ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বিসিবি, অস্ট্রেলিয়ানরাও বাংলাদেশ সফরে প্রস্তুত

সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। বাংলাদেশ সরকার দক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তুলে তাদের মাধ্যমে কঠোরভাবেই সব জঙ্গী তৎপরতাকে দমন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এবং ফুটবলের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও আসর সফলতার সঙ্গে নির্বিঘেœ সমাপ্ত করেছে বাংলাদেশ। তাই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন পুরো দেশ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) অবাক করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য শন ক্যারলের নেতৃত্বে আসা নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা, বিসিবি সভাপতি ও কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার আলোচনায় বসেছিলেন। আলোচনায় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে বাংলাদেশ সফরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কিন্তু উত্তরে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানায়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল। তারা একটি নিরাপত্তা প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এরপরই নিশ্চিত করে জানা যাবে শেষ পর্যন্ত কবে বাংলাদেশ সফরে আসবে অসি ক্রিকেটাররা। সোমবারই আসার কথা ছিল তাদের। এখন নিরাপত্তা প্রশ্ন সমাধানের অপেক্ষা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বৈঠক শেষে আশাবাদ জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশ সফরে আসবে। এছাড়া সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কও জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফরের জন্য অসি ক্রিকেটাররা মুখিয়ে আছেন। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের জন্য বাংলাদেশ সফর নিরাপদ নয়, হতে পারে জঙ্গী আক্রমণ। বাংলাদেশ সফরে আসার ঠিক পূর্বমুহূর্তে অসি সরকারের এমন খবর বিস্মিত করার মতোই। কারণ রাজনৈতিক অবস্থা এই মুহূর্তে স্থিতিশীল। অথচ গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের সময়ই বাংলাদেশে কিছুটা রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল, যার মধ্যে বেশ সফলভাবেই সর্বোচ্চ মানের ওই আন্তর্জাতিক আসর আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। যে কোন সফরকারী দলকে নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে কোন সময়ই বিন্দুমাত্র অবহেলার ছাপ দেখায়নি বিসিবি। দেশে যেসব জঙ্গী সংগঠন অপতৎপরতা চালানোর প্রয়াস নিয়ে গঠিত হয়েছিল, সবই এখন ক্ষণভঙ্গুর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর অভিযানে কোণঠাসা হয়ে বিলুপ্তির পর্যায়ে। এ সময় অস্ট্রেলিয়া সরকারের নিরাপত্তার অজুহাতে সফর সাময়িক স্থগিত ঘোষণা দারুণ আশ্চর্যের বিষয়। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে সোমবার এক বৈঠকে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সকালে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকটি চলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এর সারমর্ম সাংবাদিকদের জানান উভয়পক্ষ। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, সহ-সভাপতি মাহবুব আনাম, সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়াসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ছিলে সিএ নিরাপত্তা প্রধান ক্যারল, বাংলাদেশে নিযুক্ত সে দেশের হাইকমিশনার এইচইমি গ্রেগ উইলককসহ মোট ৬ জন। বৈঠক শেষে বিসিবি সভাপতি পাপন বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের জানিয়েছি। তারা সেটি আলোচনা করবেন। সফরে আসবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও সে দেশের সরকার। এখানে ক্রিকেট কখনই অনিরাপদ নয়। আমরা সরকার ও এজেন্সি থেকে প্রস্তুতির কথা বলেছি। এছাড়াও আরও কিছু চাইলে অস্ট্রেলিয়া আমাদের বলুক, আমরা ব্যবস্থা করতে পারি কি না দেখব। কিন্তু সে সবও পরিষ্কার করে তারা কিছু বলছে না।’ নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে যে অভিযোগ বৈঠকে সে সম্পর্কে অসি প্রতিনিধি দলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। গত এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ সফর করে গেছে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এ বিষয়ে পাপন বলেন, ‘নিরাপত্তাজনিত যে অভিযোগ তারা করেছেন, সে সম্পর্কে কোন সত্যতা আমরা পাইনি। আমাদের ক্রিকেটে ভীতিকর কিছু হতে পারে বলে কোন তথ্য আমরা কোথাও থেকে পাইনি। তাদের (অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি) বার বার জিজ্ঞেস করা হয়েছে। কিন্তু তারা উত্তরে বলেছেন, এ তথ্য জানাতে পারবেন না। এভাবে খেলার কাছাকাছি সময়ে এসে বিবৃতি দিয়ে আসার বিষয়ে আপত্তি জানানো সত্যিই খুব দুঃখজনক।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান আশার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, অস্ট্রেলিয়া টিম খেলতে আসবে। আমাদের প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ও সার্বিক দিক তাদের জানিয়েছি। আশা করি, তারা সন্তুষ্ট। এসব দেখে তারা তাদের সিদ্ধান্ত বদলাবে।’ অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার উইলকক বলেন, ‘নিরাপত্তা ঘাটতি বিষয়ক প্রতিবেদনের কারণে আমরা এখানে এসেছি। এখানে নিরাপত্তার বিষয়ে যা যা দেখেছি, সেসব সম্পর্কে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব। এরপর তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।’ অর্থাৎ এখন পর্যন্ত বিষয়টি ঝুলেই থাকল। সোমবার অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার আশঙ্কা দেখিয়ে সফর আপাতত স্থগিত করে তারা। অসিরা না আসায় সূচী অনুযায়ী দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি অনিশ্চয়তায় রয়েছে। কিন্তু কিছুটা পিছিয়ে সিরিজ হওয়া নিয়ে আশাবাদী বিসিবি। এমনটাই জানিয়েছেন বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন। আর অসি ক্রিকেটাররাও বাংলাদেশ সফরে আসতে আগ্রহী। নতুন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের প্রথম মিশন হবে এটি। এ বিষয়ে সাবেক অধিনায়ক ক্লার্ক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ সফরে যেতে চায়। খেলার জন্য মুখিয়ে আছে ছেলেরা।’ সিএ নির্বাহী মহাব্যবস্থাপক প্যাট হাওয়ার্ড জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফরে আসতে মঙ্গলবার রাতের বিমান টিকেট বুক করা হয়েছে দলের জন্য। সেক্ষেত্রে আজ রাতেই বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হতে পারে অসি ক্রিকেট দল। সবকিছু জানা যাবে আজ। উল্লেখ্য, ৯ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হওয়া কথা রয়েছে। সিরিজে মাত্র দুই টেস্ট খেলবে অস্ট্রেলিয়া।
×