ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানিকারক সঞ্চার নিগম ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পায়নি

ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানি নিয়ে আবার জটিলতা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানি নিয়ে আবার জটিলতা

ফিরোজ মান্না ॥ ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যান্ডউইথ নেয়ার কথা ভারতের সঞ্চার নিগাম লিমিটেডের (বিএসএনএল)। কিন্তু দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ব্যান্ডউইথ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে অনুমতিপত্র এখনও দেয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র ছাড়া বিএসএনএল কোনভাবেই বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ নিতে পারবে না। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি এমন এক জটিলতার কারণ জানিয়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানিকে (বিএসসিসিএল) চিঠি দিয়েছে। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র কয়েক দিনের মধ্যে পেতে পারে। অনুমতি মিললেই ব্যান্ডউইথ নেবে। তারাও ব্যাকহোল বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তৈরি করে রেখেছে। ব্যান্ডউইথ রফতানির জন্য এখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্রের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ব্যান্ডউইথ রফতানি করা যাবে। বিএসসিসিএল জানিয়েছে, ব্যান্ডউইথ রফতানির সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এখন ভারতের ব্যান্ডউইথ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএনএল তাদের জটিলতা কাটিয়ে উঠলেই ব্যান্ডউইথ রফতানির কাজ শুরু করা হবে। কথা ছিল গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যান্ডউইথ রফতানি শুরু করা হবে। পরে বিএসএনএল’র অনুরোধে সময় বাড়িয়ে করা হয় ১৫ সেপ্টেম্বর। এখন প্রতিষ্ঠানটি আরও সময় বাড়িয়ে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ লিজ দেয়া হবে ভারতকে। এই পরিমাণ ব্যান্ডউইথ রফতানি করে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) বছরে ১২ লাখ মার্কিন ডলার আয় করতে পারবে। প্রতি মেগাবিটের দাম ধরা হয়েছে ১০ মার্কিন ডলার। পর্যায়ক্রমে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ ৪০ জিবিপিএস পর্যন্ত বাড়ানো হবে। ৪০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রফতানি করা গেলে বছরে ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব হবে। ভারতের বিএসএনএলের সঙ্গে তিন বছরের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে একটি মেল পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত দিনে তারা ব্যান্ডউইথ নিতে পারছে না। পরে বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা বলেছে, বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত ব্যাকহোলে কেবল নেয়ার জন্য ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া যায়নি। কয়েক দিনের মধ্যে ওই অনুমতি পাবে বলে বলা হয়। ভারতের সীমান্ত থেকে ৫০ মিটার দূরে আমাদের ব্যাকহোল স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের দিক থেকে যে কোন সময় ব্যান্ডউইথ রফতানি করার প্রস্তুতি রয়েছে। ভারতীয় কোম্পানি জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারলেই আমাদের কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ নিতে পারবে। বাংলাদেশের এ ব্যান্ডউইথ ভারতের অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মনিপুর ও অরুণাচল রাজ্যে ব্যবহার হবে। ব্যান্ডউইথ রফতানির জন্য কারিগরি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) সঙ্গে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) মধ্যে সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিটিসিএল থেকে ব্যাকহোল সার্ভিস গ্রহণই এ চুক্তির উদ্দেশ্য। এতে স্বাক্ষর করেন বিটিসিএলের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএসসিসিএলের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, ভারতে ব্যান্ডউইথ রফতানি করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকেই সময় বাড়িয়ে চাওয়া হযেছে। এখন ক্রেতা যদি কিছু দিন পরে কিনতে চান তাহলে তো আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে। জোর করে তো আর বিক্রি করা যাবে না। তারা চাইলে যে কোন সময় ব্যান্ডউইথ নিতে পারে। কক্সবাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া হয়ে আগরতলা জিরো পয়েন্ট দিয়ে ভারতে যাবে। বাংলাদেশ অংশে সীমান্ত পর্যন্ত কেবল স্থাপন করা হযেছে। এই কেবল স্থাপনের খরচ সরকার বহন করেছে। ভারতের অংশের জন্য ভারতের প্রতিষ্ঠান খরচ বহন করছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড বিএসসিসিএর সি-মি-উই-৪ সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়ামের সদস্য। এই সাবমেরিন কেবল থেকে বিএসসিসিএল ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ শেয়ার হিসেবে পেয়েছে। গত ৬ জুন বিএসসিসিএল ভারতের বিএসএনএলের সঙ্গে ব্যান্ডউইথ লিজের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি মোতাবেক বিএসসিসিএল শুরুতে ১০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ লিজ দেবে, যা পরবর্তীতে ৪০ জিবিপিএস পর্যন্ত বাড়ানো হবে। ভারতে ব্যান্ডউইথ লিজ দেয়ার যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে বর্তমানে প্রয়োজন প্রায় ১২৫ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ, যার মধ্যে ৩৩ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ বিএসসিসিএল কর্তৃক সরবরাহ হচ্ছে। বাকি ৯২ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ আইটিসি কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে ভারত থেকে ক্রয় করে। ব্যান্ডউইথের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে ও বর্তমানে ব্যান্ডউইথের মূল্য কমানোর পরবর্তী প্রভাবের কথা বিবেচনায় আনলে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিএসসিসিএলের ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ হবে সর্বোচ্চ ৯০ জিবিপিএস। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ২০০ জিবিপিএসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯০ জিবিপিএস ব্যবহৃত হবে। অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের পরিমাণ হবে ১১০ জিবিপিএস। অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের অংশবিশেষ লিজ দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা আয় করা যাবে। অন্যদিকে, আগামী বছর ডিসেম্বরে একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় সি-মি-ইউ-৫ বা দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হবে বাংলাদেশ। এই কেবলের মাধ্যমে অতিরিক্ত ১ হাজার ৩শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাবে বাংলাদেশ।
×