ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেষ দিনে হঠাৎ গরু সঙ্কট, দামও ছিল চড়া

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শেষ দিনে হঠাৎ গরু সঙ্কট, দামও ছিল চড়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদের আগের দিন বৃহস্পতিবার হঠাৎ কোরবানির হাটে গরুর সঙ্কট দেখা দেয়। সরবরাহ কম থাকার অজুহাত দেখিয়ে বিক্রেতারা দামও বাড়িয়েছে নিজের ইচ্ছামতো। ফলে অনেকেই পছন্দসই গরু কিনতে পারেননি। এ সঙ্কট সম্পর্কে বিক্রেতারা বলছেন, প্রথমত ভারত থেকে যে হারে গরু আসার কথা ছিল তেমনটি হয়নি। দ্বিতীয়ত রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে ভয়াবহ যানজটের ফলে বৃহস্পতিবার চাহিদামতো গরুর ট্রাক প্রবেশ করতে পারেনি। আর ক্রেতারা বলছেন, এটা কৃত্রিম সঙ্কট। বিপুল পরিমাণ গরু আসার কথা প্রচার করা হলেও শেষ দিনে তার ছিটেফোটাও দেখা যায়নি। যে কারণে পাইকারদের কারসাজিতেই গরুর সঙ্কট তৈরি করে হাতিয়ে নেয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। কল্যাণপুরের বাবুল মিয়া গাবতলীতে গিয়েছিলেন গরু কিনতে। কিন্তু গিয়ে দাম যা দেখলেন, তাতে আর গরু কেনা হয়নি। কেন কেনা হয়নিÑ জানতে চাইলে বাবুল মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে হঠাৎ গরুর বাজারে আগুন। ভেবেছিলাম গত বছরের মতো এবারও গরুর দাম শেষ দিকে কমবে, কিন্তু সেটা আর হলো না। গত দুই দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার হাটে গরুর দাম হঠাৎ করেই বাড়ল। তাই এ বছর হয়ত গরুর বদলে অন্যকিছু কোরবানি দিতে হবে। বিমানের সাবেক এমডি শেখ নাসির উদ্দিন ব্রিটেন প্রবাসী পুত্র সানি ও মেয়ের জামাই ফারহাতকে নিয়ে গরু কিনতে গিয়েছিলেন খিলক্ষেতের তিন শ’ ফুট রাস্তার পাশের জমে ওঠা গরুর হাটে। সঙ্গে ছিলেন এই প্রতিনিধি। বাজারে প্রবেশের আগেই তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ওই এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার ডাক্তার জিন্নাত আলীর কাছে ফোন করে জানতে চান গরুর হাটের অবস্থা সম্পর্কে। জিন্নাত তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেনÑ এই মার্কেটে এসে লাভ নেই, গরুর সঙ্কট। গরু দেখা মাত্রই যে দড়ি ধরেন, তিনিই সেটা চড়া দাম দিয়েই কিনে নেন। দুপুর বারোটায় ওই মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা বেশি, গরু কম। অভিজাত ওই মার্কেটের সামনে পূর্বাচলগামী বিশাল রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যাপক জায়গা থাকায় বিত্তবানরা বেশির ভাগই এখানে ছুটে আসেন। পাইকার, দালাল ও ক্রেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আগের দিন যে গরু বিক্রি হয়েছে ৬০ হাজার টাকায়, সেটাই পরদিন বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার টাকায়। চড়া দামেই শেখ নাসির দুটো বড় গরু কেনেন দেড় লাখ টাকায় ও দুটো ছাগল কেনেন ত্রিশ হাজার টাকায়। এ সময় তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম গরু সস্তা। কিনতে এসে দেখি তার বিপরীত।’ শেখ নাসিরের মতো এমন অনেক ক্রেতাকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। নাসরীন সুলতানা নামের এক কুয়েত প্রবাসীকে দেখা যায় গরু নিয়ে দাম কাটাকাটি করতে। তিনি একটা মাঝারি মানের গরুর দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা বললেনÑ এক দাম ৬০ হাজার। দাম শুনে তিনি বিস্ময় প্রকাশের আগেই আরেক মহিলা তার মাথার ওপর দিয়ে ছুঁ মেরে গরুর রশি ধরে টান। কোন দামদামি না করেই ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকার বান্ডিল বের করে গুনে দিলেন ৬০ হাজার। এমনই ছিল গরুর হাটের অবস্থা। কিন্তু কেন এমন সঙ্কট হলোÑ জানতে চাইলে কমিশনার ডাক্তার জিন্নাত আলী বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন কারণ কেউ বলতে পারছে না। তবে আমার ব্যক্তিগত যা ধারণা তা হচ্ছেÑ আগের দিন বুধবার মূল মহাজনেরা সব গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। পরের দিন খুচরো বিক্রেতারাই বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। ফলে তারা সঙ্কট দেখিয়ে দাম বাড়িয়েছেন নিজেদের মতো। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ছিল প্রচ- যানজট। ঢাকা থেকে ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের ভিড়ের কারণে গাবতলী ও জয়দেবপুর দিয়ে উত্তরবঙ্গের গরুবাহী ট্রাক সহজে আসতে পারেনি। বৃহস্পতিবার সকালে যে গরুর ট্রাক আসার কথা ছিল সেটা রাতেও আসতে পারেনি। এ কারণেই হঠাৎ গরুর সঙ্কট দেখা দেযায় দামও বেড়েছে অভাবনীয়। বাজার সূত্র জানায়, শেষ দিন পযর্ন্ত যেসব বেপারি ঝুঁকি নিয়েছেন তারা অনেক লাভ করেছেন। মাত্র একদিনের ব্যবধানে অনেক বেপারি মাঝারি দেশী ষাঁড়প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা অতিরিক্ত লাভ করেছেন। বৃহস্পতিবার বেপারি ও ক্রেতারা সমানতালে আফসোস করেছেন। বেপারিরা আফসোস করছেন, কম লাভে মঙ্গল ও বুধবার গরু বিক্রি করার জন্য। তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার ঝুঁকি নিয়ে গরু বিক্রি করলে আরও বেশি লাভ হতো। দৌলতপুরের ময়েজ বেপারি বলেন, ২৮টা গরু আনছি। দুইবার ৫ লাখ টাকা বসান খাইচি (লোকসান)। সেই ভয়ে ১৫টা গরু আগেভাগেই বিক্রি করছি। শেষ দিনে ১৩টা গরুতে আল্লাহ অনেক লাভ দিছে। গরুগুলো শেষ দিনে বিক্রি করলে আরও লাভ হতো। শেষবেলায় গরুর দাম বাড়বে ভাবিনি। অন্যদিকে শেষ দিনে কম দামে গরু কেনার আশায় থেকে অনেক ক্রেতা আফসোস করেছেন। কারণ বৃহস্পতিবার গরুর দাম অনেক বেশি। মঙ্গলবার ও বুধবার সেই তুলনায় গরুর দাম অনেক কম ছিল। শেষ দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতার ঢল। রাত সাড়ে ৮টার সময় স্রোতের মতো বাজারে প্রবেশ করতে থাকেন ক্রেতারা। কিন্তু সে তুলনায় গরু হাতেগোনা। যেসব গরু আছে তার দামও আকাশচুম্বী। জানা যায়, শেষ মুহূর্তে বড় গরুর চাহিদাও বাড়তে থাকে। সাড়ে ৫ মণ মাংস হবেÑ এমন গরু শেষবেলায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কুষ্টিয়া সদরের জামান বেপারি ৩০টি গরু গাবতলী হাটে এনেছিলেন। এর মধ্যে ১০টি গরু বৃহস্পতিবার শেষ সময়ে চড়া লাভে বিক্রি করেছেন। জামান বেপারি বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে গরু না রেখে খুবই ভুল করেছি। গতকাল হাতির সমান গরু (বড় গরু) দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। আজকে সাড়ে পাঁচ মণ মাংস হবে, সেই গরু এক লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। সব গরু শেষ দিনে বিক্রি করলে, আরও দুই লাখ টাকা লাভ করতে পারতাম।’ এদিকে শেষ দিনে গরুর দাম বাড়ায় ক্রেতারা মিডিয়াকে দুষছেন। ধানম-ি জিগাতলার ক্রেতা হারুন মুন্সী বলেন, আমরা পত্রিকায় দেখেছি ভারত-মিয়ানমার থেকে গরু আসবে, শেষদিকে গরুর দাম কমবে। কিন্তু হাটে দেখছি দেশী গরু। ছোট ছোট গরুর দাম দ্বিগুণ চান বেপারিরা।
×