ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গীবাদ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১ অক্টোবর ২০১৫

জঙ্গীবাদ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৈতিক সাহস ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সন্তান এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ জীবন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত রেখে যাওয়ার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের সামষ্টিক অঙ্গীকার অনুযায়ী এমন একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলি যেখানে দারিদ্র্য, অসমতা, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গীবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘাত এবং বিদ্বেষ ও বৈষম্য থাকবে না। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকল রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটানোর চেতনা থেকেই আমরা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। বুধবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আজ আমরা সবচেয়ে বড় দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, যার প্রথমটি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গীবাদ। বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নের পথে এটি প্রধান অন্তরায়। সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই। সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গীবাদ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সকল রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমি নিজেও সন্ত্রাস এবং সহিংস জঙ্গীবাদের শিকার। আমার পিতা বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ভাই এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমি নিজেও কমপক্ষে ১৯ বার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সরকার সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস জঙ্গীবাদ এবং মৌলবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে বিশ্বাসী। বাঙালী জাতির গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত রয়েছে, সেসব চরমপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মোকাবেলায় আমরা সদা তৎপর। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তন একটি মারাত্মক উন্নয়ন হুমকি হিসেবে আবির্র্ভূত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব না হলে, আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টা এগিয়ে নেয়া কোনভাবেই সম্ভব হবে না। নতুন উন্নয়ন এজেন্ডায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে আমাদের এই ধরিত্রী, এর প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু সংরক্ষণের জন্য সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে সকলের দৃঢ়প্রত্যয় থাকতে হবে। আমাদের সামনে সামান্যই সুযোগ অবশিষ্ট আছে। এ বিশ্বকে নিরাপদ, আরও সবুজ এবং আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে আমাদের অবশ্যই সফলকাম হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতিবারের ন্যায় এবারও মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দেন। বিশ্ব নেতারা মনোযোগসহকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে শুনেন এবং মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে তার সফল নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি টেকসই, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের যে আকাক্সক্ষা সেখানে কেউ যাতে পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। সমাজে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতিষ্ঠিত না হলে আমরা টেকসই উন্নয়নও নিশ্চিত করতে পারব না। এজন্য আমরা শান্তি সমুন্নত রাখতে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে বদ্ধপরিকর। এ চেতনা থেকেই আমরা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, ধর্ষণ এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। আমার সরকার ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সহনশীলতা বজায় রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। যুগ যুগ ধরে এই চর্চা আমাদের সামাজিক কাঠামোরই অংশ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে সার্ক, বিমস্টেক এবং বিসিআইএম-ইসি’র মতো আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। এছাড়া বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য আমরা অবকাঠামো উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি অভিবাসন এবং মানব চলাচল আজ নতুনভাবে ইতিহাস এবং ভৌগোলিক পরিসীমা নির্ধারণে নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডায় উন্নয়নের জন্য অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপযোগ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অভিবাসনের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে, উৎস এবং গন্তব্য দেশ হিসেবে আমরা ২০১৬ সালে জিএফএমডি’র নেতৃত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু জাতিসংঘ নয়, সামগ্রিক অর্থে সারাবিশ্বের জন্য এ বছরটি আমূল পরিবর্তনের বছর। এ বছরই বিশ্ব সংস্থার ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। ‘আমাদের নিয়তি একইসূত্রে গাঁথা’ আমাদের পূর্বসূরীদের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এ বিশ্বসংস্থার গোড়াপত্তন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন ও মানবাধিকারের অগ্রগতির জন্য জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। সত্তর বছর ধরে জাতিসংঘ মানব সম্প্রদায়ের জন্য আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক হয়ে আছে। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য এ বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন শীর্ষক শীর্ষ সম্মেলন এবং নিউইয়র্কে সদ্যসমাপ্ত ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলন গোটা বিশ্বের জনগণের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এ বছরের শেষে প্যারিসে আমরা একটি অর্থবহ জলবায়ু চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি দারিদ্র্য নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তন সীমিত রাখা এবং ধরিত্রীকে সুরক্ষার মাধ্যমে আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত হবে। