ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুব আকাশে রঙধনু

শেষ বিকেলে এক চিলতে রোদ, দিগন্তজুড়ে হাসির ঝিলিক

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শেষ বিকেলে এক চিলতে রোদ, দিগন্তজুড়ে হাসির ঝিলিক

শেখ আব্দুল আওয়াল ॥ বেবী নাজনীন তার কণ্ঠে গেয়েছেন “ঐ রঙধনু থেকে কিছু কিছু রঙ এনে দাও না, তুমি মনের মাধুরী সঙ্গে মিশিয়ে আমাকে আপন করে নাও না। আঞ্জুমান আরা বেগম গেয়েছেন, “সাতটি রঙের মাঝে আমি মিল খুঁজে না পাই/ জানি না তো কেমন করে কি দিয়ে সাজাই।” শুধু গান আর কবিতাই নয় রঙের মিল খুঁজে পাওয়া আসলেই কষ্টকর। বৃষ্টির পর পর রোদ উঠলেই আকাশে রঙধনু দেখা যায়। রঙধনু আসলে কি সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বলেন, যখন পৃথিবীর বায়ু ম-লে পানি বা জলবিন্দু পড়ে তখন বিভিন্ন রঙ আমাদের চোখে ধরা পড়ে। এই রঙগুলোকেই আমরা খালি চোখে রঙধনু হিসেবে দেখি। ওই রঙগুলো আকাশে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে থাকে বলে একে আমরা রঙধনু বলি। তবে আকাশে সব সময় রঙধনু দেখা যায় না। বাংলাদেশে আকাশে বৃষ্টির পরই রঙধনু দেখা যায় বেশিরভাগ সময়। কারণ তখন আকাশে পানির বিন্দু এক প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়। মেঘের জলকণা যখন চিক চিক করে আর সে জলকণাতেই রঙধনু তৈরি হয়। আকাশে সূর্যের আলো জলকণার ওপর পড়লেই রঙধনুর সৃষ্টি হয়। আসলে রঙধনুর যে রঙ থাকে আমরা তাকে সূর্যের আলোর সাতটি রঙের সমাহার বলে জানি। এ ৭টি রঙকে সংক্ষেপে বলা হয় বেনীআসহকলা। অর্থাৎ বেগুনী, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা আর লাল। তবে ১৭ দশক পর্যন্ত কারও স্বচ্ছ ধারণা ছিল না রঙধনুর আসলে রঙ কয়টি। ইংরেজীতে রঙধনুকে রেইনবো বলা হয়। যতটুকু জানা গেছে, গ্রীক মহাকবি হোমার বলেছেন, রঙধনুতে মাত্র একটি রঙ। আর তা হচ্ছে ‘রক্তবর্ণ’ কবি হোমারের সমসাময়িক দার্শনিক কবি জেনোফেল বলেন, রঙধনুতে রঙ তিনটি। তাকে সমর্থন জানান এ্যারিস্টটল। মেটেরোলজিকা গ্রন্থ তিনি বলেন, রঙধনুতে তিনটি রঙই রয়েছে তার এ মত থেকে রেনেসাঁ-যুগ পর্যন্ত সবাই মেনে নিয়েছিল, রঙধনুতে চারটি রঙ লাল, নীল, সবুজ ও হদুল। এদিকে আইজ্যাক নিউটন এসে জানিয়ে দিলেন, রঙধনুতে রং পাঁচটি। লাল, হদুল, সবুজ, নীল ও রক্তবর্ণা। এখনও চীনের অনেক মানুষ মনে করে রঙধনুতে পাঁচটি রঙ। বাল্টিক দেশগুলো (এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুনিয়া ও ফিনল্যান্ড) লোকেরা বিশ্বাস করে রঙধনুতে লাল ও নীল দুইটি রঙ। ১৬৬৬ সালের দিকে বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন প্রথম জানান, রঙধনুতে পাঁচটি রঙ লাল, হদুল, সবুজ ও রক্তবর্ণা। তবে পরে তিনি বলেন, রঙধনুর রঙ সাতটি লাল, কমলা, হদুল, সবুজ, নীল, আকাশী ও বেগুনী। প্রথমে পাঁচটি বললেও পরে বাকি দুইটি রঙ যোগ করে বিশ্ব জগতের সাতের সঙ্গে মিল থেকে যেমন- সাতদিনে এক সপ্তাহ, সৌরজগতের সাতটি গ্রহ, গানের সাতটি সুর, জানা ছিল তখন। আকাশে একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে সূর্যের আলো বিচ্ছুরণ অল্পমাত্রা এ অবস্থায় রঙধনুর জন্ম হয়। বিজ্ঞানী ও দার্শনিক রেনে দেকার্ত বলেন, বৃষ্টির কণা বা জলীয়বাষ্প-মিশ্রিত বাতাসের মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো যাওয়ার সময় আলো প্রতিসরণের কারণে বর্ণালীর সৃষ্টি হয়। এই বর্ণালীতে আলো সাতটি রঙে ভাগ হয়ে যায়। তখনই আমরা রঙধনু দেখি। রঙধনু সূর্যের চেয়ে ৪২ ডিগ্রী বিপরীতে সৃষ্টি হয়। পুরোপুরি রঙধনু মানে সাত রঙ মিলে হতে পারে। আবার অল্প কয়েকটি মিলেও রঙধনু হতে পারে। রেইনবো প্রধানত প্রাইমারী, ডাবল ও ট্রিপল এ তিন ধরনের হতে পারে। প্রাইমারী রঙধনুতে লাল ও বেগুনী রঙ দেখা যায়। পানির ফোঁটার মধ্যে সূর্যের আলো একবার পড়ে। আর ডাবল রেইবো সৃষ্টি হয় যখন প্রাথমিক রঙধনুর উপরে ও বাইরের অংশে রঙধনুর সৃষ্টি হয়। ডাবল রেইনবো দেখার কারণ হলো পানির ফোঁটার উপর দু’বার সূর্যের আলো পড়ে। আর ট্রিপল রেইনবো সৃষ্টি হয় আলো, পানির ফোঁটার উপর তিনবার প্রতিফলিত হলে। আরেক ধরনের রঙধনু আছে যাকে এক রঙ্গা রঙধনু বলা হয়। সূর্য উঠা বা অস্ত যাওয়ার সময় এ রঙধনুর সৃষ্টি হয়। এখান থেকে নীল বা সবুজ রঙ হয়। তবে সচরাচর এই রঙধনু খুবই কম দেখা যায়।
×