ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেডিক্যালে ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ভিত্তিহীন ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মেডিক্যালে ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ভিত্তিহীন ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মঙ্গলবার নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পাঠানো অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শতভাগ সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং পরবর্তীতে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষার ফলও প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে কলেজসমূহে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। সারাদেশে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাব ভুয়া প্রশ্নপত্র বিলি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া কয়েকটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের বিষয়টি স্বার্থান্বেষী ও সুবিধাভোগী চক্রের অশুভ কর্মকা- উল্লেখ করে তাতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো প্রধান মোঃ আব্দুল ওয়াহিদ আকন্দ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত লেখা ও মতামত আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিক্যাল শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়নের পক্ষ থেকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে জানাতে চায় যে, ভর্তি পরীক্ষা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ১৫, ১৭ ও ২২ সেপ্টেম্বর র‌্যাব দ্বারা এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সন্দেহে আটক ৩টি চক্রের কারো কাছেই এমবিবিএস পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়নি। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রলোভন প্রদানকারী সংঘবদ্ধ চক্রকে র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতারের সংবাদ ইতোমধ্যে দেশবাসী অবগত হয়েছেন। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে কোন মহল কোন অভিযোগ করেনি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোন মহল কর্তৃক প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি। এমনকি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সদস্য ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন, তখনও কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে মন্ত্রীর কাছে কোন অভিযোগ উত্থাপন করেননি। সারাদেশের ২৩টি ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রের পরিদর্শকদের কাছেও কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনপ্রকার অভিযোগ করেন নাই। আর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উত্থাপন ও ভর্তি বাতিল চেয়ে দাখিলকৃত রিট আবেদনটি হাইকোর্ট কর্তৃক খারিজের মাধ্যমে বিষয়টি ইতোমধ্যে মীমাংসিত। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ২০১৫-২০১৬ সালে সরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজসমূহে ভর্তিযোগ্য ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৬৯৪, কোটায় ভর্তিযোগ্য সংখ্যা ১১১ (পাবর্ত্য জেলাসমূহ-উপজাতি ও অ-উপজাতি, উপজাতি-অন্যান্য জেলা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য), মেধা ও জেলা কোটা-৩৫৮৩ জন। ৩৫৮৩ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যারা সর্বোচ্চ জিপিএ নম্বর-১০ পেয়েছে, তাদের মধ্যেই ৩০৭৩ (৮৫.৭৬%) জন এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, ৯.৫ থেকে ১০-এর মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪৬৭ (১৩.০৩%) জন, ৯.৪ থেকে ৯.৫-এর মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২১ (০.৫৯%) জন, ৯.৩ থেকে ৯.৪ এর মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১০ (০.২৮%) জন, ৯.২ থেকে ৯.৩-এর মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৭ (০.১৯%) জন এবং ৯.০৮ থেকে ৯.২-এর মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫ (০.১৩%)। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, কোটা ব্যতীত জিপিএ মোট নম্বর ৯.০৮-এর কম পেয়ে কোন ছাত্রছাত্রী ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। জিপিএ মোট নম্বর ৯.৫ বা তার বেশি প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তাই প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং সুবিধা নিয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির জন্য নির্র্বাচিত ছাত্রছাত্রীদের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ভর্তি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ২৩টি কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই ছাত্রছাত্রীরা উক্ত কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। রংপুর, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রামে প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে অভিযোগ উত্থাপিত হলেও উল্লেখিত ৪টি কেন্দ্র থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পরীক্ষার্থী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জন্য নির্বাচিত হতে পারে নাই। একই অবস্থা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে নির্বাচিত পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। ২৩টি পরীক্ষা কেন্দ্রের সবক’টি থেকেই কম বেশি পরীক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। তাই অধিদফতর দৃঢ়তার সঙ্গে দেশবাসীকে জানাতে চায় যে, প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি নিতান্তই গুজব ও ভিত্তিহীন।
×