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের বিশেষ ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত কয়েক বছরে শান্তিরক্ষা এবং শান্তি নির্মাণ জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম প্রধান শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গর্বিত। এ পর্যন্ত আমাদের সাহসী শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যগণ বিশ্বের ৪০টি দেশের ৫৪টি মিশনে নিয়োজিত হয়েছেন। আমরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক নারী পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছি। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অবদান জাতিসংঘের শান্তি অন্বেষায় আমাদের বিশ্বস্ত অংশীদার করেছে। এমডিজি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত প্রায় ১৫ বছর যাবত আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার এটি বৃহদাংশ এবং এর বাস্তবায়ন এমডিজিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। এমডিজির সার্বিক অগ্রগতি আমাদের আরও বৃহদাকার, বলিষ্ঠ এবং উচ্চাভিলাষী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে অনুপ্রাণিত করেছে। এসডিজিতে যে উচ্চাশা প্রতিফলিত হয়েছে তা বাস্তবায়নে আমাদের সরকারী ও ব্যক্তি খাতসহ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক তহবিলের যোগান অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য উন্নত দেশগুলোর পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের জিএনআই’র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ ওডিএস হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এবং শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে প্রদান জরুরী। পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার ও বিস্তার এবং অভিযোজনের যে সকল চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। এ ধরনের প্রযুক্তি এবং সক্ষমতা হস্তান্তর ব্যতীত অনেক উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন অনার্জিত থেকে যাবে বলে আমার আশঙ্কা। তিনি বলেন, চার দশকেরও বেশি আগে, বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার প্রথম বক্তৃতায় ‘শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান, সামাজিক ন্যায়বিচার, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, বঞ্চনা ও আগ্রাসনমুক্ত একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার’ স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার সেই উদাত্ত আহ্বান আজও আমাদের জাতীয় উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিম-লে সম্পৃক্ততার পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বর্তমানে এমন এক বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগোচ্ছি যেখানে দারিদ্র্য, অসমতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির পরিবর্তে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এর আগে আমি ‘রূপকল্প-২০২১’ উপস্থাপন করেছিলাম। এর মাধ্যমে আমরা একটি মধ্যম আয়ের, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি অর্থাৎ ’ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে চাই। উন্নয়নের পথে যেভাবে আমরা দৃপ্ত পদক্ষেপে অগ্রসর হচ্ছি, তাতে আমি বিশ্বাস করি, অচিরেই আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা সীমিত সম্পদ দ্বারা বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম দারিদ্র্য হ্রাসকারী দেশ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্যের হার ১৯৯১ সালে যেখানে ৫৬.৭ শতাংশ ছিল, বর্তমানে তা ২২.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এমডিজি-১, ২, ৩, ৪, ৫ এবং ৬ অর্জন করেছে অথবা অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক পথেই এগোচ্ছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত ৬ বছরে জিডিপি’র গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৪-১৫ পর্যন্ত রফতানি আয় এবং প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রেরণের পরিমাণ ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় সাড়ে ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে চলতি অর্থবছরে ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ইউএনডিপি’র নিম্ন মানবসম্পদ উন্নয়নের দেশ থেকে মধ্যম সারিতে উন্নীত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাংকের মান অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক যুব সম্প্রদায়কে মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য বিনিয়োগ করা হলে তা ভবিষ্যতে সুফল বয়ে আনবে। এ জন্য আমার সরকার শিক্ষা এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। আমরা ৬ষ্ঠ থেকে স্নাতক পর্যন্ত ১ কোটি ৩৪ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তির আওতায় এনেছি। ঝরেপড়া রোধে মেয়েদের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবৈতনিক করা হয়েছে। এ বছরের প্রথম দিনেই আমরা সারাদেশে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত ৩২৬.৩৫ মিলিয়ন পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১.৫৯ বিলিয়ন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। সমগ্র বিশ্বে এ ধরনের উদ্যোগ সম্ভবত এটাই প্রথম। আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন করেছি। এগুলো থেকে জনগণ সেবা গ্রহণ করছেন। গ্রামাঞ্চলে স্থাপিত তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্র্জনের ক্ষেত্রে আমরা যেভাবে কাজ করেছি, তা দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করে বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তার প্রয়োগ ঘটাতে চাই। এসডিজি ফ্রেমওয়ার্ককে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বর্তমানে আমরা ২০১৬-২০২০ মেয়াদী নতুন জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করছি। তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে স্থল এবং সমুদ্র সীমানা সমস্যা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। গত ৩১ জুলাই মধ্যরাতে আমরা ভারতের সঙ্গে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় করেছি, যার মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার রাষ্ট্রবিহীন ছিটমহলবাসী তাদের পছন্দের রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পেরেছেন। তাদের দীর্ঘদিনের মানবেতর জীবনের অবসান হয়েছে। এ কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে আমরা সমগ্র বিশ্বের কাছে কূটনৈতিক সাফল্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছি।
×