ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে মার্কিন কৌশল বিপর্যয়ের মুখে

ওবামার নীতিকৌশল ব্যর্থ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১ অক্টোবর ২০১৫

ওবামার নীতিকৌশল ব্যর্থ

সিরিয়ায় মার্কিন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিদ্রোহীরা রসদ ও গোলাবারুদ আল কায়েদা সম্পৃক্ত বিদ্রোহীদের হাতে তুলে দেয়। ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে আমেরিকা সমর্থিত সরকারী বাহিনীর অভিযান অচল হয়ে রয়েছে। আফগানিস্তানে ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তালেবান এ প্রথম একটি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে। দেড় বছরের কম সময় আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ওয়েস্ট পয়েন্টে দেয়া এক ভাষণে বিদেশে বিরাট মার্কিন সেনাবাহিনী মোতায়েন করার বদলে স্থানীয় অংশীদারদের ওপর নির্ভর করার কৌশল ব্যক্ত করেন। এখন ওই তথাকথিত ‘ওবামা মতবাদ’ সম্ভবত ব্যর্থ হচ্ছে বলে ক্রমবর্ধমান প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ২০১৪-এর ২৮ মে ওয়েস্ট পয়েন্ট সামরিক একাডেমিতে ক্যাডেটদের উদ্দেশে ওই ভাষণ দেন। যুক্তরাষ্ট্র এসব সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় অন্তত ৯ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। তা সত্ত্বেও ওবামা রণক্ষেত্রে মূল দায়িত পালন করার মতো সামান্য সংখ্যক নির্ভরযোগ্য মিত্রই পেয়েছেন এবং পরিস্থিতি মোকাবেলার মতো সামান্য সংখ্যক ভাল উপায়ই তার হাতে রয়েছে।২০১১ সালে ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর আমেরিকাকে আবার মধ্যপ্রাচ্যের অজনপ্রিয় যুদ্ধগুলোতে আবার টেনে নিতে ওবামার গভীর বিতৃষ্ণার কারণেও তিনি অসুবিধায় পড়েছেন বলে মনে হয়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিরিয়া ও ইরাক সঙ্কট মোকাবেলায় রাশিয়া হঠাৎ উদ্যোগী হওয়ায় মার্কিন কর্মকর্তারা হতবাক হয়ে পড়েছেন এবং এতে ওই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের প্রভাব ক্ষুণœ হওয়ার সত্যতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমান বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ওবামা সম্ভবত ওই কৌশলের ক্ষেত্রে কেবল সামান্য কিছুটা পরিবর্তন আনবেন। বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা এ কথা জানান। এতে জোরালো আভাস পাওয়া যায় যে, ওবামা বিশ্বের কয়েকটি গুরুতর সংঘাত মোকাবেলার কাজটি তার উত্তরাধিকারীর জন্য রেখে যাবেন। ওবামা ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তাঁর দায়িত্ব ত্যাগ করবেন। সাবেক কর্মকর্তা ডগলাস অলিভ্যান্ট বলেন, ওইসব স্থানের পরিস্থিতি ভাল দেখাচ্ছে না এবং শীঘ্রই পরিস্থিতি খুব ভাল হবে বলেও মনে হয় না। তিনি এক ওবামা ও তার পূর্বসূরী জর্জ ডাব্লিও বুশের ইরাক বিষয়ক উর্ধতন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বলেন, এটিই অংশীদারদের মাধ্যমে কাজ করার সমস্যা। তারা সব সময়েই সক্ষম থাকে না। ওবামার সম্ভাব্য উপায়গুলোর মধ্যে থাকতে পারে সিরিয়ায় কুর্দী বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন জোরদার করা, সেখানকার সংঘাতের অবসানকল্পে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করা এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের গতি মন্থর করা। মার্কিন প্রশাসন আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সিরীয় বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সমগ্র কর্মসূচীই পর্যালোচনার জন্য স্থগিত রেখেছে। ইরাক ও আফগানিস্তানের দুর্বল জাতীয় সরকার এবং মধ্যপন্থী সিরীয় বিদ্রোহী দলগুলোর বিরোধ কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ওবামা তত্ত্ব ও কার্যকর হওয়ার অন্যতম কারণ। তবুও অনেকে সমালোচনাই মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের জন্য ওবামাকে সরাসরি দোষারোপ করেন। ওবামাকে কখনও কখনও বিশ্বের অন্যতম নিষ্ক্রিয় নেতা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। কারণ তিনি সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের বিস্তার ঘটতে দিয়েছিলেন এবং সেখানে ও প্রতিবেশী ইরাকে ইসলামিক স্টেটকে রুখতে যথেষ্ট শক্তি প্রয়োগ করেননি বলে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে তালেবান যোদ্ধাদের আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় কুন্দুজ শহরের পতন ওবামার আফগান নীতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। ওবামা ও সহকারীরা যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেও তার দৃষ্টিভঙ্গি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন। প্রশাসনের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা কখনই এ মোহে আচ্ছন্ন হইনি যে, আমাদের অংশীদারির কৌশল স্বল্প সময়েই সমাধান নিয়ে আসবে। আসলে আমরা সব সময়েই স্পষ্ট করে দিয়েছি যে, একে এক দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি হবে। কর্মকর্তা উত্তম বিকল্প পথ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় ওবামার সমালোচকদের একহাত নেন। -ইয়াহু নিউজের।
×