ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুপার মুন দেখা গেল বাংলাদেশের আকাশে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সুপার মুন দেখা গেল বাংলাদেশের আকাশে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ১৪ গুণের বেশি বড় আকৃতি নিয়ে রবিবার রাতে হাজির হয়েছিল চাঁদ। তার গায়ে ছিল লালচে আভা। জোতির্বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন সুপার মুন হিসেবে। আর হৃষ্টপুষ্ট চাঁদ দেখতে পৃথিবীজুড়ে পর্যবেক্ষকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। জোতির্বিদরা জানিয়েছেন গ্রীনিচ মান সময় রবিবার রাত দেড়টায় শুরু হয় সুপার মুন। এর শেষ হয় সোমবার সকালে। তবে একই সঙ্গে সুপার মুনের সঙ্গে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের কারণে এই সুপার মুন এবার পরিচিতি পেয়েছে ব্লাড মুন হিসেবে। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা গেলে বাংলাদেশ থেকে ব্লাড মুনের দৃশ্য দেখা মেলেনি। শুধু সুপার মুন দৃষ্টিগোচর হয়েছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানায়, একই সঙ্গে ‘সুপার মুন’ ও পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা এবার ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর ঘটছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আর কোন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হবে না। আর একই সঙ্গে সুপার মুন-চন্দ্রগ্রহণ বা ব্লাড মুন দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। সুপার মুনের বৈজ্ঞনিক নাম পেরিগি মুন। পেরিগি অর্থ হচ্ছে ‘পৃথিবীর নিকটতম’। চাঁদ তার নিজ অক্ষ পথে ঘুরতে ঘুরতে রবিবার রাতে পৃথিবীর সবচয়ে নিকটে চলে আসে। বাংলাদেশ এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এফআর সরকার বলেন, এবারের সুপার মুনের সময় পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটে চলে আসে চাঁদ। তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে চেয়ে চাঁদ প্রায় ৯০ ভাগের পৃথিবীর নিকটে অবস্থান করায় চাঁদকে আকারের স্বাভাবিক অবস্থায় চেয়ে ১৪ গুণের বেশি বড় আর উজ্জ্বলতার দিক দিয়ে ৩০ ভাগ বড় দেখায়। জোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, সুপার মুন সৌরজগতের এক মহাজাগতিক বিষয় হলেও বিশ্ববাসীর কাছে নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রতিবছরই একটা সময় চাঁদ ও পৃথিবীর তার নিজ কক্ষপথে প্রদক্ষিণকালে সবচেয়ে নিকটে চলে আসে। আর এ নিকটে আসার ফলে চাঁদ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বড় দেখায় তখনই তার সুপার মুন হিসেবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু এবারের সুপার মুনের সঙ্গে যোগ হয়েছিল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণও। যাকে ব্লাড মুন হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণত সুপার মুন প্রতি বছর একবার দেখা গেলেও ব্লাড মুনের মতো ঘটনা সবসময় দেখা মেলে না। রবিবারের পর এ ধরনের জাগতিক ঘটনা আবার ঘটবে ২০৩৩ সালে। বাংলাদেশ থেকে সুপার মুন দেখা মিললেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখা মিলেছে ব্লাড মুনের। সুপার মুনের সময় চাঁদ পৃথিবীর অতি নিকটে চলে আসার কারণে এ সময় চাঁদকে স্বাভাবিক পূর্ণিমার তুলনায় আরও বড় ও উজ্জ্বল দেখায়। সাধারণত ১৩ মাস পর পর সুপার মুনের দেখা মেলে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আকাশপ্রেমীরা এই সুপার মুন দেখে উচ্ছ্বসিত। তবে সুপার মুনের সঙ্গে চন্দ্রগ্রহণের ফলে যে ‘ব্লাড মুন সৃষ্টি হয় তা কেবল পশ্চিম গোলার্ধের অধিবাসীরাই উপভোগ করতে পেরেছেন। একই সঙ্গে সুপার মুন ও ব্লাক মুন উপভোগ করতে পেরেছেন উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি অংশ এবং পূর্বাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় লোকজন। যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় রবিবার রাত ৮টা ১১ মিনিটে (পূর্বাঞ্চলীয় সময়) চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়। পূর্ণগ্রাস হয় দুই ঘণ্টা পর এবং তা চলে ১ ঘণ্টা ১২ মিনিট। জ্যোতির্বিদের মতে চাঁদ পৃথিবী থেকে ২ লাখ ২১ হাজার মাইল থেকে ২ লাখ ৫২ হাজার মাইল দূরত্বে থেকে প্রদক্ষিণ করে থাকে। পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের এই প্রদক্ষিণকালে চাঁদ কখনও পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটে চলে আসে। আবার কখনও দূরে চলে যায়। দূরে চলে গেলে রাতে চাঁদের আলোর উজ্জ্বলতা যেমন কমে যায়, তেমনি আকারেও অনেক ছোট দেখা যায়। আবার যখন একেবারে কাছে চলে আসে তখন চাঁদের উজ্জ্বলতা পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকারেও অনেক বড় দেখা যায়। তবে নিজ কক্ষপথে বেশিরভাগ সময়ে ২ লাখ ৩২ হাজার থেকে ২ লাখ ৪৮ হাজার মাইল দূরত্বে থেকে প্রদক্ষিণ করে থাকে। এ দূরত্বের বেশি চলে গেছে তখন চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দূরত্বে চলে যায়। আবার এ দূরত্বের কমে চলে আসলে তখন চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কাছে অবস্থান করে। জোতির্বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবী থেকে রবিবার চাঁদের দূরত্ব ছিল মাত্র ২ লাখ ২১ হাজার ৮২৪ মাইল অথবা ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার। তাদের মতে প্রতিবছরই সাধারণ চাঁদ পৃথিবীর কাছে চলে আসে। তবে কখনও কখনও চাঁদ পৃথিবীর বেশি নিকটে চলে আসে।
×