ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গানে গানে শামা রহমান

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৩ অক্টোবর ২০১৫

গানে গানে শামা রহমান

গৌতম পাণ্ডে ॥ রবীন্দ্রপ্রেমীদের জন্য সন্ধ্যাটি ছিল চমৎকার। শিল্পী শামা রহমান শ্রোতাদের নিরাশ করেননি। তাদের পছন্দের সঙ্গে নিজের পছন্দ মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের গানে ভরিয়ে দিয়েছেন সবার মন-প্রাণ। গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগেই শ্রোতাদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভর্তি ছিল। এখানের শ্রোতা সবসময়ই রুচিবোধ সম্পন্ন হয়। এদিনও তার থেকে ব্যতিক্রম ছিল না। কেন্দ্রের পরিচালক জয়শ্রী কু-ু যথাসময়ে-যথারীতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের সঙ্গে শিল্পী শামা রহমানের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেন। এরপর শিল্পী আসলেন, রাশভারি ভাবাবেগে বসলেন, বললেন, শুভ সন্ধ্যা। অনেক দিন পর এখানে গান করতে আসলাম। আমি সব সময় এখানে গান করে খুব আনন্দ পাই। কারণ, খুব কাছ থেকে শ্রোতাদের অনুভূতিকে উপলব্ধি করতে পারি। প্রথম দিকে শিল্পীকে চঞ্চল মনে হলেও ধীরে ধীরে গানের মর্মে পৌঁছাতে থাকেন। শুরুটা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের ‘মধুর রূপে বিরাজ হে বিশ্বরাজ’ গানটি দিয়ে। তিলক কামোদ রাগে ঝাঁপতালের ওপর এ গানটিতে যেন আসর বন্দনা করে নিলেন শিল্পী। শ্রোতাদের রসবোধের ভিন্নতা আনতে গাইলেন ‘বাজিল কাহার বীণা মধুরস্বরে, আমার নিভৃত নব জীবন পারে প্রভাতকমল সম ফুটির হৃদয়মম’। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রের বিবাহ উপলক্ষে লিখেছিলেন গানটি। বেহাগ রাগে এবং কাহারবা তালের এ গানে সবাই মুগ্ধ হলেন। শিল্পী ধীরে ধীরে গানের মর্মালোকে পৌঁছতে শুরু করলেন। একে একে পরিবেশন করেন ‘হেলা ফেলা সারা বেলা একি খেলা’, ‘তোমরা যা বলো তাই বলো’, ‘বিরহ মধুর হলো আজি এ মধুরাতে’, ‘যখন এসেছিলে অন্ধকারে চাঁদ ওঠেনি সিন্দুপারে’, ‘সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায়’। ‘আমি রূপে তোমায় ভোলাবো না-ভালবাসায় ভোলাবো’ গানটি পরিবেশনের সময় শিল্পীকে ভাব জগতে চলেযেতে দেখা যায়। ছোখ বন্দ করে মুক্ত ছন্দের এ গানের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে নেয়ার আকুলতা ছিল। সবাই নিভৃত চিত্তে, নীরবতায় শুনছিলেন তাঁর গান। ‘কে বলেছে তোমায় বধু এত দুঃখ সইতে’ গানটি পরিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক শ্রোতাকে গুন গুন করে গানের সঙ্গে সুর মেলাতে দেখা যায়। ‘আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে’ গানটির পর শিল্পী নিজের খুব পছন্দের ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ গানটি গাইলেন। অসাধারণ সুরে ও নিমগ্ন চিত্তে পরিবেশিত তাঁর এ গানটিতে সাঙ্গীতিক এক আবহ সৃষ্টি হয়। ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে, সখী যাতনা কাহারে বলে’ ও ‘দীপ নিভে গেছে মম নিভৃত সমীরে’ গান দুটি পরিবেশনের পর শুরু হয় অনুরোধের পালা। শিল্পী বিচলিত নন, শ্রোতাদের অনুরোধ রাখতে তিনি একে একে পরিবেশন করেন ‘দূরে কোথায় দূরে দূরে’, ‘ভালবেসে সখী নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখ’, ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে’, ‘আমারে তুমি অশেষ করেছ’, ‘যে ছিল আমার স্বপনচারিনী’ ও ‘মধুর তোমার শেষ যে না পাই’। শ্রোতাদের অনুরোধের শেষ নেই। একের পর গানের অনুরোধ আসতে থাকে। শিল্পী শামা রহমান বলেন, রবীন্দ্রনাথের গান এতটাই হৃদয়গ্রাহী রাতভোর হলেও এর অনুরোধের শেষ হবে না। তাঁর সব শেষ পরিবেশনা রবীন্দ্রসঙ্গীতটি ছিল ‘ওই জানালার কাছে বসে আছি’।
×