ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিপণ দিয়েও ছাড়া পাচ্ছে না ॥ দিশেহারা পরিবারগুলো

মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে থাই জঙ্গলে জিম্মি মাদারীপুরের ৮ যুবক

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ অক্টোবর ২০১৫

মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে থাই জঙ্গলে জিম্মি মাদারীপুরের ৮ যুবক

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে ॥ অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাবার পথে দালালের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন মাদারীপুরের একই গ্রামের ৮ যুবক। তাদের পরিবারে চলছে কান্নার রোল। জিম্মিদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে দফায় দফায় আদায় করা হচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। তবে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হয়নি পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত দালালচক্রের সদস্য জাহাঙ্গীর হাওলাদার পলাতক। পরিবারের অভিযোগ, এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয় পুলিশ। বর্তমানে জিম্মিরা থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সারাক্ষণ ছবি হাতে ছেলের অপেক্ষায় চোখের জল ঝরাচ্ছেন সদর উপজেলার দত্ত কেন্দুয়া ইউনিয়নের শ্রীনাথদী-বাজিতপুর গ্রামের অহিদুলের মা কোহিনুর বেগম। ১ বছর আগে দালালের খপ্পরে পরে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাবার পথে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে জিম্মি হয়ে পড়েন অহিদুল। সেই থেকে দালালরা শারীরিক নির্যাতন করে বিকাশের মাধ্যমে অহিদুলের পরিবারের কাছ থেকে দফায় দফায় আদায় করছে মুক্তিপণের টাকা। সবশেষ, দালালদের এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা দিয়েও অহিদুলের মুক্তি না হওয়ায় দিশেহারা তার পরিবার। শুধু অহিদুলই নয়, তালিকায় রয়েছে একই গ্রামের দুলাল শেখ, সুমন বয়াতী, সবুজ, জুয়েল, লুৎফর, রেনজেল ও মকবুল। নির্যাতিতদের স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, মালয়েশিয়া যাবার প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচারকারী দালালচক্রের সদস্য শ্রীনাথদী-বাজিতপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের অসহায়দের জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করছে বিপুল অঙ্কের টাকা। অহিদুলের মা কোহিনুর বেগম জানান, ‘টাকার জন্য দালালরা অহিদুলকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেই চলছে। গুলি করে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে সদর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। আমরা গরিব মানুষ প্রশাসন এগিয়ে না আসলে কিভাবে বাঁচব।’ অহিদুলের ভাই শহিদুল হাওলাদার বলেন, দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা যোগাড় করে দালালকে বিকাশের মাধ্যমে দিয়েছি। টাকা দিয়েও অহিদুলের কোন সন্ধান দেয়নি দালালরা। এরপরও টাকা চাচ্ছে। অহিদুল কোথায় আছে সুনির্দিষ্ট করে বলছে না। কখনও বলছে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আবার কখনও বলছে মালয়েশিয়ার জঙ্গলে। সুমনের বড় ভাই সুজন বয়াতী জানান, দালালরা আমার ছোট ভাই সুমনকে জিম্মি করে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করেছে। আমরা জমি বিক্রি করে এ টাকা বিকাশের মাধ্যমে দিয়েছি। আমি আমার ভাইকে ফেরত চাই। দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। দুলাল শেখের মা আলেকা বেগম বলেন, স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে দুলাল অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে এক বছর আগে দালালের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে। প্রচ- মারধরও করছে, এরপর সুদে এনে দালালকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখনও দুলালের মুক্তি মিলছে না। স্থানীয় জালাল সরদার বলেন, এমন ঘটনায় দালালদের কঠিন শাস্তি না হলে মানব পাচার থামবে না। পুলিশও এ বিষয়ে তৎপর নয়। যার ফলে দালালরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
×