ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায় সরকারী পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ ‘মহাদেব চক্রবর্তী’র নামে রাখার প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১ অক্টোবর ২০১৫

খুলনায় সরকারী পাইওনিয়ার মহিলা  কলেজ ‘মহাদেব  চক্রবর্তী’র নামে  রাখার প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের উদ্যোগে বুধবার বিকেলে মহানগরীর সরকারী পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে মহাদেব চক্রবর্তী স্মরণে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। এই ফলক উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন। মহাদেব চক্রবর্তী একাত্তরে খুলনা শহরে গণহত্যার প্রথম শিকার এবং পাইওনিয়ার কলেজ তাঁর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের উদ্যোগে গণহত্যাস্থল, বধ্যভূমি, নির্যাতন কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ ও স্মৃতিফলক স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এই স্মৃতিফলক স্থাপন করা হলো। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। আর্কাইভ জাদুঘরকে একটি বাড়ি প্রদান করায় তিনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পাইওনিয়ার মহিলা কলেজটি একাত্তরের শহীদ মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত। তিনি এই কলেজটি মহাদেব চক্রবর্তীর নামে রাখার জন্য প্রস্তাব করেন। একাত্তরের ১ এপ্রিল ভোরবেলায় খুলনাবাসীর ঘুম ভাঙ্গে মহাদের চক্রবর্তীসহ ছয় জনকে হত্যার খবর শুনে। এটি ছিল খুলনা শহরে হানাদার পাকিস্তানী সেনাদের পরিকল্পিত গণহত্যার প্রথম ঘটনা। এতে খুলনা শহরসহ আশপাশের এলাকাবাসীর মধ্যে ভীতি সঞ্চারিত হয়। তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দলে দলে শহর ছাড়েন। মানুষের ভাবনায়ও ছিল না যে, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অকৃতদার মহাদেব চক্রবর্তীকে পাকিস্তানী সেনারা খুন করতে পারে! অথচ তাই ঘটেছিল। আলতাপোল লেনের মাথায় সাউথ সেন্ট্রাল রোডে যে সাতজনকে গুলি করে ফেলে রাখা হয়েছিল- তাঁদের মধ্যে একজন বেঁচে গিয়েছিলেন। মৃত্যুবরণ করেছিলেন মহাদেব চক্রবর্তী, মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়ির কর্মী উদ্ভব, এ্যাডভোকেট নকুলেশ্বর চক্রবর্তীর দুই ছেলে (নাম জানা যায়নি) এবং অজ্ঞাতনামা আরও দুইজন। স্বাধীনতা লাভের পর মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়িতে পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর বাড়িটি প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো, পরবর্তীতে ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় ২০১৪ সালে তা অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু মহাদেব চক্রবর্তী হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর খুলনা শহরে গণহত্যার প্রথম শিকার হলেও এতদিন অনেকের কাছেই বিষয়টি অজানা ছিল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সরকারী পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোসাম্মৎ লুৎফুন্নাহার। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন। অন্যদের মধ্যে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টেও সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, প্রফেসর দীপা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রফেসর ভার্গব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রফেসর মিনতী রানী ম-ল, প্রফেসর জাহানারা বেগম, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক শংকর কুমার মল্লিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় খুলনা সার্কিট হাউসের অধুনালুপ্ত হেলিপ্যাডের বিশ্রামাগার নির্যাতন কেন্দ্রের স্মরণে স্মৃতিফলক উদ্বোধন করবেন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি।
×