ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেই

বেহাল দশায় ঢাকা চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বেহাল দশায় ঢাকা চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলের সর্বপ্রথম নৈশকালীন এক্সপ্রেস ট্রেনের শীততাপ নিয়ন্ত্রণ কোচের অবস্থা খুবই নাজুক। দফায় দফায় সরকার টিকেটের মূল্যবৃদ্ধি করলেও যাত্রীদের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করেনি। ফলে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেইল। অপরদিকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার নিচে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। ট্রেন এক্সামিনার দফতরের (ট্রাবল শ্যূটার ও ইলেকট্রিক) অবহেলার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা বা চট্টগ্রাম মেইল মাত্র এক জোড়া ট্রেন। একই সময়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা মেইল নামে ও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মেইল নামে এ দুটি ট্রেন পরিচালিত হয়ে আসছে স্বাধীনতার পর থেকে। দীর্ঘ প্রায় তেতাল্লিশ বছর ধরে এ ট্রেনে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কোচ চালু রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এসব ট্রেনের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত চারটি কোচের বেহাল দশা। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব সময়ই এসব কোচে কোন না কোন ত্রুটি থেকেই যায়। লাইট জ্বলেতো ফ্যান চলে না, ফ্যান চলে তো লাইট জ্বলে না। আবার শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের পাইপ জ্যাম হয়ে পানি ভেতরে পড়া থেকে শুরু করে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজ করে না এমন অব্যবস্থাপনাও চলে প্রতিনিয়ত। ট্রেনে কর্মরত যেসব এটেনডেন্ট রয়েছেন তারা যাত্রীদের এ ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। ফলে চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে যাত্রীদের। অথচ প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি টিকেটের মূল্য নেয়া হচ্ছে ১ হাজার ১৪৩ টাকা। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হিসাব-নিকাশ চালানো হয়। তবে এ কোচগুলোর শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের তাপানুকূল ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচেও নেমে যায়। বেডিং বিভাগের পক্ষ থেকে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা প্রতিটি ঋতুতেই বেডশিট ও বালিশ ছাড়াও লেপ বা কম্বল দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু একটি বার্থের ভেতরে যখন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায় তখন যাত্রীরা জীবনমরণ সন্ধিক্ষণে পড়ে এটেনডেন্টকে খুঁজতে থাকেন। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি কোচে একজন করে এটেনডেন্ট থাকলেও তারা তাপমাত্রা উঠানামার কোন সমাধান দিতে পারেন না। লেপ কম্বল মুড়িয়েও যাত্রীদের অতিমাত্রায় ঠা-া থেকে নিজেদের রক্ষার হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্য দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। অভিযোগের বিভিন্ন বিষয়ে স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের সচেতন করা হলেও ট্রেনে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই। গার্ড বুকে অভিযোগ লেখার নিয়ম থাকলেও এ ব্যবস্থা সম্পর্কে যাত্রীরা জানেন না। কারণ টিকেটের গায়ে এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেয়া নেই। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা মেইল ও চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কোচের সংখ্যা দুটি। দুটি কোচে মোট আসন সংখ্যা ৩৬টি। এসব আসনের মধ্যে মাত্র ১৬টি আসন বিক্রির ব্যবস্থা থাকে টিকেট কাউন্টার থেকে যাত্রার পাঁচ দিন পূর্বে। বাকি ২০টি আসন বিভিন্ন কোটায় সংরক্ষিত থাকে। এসব আসন যাত্রার দিনে দুপুর ১২টার মধ্যে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মধ্যে বিক্রি করা হয়। যদি বিক্রি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে বুকিং ক্লার্করা রেজিস্ট্রারে অবিক্রীত দেখিয়ে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ যাত্রীরা কোচে ওঠার পর প্রত্যেকটি বার্থের প্রতিটি আসন যাত্রীশূন্য থাকে না বলে নিশ্চিত করেছে। প্রশ্ন উঠেছে কথিত অবিক্রীত টিকেটের মূল্য হাতিয়ে নিচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু কর্মচারী। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিভাগের অগোচরে ট্রেন যাত্রার ঠিক কয়েক মিনিট আগেই কোচের সামনে টিকেট কাউন্টারের কর্মচারীরা সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির মাধ্যমে আসন পরিপূর্ণ করার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট দফতর ও বাণিজ্যিক বিভাগের কয়েক কর্মকর্তারা জানান, টিকেট অবিক্রীত থাকার বিষয়ে রেজিস্ট্রার প্রামাণ্য দলিল। ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তে স্টেশনের কর্মচারীরা সেখানে উপস্থিত থাকে।
×