স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেষ পর্যন্ত সিরিজ বাতিলই হয়ে গেল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আশাটা পূর্ণ হলো না। নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে এবারের মতো আর বাংলাদেশ সফরে আসল না অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। আপাতত সিরিজ স্থগিত করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। এ কারণেই ভবিষ্যতে এ সিরিজ হওয়া নিয়ে আশা ত্যাগ করছে না বিসিবি। বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন আশার কথাই জানালেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। আসন্ন আইসিসি সভায় এ বিষয়টি তুলে পরবর্তীতে সময় নির্ধারণের প্রত্যাশা জানান তিনি। কিন্তু বিসিবি সভাপাতি দৃঢ়তার সঙ্গেই জানান যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা দেয়া হয়েছিল সিএ নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকদের সেখানে কোন ঘাটতি ছিল না। এরপরও সিএ বাংলাদেশ সফর স্থগিত করার কারণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পাপন। অবশ্য সিএ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমস সাদারল্যান্ডও বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে এমন কথাই ব্যক্ত করেছেন। আইসিসি সভায় বিসিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিরিজের জন্য পরবর্তী একটি সময় নির্ধারণ এবং প্রয়োজনে নিরপেক্ষ কোন ভেন্যুতে সিরিজ আয়োজনের আহ্বানও জানাবেন এমনটাই বলেছেন তিনি।
একেবারে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কোন ধরনের আইনশৃঙ্খলা অবস্থার অবনতি ছাড়াই বাংলাদেশ সফরে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল জঙ্গী হামলার শিকার হতে পারে এমন কথা সেদেশের সরকারকে জানিয়েছিল একটি গোয়েন্দা সংস্থা। আর সেই ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত ৯ অক্টোবর থেকে নির্ধারিত বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ আর হচ্ছে না। কিন্তু পুরোপুরি বাতিল হয়নি সিরিজটি। এ কারণে যে কোন উপযুক্ত সময়ে এ সিরিজ আয়োজনে আশাবাদ জানালেন পাপন। তিনি বলেন, ‘এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় তারা কিন্তু সফরটা বাতিল করেনি, স্থগিত করেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চলছে। সামনে আইসিসির মিটিং আছে। ৯ অক্টোবর আমি মিটিংয়ে যাচ্ছি। ওখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে বিশদভাবে আলোচনা হবে। আমরা অচিরেই কিভাবে এখানে তাদের খেলানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করব। আমার বিশ্বাস ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যে সম্পর্ক আমাদের, তাতে সিরিজের জন্য একটা সময় বের করতে পারব।’ তবে অসি ক্রিকেটারদের জন্য যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল বিসিবি সেটা সিএ নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দলকে প্রদর্শন করা হয়েছে। এরপরও নিরাপত্তার অজুহাতে সিরিজ স্থগিত করায় হতাশ হয়েছেন বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের সঙ্গে তো শুধু নয় আরও কিছু দেশেও এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। কোথাও তো খেলা বন্ধ নেই। সবচেয়ে বড় কথা আমার মূল কাজ হবে যত দ্রুত সম্ভব খেলা আমরা বাংলাদেশে ফেরত নিয়ে আসতে পারি। কারণ এই এ্যালার্টটা ওরা বলেছে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই এ্যালার্টটা কিন্তু অনন্তকালের জন্য নয়।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্য পুরো প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল বিসিবি এবং বাংলাদেশ দলও প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হুট করে সফর স্থগিত হওয়ায় এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের কি ক্ষতি হলো সে বিষয়ে পাপন বলেন, ‘আমাদের ক্ষতিত হয়েছেই। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ষোলো কোটি মানুষের দেশ, আমাদের দেশের সবাই মুখিয়ে ছিল কখন অস্ট্রেলিয়া আসবে, সিরিজটা মাঠে গড়াবে। সবাই দেখব। সেক্ষেত্রে তো এটা একটা বিরাট ক্ষতি। দর্শকরা বঞ্চিত হলো।’ অবশ্য এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়নি সিএ। অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকেও গ্রীন সিগন্যাল আসেনি। সফর স্থগিত করতে হয়েছে বলে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন সিএ সিইও সাদারর্যান্ড। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের কাছে আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি। তাদের জন্য এটা হতাশার। আমি তাদের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, তাদের হতাশা আমরা বুঝতে পারছি। শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নয়, তাদের দেশের সরকার আর ক্রিকেট ভক্তদের কাছেও আমরা দুঃখিত।’ সাদারল্যান্ডও জানিয়েছেন ভবিষ্যতে একটি উপযুক্ত সময় বের করে বিসিবিকে এ স্থগিত সিরিজ আয়োজনের প্রস্তাব তারা দেবেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দীর্ঘ নয় বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলেনি। তাই আমি বুঝতে পারছি তাদের হতাশার চিত্রটি। বিশেষ করে এ মুহূর্তে দলটি তাদের সেরা সময় পার করছে। আমরা সকলে জানি বাংলাদেশ ক্রিকেট পাগল দেশ। তাই সিরিজটি নতুন করে নতুন কোন ভেন্যুতে আয়োজন সম্ভব কি না তা খতিয়ে দেখছি। তবে, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উপর নির্ভর করছে। তাদের সঙ্গে আমরা শীঘ্রই আলোচনায় বসব সিরিজটি নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনার জন্য। কারণ তারাই সিরিজটির আয়োজক।’