ করেন উৎসবে ছুটি পাওয়া বা স্বজনদের সান্নিধ্যে যাওয়া মানুষ। এ আয়োজন উপভোগের ফলে শরীর ও মনে আসে প্রফুল্লতা । কর্মজীবী মানুষের কাছে বিষয়টি অনেকটাই যেন ক্ষণস্থায়ী। আনন্দের দিন ফুরিয়ে যায় দ্রুত। মন বলে ওঠে ছুটি আরও ক’টা দিন বেশি হলে কতই না ভাল হতো! কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন। এ দেশে উৎসবাদির ছুটির পরিমাণ বলতে গেলে সীমিত। পারিবারিক সান্নিধ্য ও উৎসবাদিজনিত সাংস্কৃতিক আবহটা বেশি উপভোগ করতে ছুটি বাড়ানো দরকার। যা কিনা মনোজগতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তার প্রভাব গিয়ে পড়বে কর্মক্ষেত্রেও। সেটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যে সহায়ক ভূমিকা পালন করে তা বলাই বাহুল্য। উৎসবের ছুটির মেয়াদ নিয়ে নতুন করে ভাবা যেতে পারে। মনে রাখা দরকার, উৎসব প্রতিমাসেই এ দেশে আসে না। উৎসবের নির্মল আনন্দ যত বেশি উপভোগ করা যাবে ততই সমৃদ্ধ হবে সমাজ ও সংস্কৃতি। আমরা আশা করব সরকার এ ব্যাপারটি বিবেচনায় নিয়ে একটা আশাব্যঞ্জক ও আনন্দায়ক সিদ্ধান্ত জাতিকে উপহার দেবে।
×