ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২ অক্টোবর ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

আনন্দ উৎসবের বড়সড় উপলক্ষ ঈদ। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সারাদেশে উদ্যাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। তার পর বেশ কয়েকদিন গত হয়েছে। তবে রেশটা এখনও কাটেনি। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা একটু একটু করে পুরনো চেহারায় ফিরছে। এরই মাঝে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়া নগরবাসীর অধিকাংশ কর্মস্থলে ফিরেছেন। খুলেছে স্কুল-কলেজ। বুধবার সকালে ফার্মগেট এলাকা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চোখে পড়ল হলিক্রস কলেজের একদল শিক্ষার্থী। সাদা ইউনিফর্ম পরা মেয়েরা আগের মতোই কাঁধে বড় ব্যাগ নিয়ে ছুটেছে। প্রায় একই সময় ইউনিফর্ম পরা একদল ছেলেকে দেখা গেল জাহাঙ্গীর গেটের দিক থেকে আসতে। কোন স্কুলের শিক্ষার্থী বোঝা গেল না। তবে কোন একটি স্কুলের নাম লেখা ব্লু শার্টের গায়ে। তাদের দেখেও বোঝা গেল, ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীর স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরব হয়ে উঠেছে। এবারও ঈদে বিপুল পরিমাণ পশু কোরবানি করা হয়েছে। ঢাকার প্রতি প্রান্তে দেখা গেছে সে দৃশ্য। হ্যাঁ, এবার সিটি কর্পোরেশন কোরবানির জন্য স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তবে কে শোনে কার কথা? যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। পুরনো অভ্যাসে যে যার মতো বাসার সামনের খোলা জায়গায়, বড় রাস্তার ধারে, স্কুলের সামনে, খেলার মাঠে কোরবানি দিয়েছেন। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা নোংরা হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত কোন রাস্তা দিয়ে হাঁটা সম্ভব হয়নি। ঈদের দিন সিটি কর্পোরেশন বেশ উদ্যোগী ছিল। পরিচ্ছন্নতার কাজটি যথাসাধ্য করেছে। কিন্তু পরের দিনও অনেক জায়গায় পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। ওই দিন কোন কোন এলাকার চিত্র ছিল ভয়ঙ্কর। ঈদের পরের দিন বিকেলে নাজিম উদ্দীন রোড, বঙ্গবাজার হয়ে রিক্সায় টিএসসি আসার সময় দেখা যায়, একেবারে ব্যস্ত রাস্তার ধারে জবাই করা পশু পড়ে আছে। পাশেই চামড়ার স্তূপ। রক্তের মাখামাখি। আঙ্গুল দিয়ে নাক চেপে কোন রকমে ওই এলাকা পার হতে হয়। এসব বর্জ্য অপসারণ যথাসময়ে অপসারণ করা হয়নি। হয়নি তার প্রমাণ- ঈদের পাঁচদিন পর বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন পাড়ায় প্রবেশের সময় উৎকট গন্ধ পাওয়া গেছে। কংক্রিটের রাস্তায় লেপ্টে থাকা নাড়িভুঁড়ি রক্ত শুকিয়ে যে দুর্গন্ধ, তা বলে বোঝানো মুশকিল। গ্যাসের মূল্য আগেই বেড়েছিল। এবার বাড়ল বাসের ভাড়া। রাজধানীতে সিএনজিচালিত পরিবহনের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা বেড়েছে। আগেভাগেই বাড়তি ভাড়া আদায় শুরু হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার থেকে সেটি শতভাগ কার্যকর করা হয়। অবশ্য অঙ্কের হিসাবে যা ১০ পয়সা, বাস্তবে আদায় করা হচ্ছে তারও বেশি। সিএনজিচালিত গণপরিবহনের ভেতরে ‘আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ’ লিখে বর্ধিত ভাড়ার চাট টানানো হয়েছে। কে এই কর্তৃপক্ষ? কারা বর্ধিত ভাড়ার পরিমাণ ঠিক করলেন? কেউ জানেন না। বাসের কন্ডাক্টর নিজের মতো করে ভাড়া বাড়িয়ে হিসাব মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। যাত্রীরা সবাই চুপ করে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করছেন- এমন নয়। বরং একটু পর পরই হৈ হুল্লোড় অবস্থা শুরু হয়ে যাচ্ছে। তর্ক গালমন্দ এমনকি হাতাহাতির একাধিক দৃশ্য চোখে পড়েছে। ফার্মগেটে কিছু সময় দাঁড়িয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। নিউ ভিশন পরিবহনের একটি বাসে ওঠার আগেই ১০ টাকার জায়গায় ১৫ টাকা ভাড়া দেয়ার দিব্যি করিয়ে নেয়া হয় যাত্রীদের। এর পরও বিতর্ক চলে। যাত্রীদের একজন অভিযোগ করে বললেন- বাসের ভেতরে যে চার্ট টানানো হয়েছে তাতে সরকারী নির্দেশনা মানা হয়নি। কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর যে নির্দেশনা তা মানা হয়নি। কিলোমিটার প্রতি ৫০ পয়সা বা তারও বেশি নেয়া হচ্ছে। বাস ড্রাইভার বা কন্ডাক্টররা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁরা অসহায়। মালিকের চাকরি করেন। কর্তৃপক্ষ যা বলে দিয়েছে, সেভাবেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে জানান তারা। সব মিলিয়ে বিত-া আরও কয়েকদিন চলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
×